‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরও ৮ ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত
নিজস্ব প্রতিনিধি : র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গতকাল রোববার রাতে ঝিনাইদহ, নরসিংদী, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও টাঙ্গাইলে একজন করে নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, একই রাতে যশোর পুলিশ তিন মাদক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করে। পুলিশের ভাষ্য, দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তারা নিহত হয়েছে।
তিন দিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটছে।
গত শুক্রবার রাতে যশোর ও ময়মনসিংহে বন্দুকযুদ্ধে চারজন নিহত হওয়ার পর শনিবার রাতে এই দুই জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় আরও দুজন। একই রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে চারজন নিহত হয় ফেনী, দিনাজপুর, বরিশাল ও টাঙ্গাইলে।
এ নিয়ে সাত দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যাব-পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ২৬ জন।
গত শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সরকার মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি (শূন্য সহনশীলতা) অবলম্বন করেছে।
এর আগে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ গত সোমবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে মাদক কেনাবেচায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তুলে নিয়ে হত্যার অভিযোগ
র্যাব-৬-এর ঝিনাইদহ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার গোলাম মোর্শেদের ভাষ্য, গতকাল রাতে র্যাবের একটি দল কালীগঞ্জ-চাপরাইল সড়কের নরেন্দ্রপুর পুলিশ চেকপোস্টের কাছে তল্লাশিচৌকি বসায়। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে বেশ কয়েকজন ওই সড়ক দিয়ে যাচ্ছিল। সন্দেহ হলে র্যাব তাদের থামার নির্দেশ দেন। এ সময় তারা র্যাবের ওপর গুলি ছোড়ে। র্যাবও পাল্টা গুলি ছুড়লে সব্দুল মণ্ডল গুলিবিদ্ধ হন। অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে সব্দুল মণ্ডলকে কালীগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, ঘটনার সময় তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে ১০০ বোতল ফেনসিডিল, ১৫০টি ইয়াবা, একটি ৯ এমএম পিস্তল, দুটি গুলি, ১ হাজার ১০০ টাকা ও একটি হেলমেট উদ্ধার করেছেন।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক অরুণ কুমার দাস জানিয়েছেন, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বুকে গুলি লাগে।
অবশ্য সব্দুল মণ্ডলের ভাতিজা তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাঁর চাচা গতকাল বিকেলে বাড়ির পাশের একটি শসাখেতে কাজ করছিলেন। এমন সময় সাদাপোশাকে ছয় থেকে সাতজন এসে তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর রাতে মাঠের মধ্যে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হয়েছে।
নিহত সব্দুল মণ্ডলের নামে আগে মামলা আছে কি না, তা জানতে চাইলে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, এখনই বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। তবে র্যাবের দাবি, নিহত সব্দুল মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন।
যশোরে আরও তিন যুবকের লাশ
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে যশোর শহরের খোলাডাঙ্গা এলাকায় দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলির খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। সেখান থেকে গুলিবিদ্ধ এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান স্যুটারগান, ২০০টি ইয়াবা বড়ি ও একটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে, একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে সদর উপজেলার শেখহাটি তরফ নওয়াপাড়া গ্রামে। সেখানেও দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলির খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে নিয়ে রাখে। সেখান থেকেও ৪০০টি ইয়াবা বড়ি, দুটি ওয়ান স্যুটারগান ও দুটি গুলির খোসা উদ্ধার দেখিয়েছে পুলিশ।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) এস এম নাঈমুর রহমান বলেন, পুলিশের গুলিতে নয়, নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের কর্মচারীরা জানান, নিহত তিন ব্যক্তির বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হবে। এঁদের একজনের গায়ে লাল স্যান্ডো গেঞ্জি ও চেক লুঙি, একজনের গায়ে জাম রঙের হাফহাতা গেঞ্জি ও সাদা থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট এবং অন্যজনের খালি গা ও পরনে চেক লুঙি রয়েছে।
যশোরের অভয়নগরে শুক্রবার রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন নওয়াপাড়া গ্রামের তিনজন। পুলিশ বলেছে, তিনজনই মাদক ব্যবসায়ী। এরপর শনিবার দিবাগত রাতে যশোর সদর উপজেলার রঘুরামপুর গ্রাম থেকে ডালিম (২৩) নামের এক তরুণের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নরসিংদীতে ১১ মামলার আসামি নিহত
গতকাল দিবাগত রাতে নরসিংদীর পলাশে ‘মাদক ব্যবসায়ী’দের সঙ্গে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়েছে। এতে এক ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত হয়েছেন। র্যাব-১১-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিহত ব্যক্তির নাম ইমান আলী (৩৩)। তিনি নরসিংদীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ১১টি মামলা আছে। তিনি পলাতক ছিলেন।
পুলিশের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গায় বন্দুকযুদ্ধ
জেলা সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আহসান হাবীবের ভাষ্য, ফেনসিডিলের বড় একটি চালান আসার খবর পেয়ে পুলিশের একটি বিশেষ দল উথলী সন্ন্যাসীতলা মাঠে অবস্থান নেয়। রাত একটার দিকে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি দলকে আসতে দেখে পুলিশ থামতে বললে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। বন্দুকযুদ্ধে জোনাব আলী এবং জীবননগর থানার পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিলন হোসেন, কনস্টেবল ওয়ালিদ রহমান এবং কনস্টেবল জুয়েল হোসেন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি, বন্দুকের একটি কার্তুজ, তিনটি ধারালো হাঁসুয়া ও এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।
আহত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মশিউর রহমান মাদক ব্যবসায়ী জোনাব আলীকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত পুলিশ সদস্যদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান জানান, নিহত জোনাব আলীর বিরুদ্ধে জীবননগর, দামুড়হুদা ও চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় অন্তত ১১টি মাদকের মামলা রয়েছে। উথলী গ্রামের আমতলাপাড়ার জামাত আলীর ছেলে জোনাব আলী।
আমবাগানে মাদক বিক্রির অভিযোগে অভিযান
র্যাব-৫, রাজশাহীর উপ-অধিনায়ক মেজর এ এম আশরাফুল ইসলামের ভাষ্য, ক্ষুদ্র জামিরা গ্রামের একটি আমবাগানে মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে—এ তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের একটি বিশেষ দল সেখানে অভিযান চালায়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীরা র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করে। আত্মরক্ষার্থে র্যাবও পাল্টা গুলি করলে মাদক ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে লিয়াকত আলী মণ্ডলকে আহত অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। নিহত লিয়াকত পুঠিয়া উপজেলার নামাজগ্রামের বাসিন্দা।
মেজর আশরাফ জানান, লিয়াকতের বিরুদ্ধে রাজশাহী ও নাটোরের বিভিন্ন থানায় ৮ থেকে ১০টি মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, দুটি গুলি, একটি মোটরসাইকেল এবং ৮২৩টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।
মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধ
র্যাব-১২-এর ৩ নম্বর কোম্পানি কমান্ডার রবিউল ইসলাম জানান, গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘাটাইল উপজেলার পাকুতিয়া এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে চার থেকে পাঁচজন মাদক ব্যবসায়ী র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পরে র্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালান। এতে মাদক ব্যবসায়ী আবুল কালাম খান আজাদ (৪২) গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত আবুল কালাম খান আজাদ ঘাটাইল থানার পূর্ব পাকুতিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসাসংক্রান্ত কয়েকটি মামলা রয়েছে। র্যাব ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলি, ১০০ বোতল ফেনসিডিল ও দেড় হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরের নবগঙ্গা এলাকায় র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবুল হাসান ওরফে হাসান ঘাঁটিয়াল নামের এক ব্যক্তি নিহত হন।