শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব
শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সাংসদ ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সাংসদ প্রকৌশলী ফজলুল হক চাঁনসহ পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাতে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শেরপুর জেলা শাখার সভা ১৯ মে শনিবার বিকেল ৩ ঘটিকায় স্থানীয় চকবাজারস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যকরী পরিষদের ৫২ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিকের সভাপতিত্বে সভাটি পরিচালনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল।
সভায় আরো যে চার নেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সামসুন্নাহার কামাল, নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল হক ও সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক এবং নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ।
এ ছাড়া সভায় নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রথম যুগ্ম সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা সাক্ষাতের সময় চেয়ে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, ‘দলীয় এ সিদ্ধান্ত এবং সুপারিশের ব্যাপারটি এরই মধ্যে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।’
হুইপ আতিকের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ থেকে প্রত্যাহার ও সংসদ সদস্যসহ পাঁচজনকে বহিষ্কারের সুপারিশের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করেছে। তারা হুইপ আতিকের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিলও করেছে।
রোববার দুপুরে শেরপুরের খরমপুরে আওয়ামী লীগের একাংশের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হুইপের পদ থেকে আতিউর রহমান আতিককে অপসারণের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল করে আওয়ামী লীগের এই অংশের নেতাকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির রুমান।
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, হুইপ আতিউর রহমান আতিক বিপুল অর্থের বিনিময়ে ত্যাগী আওয়ামী লীগারদের এড়িয়ে জামায়াত আর রাজাকারদের সন্তান দিয়ে পকেট কমিটি করেছেন। যার প্রতিকারের জন্য দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি রিভিউ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে শেরপুর থেকে প্রত্যাহার, সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল হক চাঁনসহ অন্যদের বহিষ্কার, নালিতাবাড়ী উপজেলা কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদ জানানো হয়।
রাতেই বিক্ষোভ
নকলা-নালিতাবাড়ী আসনের সংসদ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ এবং নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জিন্নাহকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে শনিবার রাতেই বিক্ষোভ করে নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগ। তারাবি নামাজের পর ঢাকা-শেরপুর মহাসড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে।
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন নকলা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল আলম সোহাগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও নকলা পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন, যুবলীগের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম সোহেল, যুগ্ম-আহ্বায়ক রেজাউল করিম, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জিকরুল হাসান পিকুল, সম্পাদক মজিবুল আজাদ ডেভিড প্রমুখ।