কোরিয়া পারলে পাক-ভারত কেন পারবে না?
দুই কোরিয়ার অবিশ্বাস্য পদক্ষেপ ছাপ ফেলল উপমহাদেশেও। দশকের পর দশক ধরে পরস্পরকে যুদ্ধের হুঙ্কার শোনাতে থাকা উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া অত্যন্ত দ্রুত বদলে ফেলছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি। কিম জং-উন এবং মুন জায়ে-ইনের বৈঠকের পর বেনজির সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে কোরীয় উপদ্বীপে। তার প্রেক্ষিতেই পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের প্রশ্ন, ভারত-পাকিস্তান কেন এইভাবে এগোতে পারবে না পরস্পরের দিকে? কেন হাত মেলাতে পারবেন না মোদি-আব্বাসি?
পানমুনজমে কিম এবং মুনের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল ঠিকই। কিন্তু কিমের হাত ধরে উত্তর কোরিয়ার ভিতর দিকে ঢুকে যাবেন মুন, অভূতপূর্ব সম্প্রীতির ছবি তৈরি হবে, এমনটা বেশ অপ্রত্যাশিত ছিল।
দুই শাসকের বৈঠকেই কিন্তু শেষ হয়নি দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া। বৈঠকের পর থেকে দুই কোরিয়া পরস্পরের প্রতি একের পর এক সৌজন্যমূলক বার্তা দিতে শুরু করেছে। উত্তর কোরিয়া নিজেদের ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে দিচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার টাইম জোনের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার সময়কে। আর সীমান্তে লাউড স্পিকার লাগিয়ে উত্তরের কমিউনিস্ট রাজত্বের বিরুদ্ধে অবিরত যে প্রচার চালাত দক্ষিণ, সেই প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সীমান্ত থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে লাউড স্পিকার।
আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোরীয় উপদ্বীপের এই ছবি তুলে ধরে পাকিস্তানের ডন নিউজ লিখেছে, ভারত এবং পাকিস্তানেরও উচিত এই পথই ধরা। ‘…দীর্ঘ দিনের সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য মিল ভারত ও পাকিস্তানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে যে অভিন্ন ইতিহাস এবং অভিন্ন স্বপ্ন ও আকাঙ্খা দিয়েছে, তাতে সম্পর্কে স্বাভাবিকতা এবং শান্তি ফেরানো এই অঞ্চলের সবচেয়ে মহান লক্ষ্য।’
যে সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে ভারত-পাকিস্তান শান্তি প্রক্রিয়ার পক্ষে সওয়াল করেছে ডন, তাতে অটলবিহারী বাজপেয়ীর লাহোর সফরের স্মৃতিচারণও করা হয়েছে। কিম জং-উন এবং মুন জায়ে-ইনের বৈঠক অবধারিতভাবে ১৯৯৯ সালের সেই অভূতপূর্ব আশা-আকাঙ্খার দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, যখন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ঐতিহাসিক সফরে পাকিস্তানের লাহোরে পা রেখেছিলেন— এমনই লেখা হয়েছে পাক সংবাদমাধ্যমে।
দুই কোরিয়াকে দেখে ভারত এবং পাকিস্তানের শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করা হয়েছে ওই সম্পাদকীয়তে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘আরও এক বার শান্তি ও মৈত্রীর পথে হাঁটুক ভারত এবং পাকিস্তানের নেতৃত্ব, সেই সময় এসে গেছে।’