মঙ্গলবার, ৮ই মে, ২০১৮ ইং ২৫শে বৈশাখ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

তাসফিয়ার শরীরে পৈশাচিক নির্যাতনের চিহ্ন

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিনকে হত্যার আগে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। তার সারা শরীরে মারধরের চিহ্ন রয়েছে। ডান চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। বাম চোখেও ছিল মারাত্মক জখম।

নাক, ঠোঁট ও মুখমণ্ডল ছিল থেঁতলানো ও রক্তাক্ত। দুই হাঁটুর নিচে ছিল কালো দাগ। হত্যার আগে তাকে টানা-হেঁচড়াও করা হয়েছে। দুই পায়ের নখও উপড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে এ হত্যাকাণ্ডের কূল-কিনারা করতে পারছে না পুলিশ।

এ ঘটনায় তাসফিয়ার বন্ধু আদনান মির্জাও মুখ খুলছে না। বৃহস্পতিবার সকালে আদনানকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে, তাসফিয়ার খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থী ও তার সহপাঠীরা মানববন্ধন করেছে। তাসফিয়া হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে তার বাবা মো. আমিন পতেঙ্গা থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৫-৬ জন নাম না জানা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় আদনানকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হল- সোহাইল (১৬), শওকত মিরাজ (১৬), আসিফ মিজান (২৩), ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম (২৪) ও ফিরোজ (৩০)। তাদের মধ্যে ফিরোজ নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসী।

তার বিরুদ্ধে পাঁচলাইশসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। কয়েক মাস আগে সে অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে শেভরন নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাকাতি মামলা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে আদনানকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

পতেঙ্গা থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে জানান, মামলা করার আগেই আদনানকে বুধবার রাতে খুলশির জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটির ‘রয়েল পার্ক’ ভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আদনানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে। আদনান পুলিশকে জানায়, তাসফিয়াকে বাসা থেকে ফোনে ডেকে নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল। আবার বাসায় ফেরার জন্য তাকে সে অটোরিকশাও ঠিক করে দিয়েছিল। এরপর কি হয়েছে তা সে জানে না।

কিন্তু পুলিশ আদনানের এমন বক্তব্য বিশ্বাস করতে পারছে না। বিশ্বাস করতে পারছে না তাসফিয়ার পরিবারও। পরিবারের অভিযোগ, বন্ধুত্ব ও প্রেমের নামে তাসফিয়ার সঙ্গে প্রতারণা করেছে আদনান। পরিকল্পিতভাবে তাকে সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও হত্যার পর লাশ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ফেলে দেয়া হয়েছে। সিএমপির কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার জাহেদুল ইসলাম জানান, আদনানের কাছ থেকে জানা গেছে, তার সঙ্গে তাসফিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

ঘটনার দিন অনেক রাত পর্যন্ত তাসফিয়ার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আদনান ছিল। এছাড়াও সমুদ্র সৈকত এলাকায় তাসফিয়াকে একা পাথরের ওপর বসা দেখেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এসব তথ্য এখন আমরা ‘ক্রস চেক’ করে দেখছি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে বৃহস্পতিবার সকালে তাসফিয়ার লাশের ময়নাতদন্ত হয়।

চমেক হাসপাতাল মর্গের সামনে তাসফিয়ার বাবা মো. আমিন বলেন, ‘আমার ফুটফুটে মেয়েকে আদনান পূর্বপরিকল্পনা করে খুন করেছে। আমার মেয়ের কোনো দোষ নেই। আদনানের সঙ্গে নগরীর একাধিক অপরাধী চক্রের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। আমার মেয়েকে ডেকে নিয়ে সে তাদের হাতে তুলে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, বুধবার রাতে আদনানের কয়েকজন বন্ধু তাকে থানায় যেতে বাধা দেয়। এ সময় তারা ফিরোজ নামে তাদের এক ‘বড়ভাইয়ের’ কাছে নিয়ে যায়। ফিরোজ তাকে জানায়, আপনার মেয়ে ১ ঘণ্টার মধ্যে আপনার বাসায় চলে যাবে। আপনি বাসায় চলে যান। তখন তিনি থানায় না গিয়ে বাসায় চলে যান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, তারাই আমার মেয়েকে খুন করেছে। পুলিশ জানায়, ফিরোজ নগরীর একজন সন্ত্রাসী। নগরীর একাধিক থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তাসফিয়াকে তুলে দেয় আদনান।

এ সময় ওই অটোরিকশায় আরও দুই ছেলে আগে থেকেই বসা ছিল। তারা কারা। তাদের ধরতে পারলে হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হবে। এছাড়া পরিবারের প্রশ্ন, চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্ট থেকে তাসফিয়ার বাসা হাঁটা দূরত্বে।

এ দূরত্বে যাওয়ার জন্য সিএনজি অটোরিকশার প্রয়োজন পড়ে না। হেঁটে অথবা বড় জোর রিকশা নিয়ে যাওয়া যায়। অথচ আদনান বলছে তাসফিয়াকে রেস্টুরেন্ট থেকে নামার পর বাসায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় তুলে দিয়েছে সে।

আদনান-তাসফিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ভালোভাবে নেয়নি তাসফিয়ার পরিবার। তাই আদনানকে ডেকে শাসায় তারা। আর এটাকে ভালোভাবে নেয়নি আদনানও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, শাসানোর ‘প্রতিশোধ’ নিতেই তাসফিয়াকে নিজের গ্রুপের সদস্যদের হাতে তুলে দেয় আদনান। নগরীর গোলপাহাড় আশপাশ এলাকার ধনী বাসিন্দাদের সন্তানদের সংগঠন ‘রিচ কিডস গ্রুপ’। এর নেতৃত্বে রয়েছে আদনান।

সূত্রটি আরও জানায়, তাসফিয়াকে যে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেয় আদনান সেই অটোরিকশার পেছনেই ছিল দুটি মোটরসাইকেলে চার যুবক। এ চার যুবক আদনানের পরিচালিত ‘রিচ কিডস গ্রুপ’র সদস্য।

পরে নিজেকে আড়াল করতে তাসফিয়াকে তার পরিবারের সঙ্গে আদনানও খুঁজতে বের হয়। আদনান চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ইসকান্দর মির্জার ছেলে। আদনান নগরীর এলিমেন্টারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। মাস খানেক আগে আদনানের সঙ্গে তাসফিয়ার ফেসবুকে পরিচয় হয়। যুগান্তর

Print Friendly, PDF & Email

এ জাতীয় আরও খবর

বিমানের সেবায় ‘অসন্তুষ্ট’ খোদ বিমানমন্ত্রী

আবারো শুল্ক ছাড়াই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নিচ্ছে ভারত

খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি বুধবার পর্যন্ত মুলতবি

নেত্রকোনায় হত্যা মামালায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় র‌্যাবের অভিযানে ১১৬০০পিস ইয়াবা উদ্ধার, আটক ২

কোটা সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের দাবিতে বুধবার সারাদেশে মানববন্ধন