‘‘ঢোলভাঙ্গা নদীর জন্য একদিন বাঞ্ছারামপুরের মানুষ কাঁদবে’’
ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : মেঘনা ও এর ৫টি শাখা নদী একসময় প্রবাহিত হতো ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও এর অভ্যন্তরীন উপজেলা নবীনগর,বাঞ্ছারামপুরের ভেতর দিয়ে। জালের মতো জড়িয়ে থাকত অসংখ্য খাল। ছিল বড় বড় বিলও।মাছে মাছে সয়লাব থাকতো নদীগুলো। এসবই এখন মৃতপ্রায়।সবই যেনো স্বপ্ন। বেশ কয়েকটি নদী-খাল-বিলের অস্তিত্ব নেই। বাকিগুলোর অবস্থাও সংকটাপন্ন। সব মিলিয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কার্যত মরুভূমির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
মেঘনা নদীটি বাঞ্ছারামপুরের চারপাশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে।মেঘনা অববাহিকায় তিতাস নদী এবং তিতাস অববাহিকায় ঢোলভাঙ্গা নদীটি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার জন্য ছিলো অতীব গুরুত্বপূর্ণ।কি সামাজিক ভাবে,কি অর্থনৈতিক-কৃষি,কি শিল্প বা পরিবহনের জন্য।
বছর ২৫ আগে ড্রেজার যখন সবেমাত্র এলাকায় আসে সেই তখন,ঢোলভাঙ্গা নদীর গতিপথ বন্ধ করে দিয়ে সেখানে মাটি-বালি ভরাট করে বর্তমানে মার্কেট নির্মান করেন বিত্তবান প্রভাবশালী জগন্নাথপুর গ্রামের আবদুল মতিন।তিনি সহ এস.আর মার্কেটের মালিক আরেক প্রভাবশালী শফিকুর রহমান সফিক মিলেমিশে বিশাল এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে আসে।
মতিন সরকার গড়ে তুলেন মতিন মার্কেট আর শফিকুর রহমান গড়ে তুলেন এস.আর মার্কেট ও স’মিল।মাঝখান দিয়ে কপাল পুড়লো ঢালভাঙ্গা নদীটির।বর্তমানে উপজেলার প্রধান ব্রীজটির সংলগ্ন স’মিল হয়ে পশ্চিমে মড়াগাঙ্গ অব্দি ছিলো এর বিস্তৃতি।
কলেজরোড যেতে বর্তমান মতিন মার্কেট ও শফিক মার্কেট এর মধ্যখান দিয়ে ছিলো ব্রীজ।ব্রীজটির উপর দিয়ে কলেজ বা জগন্নাথপুর যেতে হতো।বিকল্প কোন রাস্তা ছিলো না।
আরও : বাংলাদেশের উপকূলে আসতে থাকা জ্বলন্ত জাহাজ আটকে দিলো ভারত
কতিপয় গড়ফাদার ভাঙন ঠেকানোর নামে চকবাজারের কাছে বাঁধ দিয়ে ঢোলভাঙ্গা নদীর প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে এটি বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এই নদীর বেশির ভাগ স্থানে শুষ্ক মৌসুমে নৌকা চলাচলের মতো পানি থাকে না। কোথাও কোথাও একেবারে শুকিয়ে যায়।
ঢোলভাঙ্গার উপশাখা এই মড়াগাঙ্গ নামে খালটির বর্তমানে কোন অস্তিত্ব নেই।ইতিহাসের বই আর বয়স্ক মানুষের মুখেই শুধু এই নদীগুলোর নাম শোনা যায়। মেঘনা নদীর আরেকটি শাখা নদী হলো মরিচাকান্দি হতে বাশগাড়ি মোড় অব্দি তিতাস নদী। সেটি বর্তমানে মৃতপ্রায়। শুধু বর্ষা মৌসুমের কয়েক মাস পানি থাকে।মরিচা গ্যাস ফিল্ডের কাছে এর ভগ্নাংশ এখনো দেখা মিলে। সম্প্রতি এখানে মাটি ভরাট করে দুলারামপুরবাসী একটি স্কুল তৈরী করার পরিকল্পনা করছে।
মুক্তিযোদ্ধা মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অপরিকল্পতিভাবে বাঁধ দেওয়া, সেতু, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করা এবং উজান থেকে পলি মাটি এসে ভরাট করে ফেলছে নদীগুলো। আবার নদী দখল করে বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করছে প্রভাবশালীরা। প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্তাদের সহায়তায় এবং আইনের মারপ্যাঁচে এই দখল স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে।’
বিমল রায় বলেন, ‘সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এর প্রতিকার করা দরকার। অব্যাহত খননের মাধ্যমে নদীগুলোকে আবার জীবিত করা সম্ভব। অন্যথায় নদী-খাল-বিলের বাঞ্ছারামপুর মরুভূমিতে পরিণত হবে।’
বাঞ্ছারামপুরের উজানচর ইউনিয়নের আওতায় রাধানগরে চলছে কৃষিজমি,নদী,খাল,ডোবা ইত্যাদি ভরাট করার প্রকাশ্য প্রতিযোগিতা।সরকারি ড্রেজারে মেঘনা হতে বালি তুলে সেটি কমদামে কিনে চড়া দামে বেচাকেনায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চিহ্নিত চক্র।কৃষিজমি ভরাট,ঢোবা-খাল বিল ভরাট করাটা যে অন্যায় সেটি জানেন জনপ্রতিনিধিগন,ভূমি অফিস,মৎস্য অফিস আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।কিন্তু,যারা বিষয়টি দেখভাল করবেন সেই তারাই বালি দিয়ে জমি ভরাট করার কন্ট্রাক্ট করলে,পাবলিক যায় কোথায়?