সংকটের আবর্তে ট্রাম্প : সিএনএন’র বিশ্লেষণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্প সব সময়ই সব কিছুর মধ্যমণি হয়ে থাকতে চান। প্রচারের সব আলোই হবে তাঁকে ঘিরে। বিষয়টি নিশ্চিত করতে দেশে ও বহির্বিশ্বে তাঁর উদ্যোগ, তত্পরতা, মন্তব্য এমন ঘূর্ণিঝড় তৈরি করেছে যে সীমাহীন সংকটে জড়িয়ে গেছেন তিনি। সংকটের সংখ্যা এত বেশি যে গুনতে যাওয়া বৃথাশ্রম।
দেশে এবং দেশের বাইরে যাকেই বৈরী মনে হচ্ছে তার বিরুদ্ধেই অধৈর্য হয়ে সপাটে চড় কষিয়ে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ফলে ক্রমান্বয়ে অস্থিরতা বাড়ছে ওয়াশিংটনে। গতকাল সোমবার থেকে আরেকটি অস্থির সপ্তাহ শুরু করলেন ট্রাম্প। প্রথম দিনই নবনিযুক্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেন সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। গত শনিবার সিরিয়া সরকার পূর্ব গৌতার দৌমায় রাসায়নিক হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ঘটনায় নিহত হয় অন্তত ৭০ জন। এর পরই সিরিয়ায় হামলা চালানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে। এর আগে গত বছর খাই শেইখুনে সিরিয়ার প্রশাসন হামলা চালানোর পরও সরকারি স্থার্থসংশ্লিষ্ট এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। গতকাল অবশ্য সিরিয়ার একটি সেনাঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। সিরিয়া প্রশাসন এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করলেও ওয়াশিংটন বিষয়টি নাকচ করে দেয়। সিরিয়ার মিত্র রাশিয়া এর দায় চাপায় ইসরায়েলের ওপর।
সিরিয়া প্রসঙ্গে সোচ্চার হওয়ার আগেই অবশ্য ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছেন। চীন থেকে আমদানি করা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক বসিয়ে এই সংকটের সূচনা ট্রাম্পই করেন। পরে চীনও এই পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি-ধমকি এখনো অব্যাহত রয়েছে। যদিও গত রবিবার করা এক টুইটে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে নিজের বন্ধুত্বের গভীরতার গুণগান গেয়েছেন ট্রাম্প।
ক্ষমতাগ্রহণের আগে থেকেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দারুণ ভক্ত ট্রাম্প। ক্ষমতাগ্রহণের পর দুই পক্ষই সম্পর্ক গভীর করার কম চেষ্টা করেনি। তবে কিছুতেই তাঁদের দুজনের ব্যাটে-বলে মিলছে না। সম্প্রতি তাঁদের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে দৃষ্টিকটুভাবে। ব্রিটেনে সাবেক রুশ গোয়েন্দাকে স্নায়ু গ্যাস প্রয়োগে হত্যাচেষ্টা এবং সম্প্রতি সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের ঘটনায় বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে সামনে চলে আসে।
ঘরেও যে ট্রাম্প স্বস্তিতে আছেন, তা নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মাইক পম্পেওকে ট্রাম্প মনোনয়ন দিয়েছেন সম্প্রতি। এই বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হবেন পম্পেও। কাজটা সহজ হবে না। গত সপ্তাহের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। সমালোচকদের মতে, অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্প এমন এক সমস্যার সমাধান হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার কোনো অস্তিত্বই নেই। প্রশাসন থেকে কর্মী বিদায়ের চর্চা তো চলছেই। গত রবিবার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র মাইকেল অ্যান্টন। পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার প্রশাসক স্কট প্রুইটের ভাগ্য ঝুলে রয়েছে এক সুতায়। তাঁর এ সপ্তাহ পার হবে কি না সন্দেহ।
আর শুরু থেকেই ঝুলে রয়েছে নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি। এর জের ধরেই আজ ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ কংগ্রেসের মুখোমুখি হচ্ছেন। নিশ্চিতভাবেই ট্রাম্পের জন্য স্বস্তিকর কোনো খবর তাঁর ঝুড়িতে নেই। ফলে স্বভাবে অধৈর্য ট্রাম্পের জন্য চরম অস্বস্তিকর এক সময় চলছে। সূত্র : সিএনএন