রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানোর পর এই সব ঘটনা ঘটে। এখনো পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ক্যাম্পাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা ধরেননি।
পুলিশের বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আন্দোলনকারীরা দীর্ঘক্ষণ ধরে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছিল। এতে জনগণের ক্ষতি হচ্ছিল। পরে তাদেরকে তুলে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের ওপর প্রায় ৩০ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের টিয়ারশেল গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, পুলিশের হামলায় তাদের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে পুলিশ ১০ জনের মতো শিক্ষার্থীকে আটক করে।
এ সময় শাহবাগের দিক থেকে পুলিশের হামলার মধ্যে বিপরীত দিক থেকে (টিএসসি) আন্দোলনকারীদের ওপর তাণ্ডব চালায় ছাত্রলীগ। ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভাসমান দোকান-পাটগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের ধাওয়ার মধ্যে পড়েন বহু পথচারী। এ সময় চলমান গাড়িগুলোতে আটকে পড়া যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকেই দিশেহারা হয়ে দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে গিয়ে আহত হয়েছেন।
এই ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় আন্দোলনকারীরা স্লোগানে স্লোগানে বলতে থাকে- ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না,’ ‘পুলিশ তুমি যতই মারো, মাইনে তোমার বাড়বে না’, ‘বাড়ছে মিছিল, বাড়ছে ভিড়, উচিয়ে লাঠি পারবে না,’ ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোটা বৈষম্যের ঠাঁই নাই।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি আহত শিক্ষার্থীরা হলেন ঢাবির সূর্যসেন হলের রাফি আলামিন (২৫) ও আকরাম হোসেন (২৬); বঙ্গবন্ধু হলের আবু বকর সিদ্দিক (২২); বিজয় একাত্তর হলের মাহিন (২২) ও আসলাম (২২); কবি জসিম উদ্ দীন হলের মো. রফিক (২৪); জিয়া হলের মাহফুজুর রহমান (২৭)।
এছাড়া রাবার বুলেটবিদ্ধ হয়েছেন চারজন। এরা হলেন কবি জসিম উদ্ দীন হলের রাজ (২৪), জিয়া হলের সাবেক শিক্ষার্থী সোহেল (২৯)। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের অমর ফারুক (২৫), জহিরুল ইসলাম হলের খুরশেদ (২৭)।
সরেজমিনে জানা যায়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়। পরে আন্দোলনকারীরা দুপুর আড়াইটায় ঢাবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ঢাবির রাজু ভাস্কর্য, নীলক্ষেত, কাঁটাবন হয়ে শাহবাগ মোড়ে আসে। এসময় আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে আন্দোলনের ফলে এ রাস্তা ও তার আশপাশের রাস্তাগুলোতে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সন্ধ্যা পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের একাধিক শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় ছেড়ে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনের রাস্তা, গণগ্রন্থাগারের সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় এবং পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছিল।
কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন চলে আসছে। ওই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৪ মার্চ ৫ দফা দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দিতে সচিবালয় অভিমুখে যেতে চাইলে পুলিশি ধরপাকড় ও আটকের শিকার হন তিন আন্দোলনকারী। এরপর আরও বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে রাস্তায় নামেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীদের ৫ দফা দাবি হলো- সরকারি নিয়োগে কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, কোটার যোগ্য প্রার্থী না পেলে শূন্যপদে মেধায় নিয়োগ, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অভিন্ন বয়সসীমা, নিয়োগপরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহার না করা।
সূত্র : এনটিভি/জাগোনিউজ/