শীতের পরও কাটছে না গ্যাস সংকট
‘সকাল ১১টায় গ্যাস চলে যায় আর আসে দুপুর ২টায়। সকালে নাস্তা হলেও দুপুরের রান্নাটা শেষ করা যায় না। বিকালে আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়’— বলছিলেন পান্থপথের বাসিন্দা সিন্থোসি রহমান। গ্যাস সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চার বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। কখনও গ্যাসের সংকট হয়নি। এ বছরই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ছি।’
বনশ্রীর ডি ব্লকের বাসিন্দা শোভারও একই অভিযোগ। গ্যাস সংকট বেশি এমন এলাকার মধ্যে রয়েছে খিলগাঁও, মিরপুর ১১, মিরপুর ১২, মিরপুর ৬, বাড্ডা, রামপুরা, লালবাগ, হাজারীবাগ ও পুরান ঢাকার আলুবাজার।
শীতের পর গরম পড়তে শুরু করলেও সমাধান হয়নি গ্যাস সংকটের। বলা হয়, শীতে সংকটের মূল কারণ হচ্ছে চাহিদা বৃদ্ধি। পানির তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় অতিরিক্ত ২৫ ভাগ গ্যাসের চাহিদা তৈরি হয় ওই সময়। শীতে গ্যাস পাইপলাইনের মধ্যে কনডেনসেট জমে সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায়। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও অন্যবার মার্চের পর আর সংকট হয় না। কিন্তু এবার সংকট কাটছেই না।
অভিযোগকারীদের মন্তব্য— সকালে গ্যাস না থাকায় বাসায় নাস্তা বানানো যাচ্ছে না। তাই হোটেলই তাদের ভরসা। কিন্তু অনেক সময় দুপুরেও গ্যাস আসে না। ফলে দুপুরের খাবারও হোটেল থেকে এনে খেতে হচ্ছে তাদের। বিকালে গ্যাস আসা শুরু হলেও এর পরিমাণ এত কম থাকে যে পানি পর্যন্ত গরম হয় না। সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এরপর গৃহিণীরা শুরু করেন রান্না।
এদিকে গত ৮ মার্চ যমুনা ইউরিয়া সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে তিতাস গ্যাস। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার কারখানা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে এ কথা জানানো হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়— চলতি সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অধিক গ্যাস ব্যবহার নিশ্চিত করা ও দেশের গ্যাসভিত্তিক শিল্পখাতে প্রকট গ্যাস সংকট মোকাবিলায় যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এরপর ৮ মার্চ রাত ১১টা থেকে এই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়। ফলে ওই কারখানায় সরবরাহ করা ৬ কোটি গ্যাস এখন পাইপলাইনে যুক্ত হচ্ছে।
এই উদ্যোগের পরও কমেনি গ্যাস সংকট। কারণ হিসেবে তিতাস জানায়, এরপরও ঘাটতি আছে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস।
এ প্রসঙ্গে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মসিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ার কারণে ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না। রেশনিং করেই চলতে হচ্ছে।’
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়ে রেখেছেন, তিতাসের অধীন এলাকায় গ্যাসের চাহিদা প্রায় ২০০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু কখনোই চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া যায় না। সবসময়ই ৩০ কোটি ঘনফুটের মতো ঘাটতি থাকে।
তবে আগামী মে মাস থেকে পরিস্থিতি ভালো হবে বলে আশা করছেন তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার ভাষ্য, ‘এপ্রিলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু হলে এ বছরের মে মাস থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। কারণ এখন প্রায় ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হয়। এলএনজি এলে চট্টগ্রামে আর গ্যাস সরবরাহের প্রয়োজন নেই। ফলে এই গ্যাস পাঠানো হবে তিতাস গ্যাস কোম্পানির পাইপলাইনে। ফলে গ্যাসের সংকট অনেক কমে আসবে।’
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, আগামী মাসে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু হলে প্রথমে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এরপর ধীরে ধীরে বেড়ে তা করা হবে ৫০ কোটি।