শ্রীলঙ্কায় দাঙ্গার কারণ তদন্তে কমিশন গঠন, ‘মূল উসকানিদাতা’ আটক
দাঙ্গার কারণ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। শনিবার প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে ওই কমিশন গঠনের কথা জানানো হয়েছে। ভোরে পর্যটন শহর ক্যান্ডি থেকে কার্ফু প্রত্যাহার করে নেওয়ার কয়েকঘণ্টা পর ওই কমিশন গঠনের কথা জানানো হয়। দাঙ্গায় মূল উসকানিদাতাসহ ১৫০ ব্যক্তিকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। দেশজুড়ে এখনও বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রাম, ভাইবার ও হোয়াটস অ্যাপ। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এসব খবর জানিয়েছে।
রদিন ধরে চলা বৌদ্ধ-মুসলিম দাঙ্গায় শ্রীলঙ্কায় মুসলমানদের মালিকানাধীন দুই শতাধিক বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ১১টি মসজিদ সহিংসতার শিকার হয়েছে। এছাড়া নিহত হয়েছে ৩ জন আর আহত হয়েছে ২০ জন মানুষ। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে দেশটিতে সহিংসতার ঘটনা কমে এসেছে। সহিংসতার আশঙ্কা করা হলেও গতকাল শুক্রবার নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয়েছে মুসলিমদের সাপ্তাহিক প্রার্থনা জুমার নামাজ।
গত বছর থেকেই শ্রীলঙ্কায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর উগ্র বৌদ্ধরা হামলা চেষ্টা করছিল। ৫ মার্চ ২০১৮ সোমবার ক্যান্ডিতে নতুন করে মুসলিম মালিকানাধীন একটি দোকানে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি বৌদ্ধরা অগ্নিসংযোগ করলে দাঙ্গা শুরু হয়। দাঙ্গায় আহত এক বৌদ্ধের মৃত্যুর পাশাপাশি পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে এক মুসলিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে জরুরি অবস্থা জারির পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। বুধবার এক গ্রেনেড হামলায় একজন নিহত হওয়ার পর জরুরি অবস্থা জারি করে শ্রীলঙ্কা। বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেসবুক, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপ।
শনিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার দফতর থেকে জানানো হয়, দাঙ্গার কারণ খতিয়ে দেখতে অবসরপ্রাপ্ত তিন বিচারকদের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই কমিশন জীবন, সম্পদহানির অনুসন্ধান করা ছাড়াও দাঙ্গায় প্ররোচণা দেওয়া ব্যক্তিদের বিষয়েও তদন্ত করবে। ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা এড়াতে করণীয় সম্পর্কেও সুপারিশ করবে এই কমিশন।
এর আগে ক্যান্ডি শহরে চলমান কার্ফ্যুর সময়সীমা শনিবার ভোরে শেষ হয়। কর্মকর্তারা বলছেন রাস্তায় এখনও টহল অব্যাহত রেখেছে সেনাসদস্যরা। সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে কান্ডি শহর। দুইজন নিহত হওয়া ছাড়াও হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে মসজিদ, মুসলমানদের মালিকানাধীন বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দাঙ্গার প্রতিবাদে শুক্রবার রাজধানী কলম্বোতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন উদারপন্থি বৌদ্ধ নেতা ও ভিক্ষুরা। প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন ক্রিকেটাররাও।
দাঙ্গার মূল উসকানিদাতা হিসেবে অমিত বিরাসিংঘি নামে একজনকে চিহ্নিত করেছে শ্রীলঙ্কা পুলিশ। তাদের দাবি, মুসলিমবিরোধী আন্দোলনকারী অমিত বিরাসিংঘি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, অমিত বিরাসিংঘিকে নিজের ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে বলতে শোনা গেছে, ‘লিফলেট বিতরণ করতে করতে আমরা দিগানা এলাকায় (কান্ডি শহরের একটি অঞ্চল) পৌঁছে গেছি। তবে সমস্যা হলো আমরা সিংহিলিজেদর মালিকানায় ২০ দোকানের ধারেকাছেও আসিনি। এই শহর শুধু মুসলিমদের হয়ে যাচ্ছে। অনেক আগে থেকেই আমরা এটি বলে আসছি। আর সিংহলিজ হিসেবে আামাদের দোষ দেওয়া হয়। দিগানা ও আশেপাশে কোনও সিংহলিজ থাকলে প্লিজ চলে আসুন।’