ইতিমধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা চীনের প্রভাব এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরো গুরুত্ব দেওয়ার কথা খোলাখুলিভাবেই বলেছেন। শ্রীলংকা, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও নেপালে চীনের প্রভাব ও ব্যাপক উন্নয়ন তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় এমনকি সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ ও ভুটান ভারতের কাছে আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তাই ঢাকা ও থিম্পুর প্রতি ভারত সরকারের সমর্থন প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আসছেন মোদি। এ খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন দ্য ইকোনমিক টাইমস। নির্বাচনী বছরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য দিল্লির সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তির প্রতীক্ষায় রয়েছে ঢাকা। হিমালয়ের পাদদেশের দেশ ভুটানে চীন যখন সড়কপথে অগ্রসর হচ্ছে তখন বছরের প্রথম অর্ধাংশে ওই সফরে আসার কথা নরেন্দ্র মোদির। চীন এখনো ডোকালাম সীমান্তের কাছে তার সামরিক স্থাপনার কাজ আরো জোরোশোরে চালিয়ে যাচ্ছে।
ভুটানে ভারত সমর্থিত একটি নতুন পাওয়ার প্রজেক্ট পরিকল্পনাধীন রয়েছে। এই সফরে বাংলাদেশে ভারতের বিআরআই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের লক্ষ্য থাকবে। কবে মোদি আসছেন তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে তিনি আসছেন, এটা চূড়ান্ত। বছরের প্রথম অর্ধাংশেই আসছেন তিনি। দ্য ইকোনমিক টাইমস লিখেছে, পাঁচদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এখন ভারতে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। সেখানে ইন্টারন্যাশনাল সোলার এলায়েন্স সামিটে অংশ নেবেন তিনি। এ সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবিত ঢাকা সফরকে দেখা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে। কারণ, তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে মোদি কোনো ‘মেকানিজম’ প্রস্তাব করতে পারেন। এই তিস্তার পানি বন্টন চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য একটি আবেগময় বিষয়।একই সঙ্গে উত্তর ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোনো রকমের প্রশ্রয় দিচ্ছে না বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ সরকারের এধরনের অঙ্গীকার যাতে ভবিষ্যতেও বজায় থাকে তার নিশ্চয়তা চায় ভারত।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে ২০১৪ সালে ভুটান গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ২০১৫ সালে তিনি ঢাকা সফরে এসেছিলেন। অন্যদিকে তিনবার দিল্লি সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন ইস্যুতে ‘স্মার্টভাবে’ কাজ করছে শেখ হাসিনার সরকার। বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রজেক্টে কাজ করছে চীনা কোম্পানিগুলো। অন্যদিকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে ২৩০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে চীন। কিন্তু তা এখনও গৃহীত হয়নি। এর কারণ, ভারতের উদ্বেগের বিষয়টি ঢাকার কাছে স্পর্শকাতর।
দ্য ইকোনমিক টাইমসের রিপোর্টে আরো বলা হয়, শুধু বাংলাদেশ বা ভুটানের সঙ্গেই আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্ত হবেন এমন না। নেপালের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তজনাকর পরিস্থিতির পর প্রথমবারের মতো দিল্লি সফরে আসতে পারেন নেপালি প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি। চতুর্থ রাউন্ড বিমসটেকের সম্মেলনে এ বছর কাঠমান্ডু যেতে পারেন নরেন্দ্র মোদি।
সাম্প্রতিক ডোকালাম ঘটনার মধ্য দিয়ে ভুটানে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। তারা থিম্পুতে তাদের পা রাখার পরিকল্পনা করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচটি দেশের কারো সঙ্গেই কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এই ভুটানের। সেখানে অবস্থানরত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছরের শেষের দিকে ভুটানে তৃতীয় জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচন ভারত ও চীনের জন্য সম্পর্কের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। বিরল এক ঘটনায় ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা এনএসএ’র পররাষ্ট্র বিষয়ক সচিব বিজয় গোখালে ও সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত সম্প্রতি থিম্পু সফর করেছেন।
