এখনও ভিড়ের চাপের দুঃসহ সেই স্মৃতি ভুলতে পারছেন না আহতরা
নিউজ ডেস্ক : এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে যারা আহত হয়েছেন, তারা এখনও ভিড়ের চাপের দুঃসহ সেই স্মৃতি ভুলতে পারছেন না।
একদিন আগের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আহত মনোজ বড়ুয়া বলেন, “১৫-২০ মিনিট আমি গেইটের সামনে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ানো ছিলাম। অতিরিক্ত ভিড় ছিল। দরজা খুললে এগিয়ে যাওয়ার পরই পেছন থেকে জোরে একটা ধাক্কা আসে।
“মাটিতে পড়ার সময় দেখি সামনে একটি আট-দশ বছরের বাচ্চা। তাকে উঠিয়ে ধরার চেষ্টা করি। বুকে ব্যথা পাচ্ছিলাম। এরপর চোখে অন্ধকার দেখি। তারপর আর কিছু মনে নেই।”
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কথা হয় মনোজের সঙ্গে, যিনি মেজবানের আয়োজন দেখতে সোমবার আশকার দীঘির পাড়ের রীমা কমিউনিটি সেন্টারে গিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের কুলখানিতে চট্টগ্রাম নগরীর ১৩টি স্থানে মেজবানের আয়োজন হয়েছিল। তার মধ্যে রীমা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন ছিল যারা গোমাংস খান না, তাদের জন্য।
দুপুরে তিনটি ব্যাচের খাওয়ার পর গেইট খুলে পড়লে বাইরে থাকা লোকজনরা হুড়োহুড়ি করে ঢুকতে শুরু করলে পদদলনে ১০ জনের মৃত্যু ঘটে, আহত হন ১১ জন।
এই আহতদেরই একজন মনোজ বলেন, কুলখানির আয়োজন কীভাবে হচ্ছে, তা দেখতে গিয়েছিলেন তিনি।ব্যাটারি গলির বাসিন্দা মনোজ মেজবানের অন্য কয়েকটি স্থান ঘুরে রীমা কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন।
তিনি বলেন, “জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি মাটিতে। উঠে বসার পর একজন ধরে আমাকে চেয়ারে বসায়। তখন মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল।” আহত আরেকজন সুমন দাশ (৩৫) যখন ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখনও তার চোখে-মুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ।
আসকার দিঘীর পাড় এলাকার জয় পাহাড় হাউজিং সোসাইটির একটি ভবনের তত্বাবধায়ক সুমন বলেন, “গেইটের কাছে ১০-১৫ জনের পেছনেই আমি ছিলাম। যখন গেট খুলছিল না তখন পেছন থেকে চাপ বাড়ছিল।
“দরজা খোলার পরই পেছন থেকে জোরে একটা ধাক্কা আসে। পাঁচ-ছয় হাত মত এগিয়ে গিয়েই আমি পড়ে যাই। আমার গায়ের উপর লোকজন পড়ে যায়। আমি জ্ঞান হারাই।
“পরে জ্ঞান ফিরে শুনি আমার গায়ের ওপর যারা পড়েছিল, তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছে।” হাতে ও বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন সুমন।
রীমা কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশ পথ বেশ খানিকটা ঢালু। ভবনের দুটি ফটকের মধ্যে পশ্চিম পাশের প্রথম ফটকটি থেকে মূল ভবন প্রায় ১০ ফুট নিচে। মূল ফটক দিয়ে ঢোকার পর ওই ঢালু অংশ পার হয়ে মূল ভবনে যেতে হয়। সেখানেই ভিড়ের মধ্যে পদদলনের ঘটনা ঘটে।
রীমা কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন আন্দরকিল্লার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক জহরলাল হাজারী।
তিনি ঘটনার পর বলেছিলেন, জনপ্রিয় নেতার কুলখানিতে শুধু রীমাতেই ১৩ হাজারের মতো মানুষের খাবারের আয়োজন করেছিলেন তারা।
“দুপুরে খাবার পরিবেশন শুরু হওয়ার পর তিনটি ব্যাচের খাওয়া শেষ হয়। একটি ব্যাচের খাওয়া তখন চলছিল। এরপর বসার জন্য অনেকে বাইরে অপেক্ষা করছিল। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে এক সময় পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে লোকজন গেইট খুলে ঢুকতে শুরু করে।”
রীমা কমিউনিটি সেন্টারের বাইরের পান দোকানি আবদুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাইরে বেশি মানুষ ছিল। গাড়িও চলছিল। ধাক্কাধাক্কিও ছিল।
“তারপর গেইট খুলতেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়।”
মঙ্গলবার দুপুরেও পথ চলতি লোকজন দাঁড়িয়ে দেখছিল, কোথায় সেই পদদলনের ঘটনা ঘটেছে। ভেতরে পুলিশ সদস্যরা বসে ছিল। যেখানে ঘটনা ঘটেছিল সেই স্থানটি রশি দিয়ে ঘেরা।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, গত রাত থেকেই পুলিশের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সিসিটভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। লোক ঢুকতে গিয়ে মানুষের যে প্রেশার তাতেই…। এখানে কোনো মারামারি হয়নি। নাশকতার মতো কিছু আমরা এখনও পাইনি।”
সিসিটিভি ফুটেজেই ভরসা নওফেলের
পদদলনের সময় আসলে কী ঘটেছিল, তা জানতে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ফল কী মেলে, তার অপেক্ষায় আছেন মহিউদ্দিনের ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার মুহূর্তে সেখানে আসলে কী হয়েছে, সেটা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে যারা এ বিষয়ে দক্ষ অর্থাৎ পুলিশ প্রশাসন তারাই সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন।
“দুটো কথা আমরা শুনছি। অনেকে বলছে, হঠাৎ করে কেউ গেইটটা খুলে দিয়েছিল। আবার শুনছি, সামনের দিকের কিছু মানুষ মোবাইল ফোন তুলতে গিয়ে হোঁচট খান।”
এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার নওফেল বলেন, “দুর্ঘটনা দুভাবেই কিন্তু ঘটতে পারে- পরিকল্পিতভাবে আবার অপরিকল্পিতভাবে।
“পরিকল্পিতভাবে কেউ করেছিল কি না সেটা যেমনি জানা যাবে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে। আর অপরিকল্পিতভাবে কেউ অতি উৎসাহী হয়ে ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ কি গেট খুলেছিলেন কি না, সেটাও জানা যাবে আসলে ফুটেজ পর্যালোচনা করার পর।” বিডিনিউজ