ফের বনানীতে হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক : রেইনট্রি হোটেলের ঘটনার বছর না গড়াতেই রাজধানীর বনানীতে আরেকটি হোটেলে ধর্ষিত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন এক নারী।
বনানী থানায় মামলাকারী ৩২ বছর বয়সী এই নারীর অভিযোগ সঙ্গীতশিল্পী আনুশেহ আনাদিলের ভাই কুশান ওমর সূফির (৩৮) বিরুদ্ধে।
গত ১৩ ডিসেম্বর ওই নারী মামলাটি করলেও তা সোমবার প্রকাশ পায়।
বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবদুল মতিন বলেন, “মামলার এজাহারে ওই নারী বলেছেন, তিনি বনানীর সুইট ড্রিম হোটেলে গত ২০ নভেম্বর ধর্ষণের শিকার হন।”
সূফির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকার কথা জানিয়ে ওই নারী এজাহারে বলেছেন, তাকে ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই হোটেলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়’।
ওই ঘটনার পর মামলা এড়াতে বিয়ের আশ্বাসও সূফি দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন এই নারী।
কিন্তু এখন সূফির পরিবার তা অস্বীকার করার পাশাপাশি সূফিকে বিদেশ পাঠিয়ে দিতে চাইছে বলে তিনি মামলা করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন তিনি।
সূফির পরিবারের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও করেন এই নারী।
তার এই অভিযোগের বিষয়ে সূফির পরিবারের কোনো বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তার বোন আনুশেহর মোবাইল ফোনে সোমবার রাতে কল করেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
পুলিশ কর্মকর্তা মতিন বলেন, “মামলা নেওয়ার পর আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।”
সুইট ড্রিম হোটেলের ব্যবস্থাপক সাগর চন্দ্র দে বলেন, “সেদিন স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে হোটেলে রাতে কাটিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি (সূফি) ও ওই নারী।
“পরদিন সকালে স্বাভাবিকভাবেই চলে গেছেন। তাদের দেখে কোনো গণ্ডগোল হয়েছে বলে মনে হয়নি।”
হোটেলের রিসিপশনে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য কাগজপত্র পুলিশকে দিয়েছেন বলেও জানান সাগর।
অভিযোগকারী নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে জানিয়ে পরিদর্শক মতিন বলেন, “এখন প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।”
বনানীর রেইনট্রি হোটেলে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আসার সাত মাসের মধ্যে কামাল আতাতুর্ক সড়কের সুইট ড্রিম হোটেলে একই ধরনের ঘটনার অভিযোগ এল।
ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা ওই নারী এজাহারে বলেছেন, দেড় বছর আগে সূফির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, এরপর থেকে সূফির বনানীর ওল্ড ডিওএইচএসের বাড়িতে তার যাতায়াতও ছিল।
“এক পর্যায়ে বিবাদী (সূফি) আমাকে বিবাহ করিবে বলে তাদের বাসায় নিয়ে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। গত জুন মাসে বিবাদী দেশের বাইরে যায় এবং সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরে আমাকে বিয়ে করার আশ্বাস প্রদান করে।”
দেশে ফেরার পর গত ১৯ নভেম্বর বিয়ের আলোচনা করতে সূফির বাড়িতে গেলে আনুশেহ ঢুকতে নিষেধ করেছিলেন বলে দাবি করেন ওই নারী।
“তখন ওই আসামি আমাকে বলে যে ‘চল আমরা বাইরে কোথাও গিয়ে আলোচনা করি’। একথা বলে সে এক রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া শেষে ২০/১১/২০১৭ তারিখে রাত ১২:৩০ ঘটিকায় আমাকে সুইড ড্রিম হোটেলে নিয়ে যায়। আমি তাকে ভালোবাসি বলে তার কথায় হোটেলে যেতে সম্মতি জ্ঞাপন করি।”
হোটেল কক্ষে হঠাৎ করেই মারধরের পর সূফি তাকে ধর্ষণ করেন বলে ওই নারীর অভিযোগ। সকালে বনানী থানায় ফোন করে ঘটনাটি জানিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
“থানার টহল টিম আমাকেসহ উক্ত বিবাদীকে (সূফি) থানায় নিয়ে আসে এবং অভিযোগ করার জন্য আইনি পরামর্শ দেয়। সংবাদ পেয়ে বিবাদীর চাচা থানায় এলে আমি তাকে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলি।”
পরদিন সূফি তার পরিবারের কয়েক সদস্যের উপস্থিতিতে থানায় এক বৈঠকে তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেন এবং এ বিষয়ে লিখিত আপসনামাও হয় বলে এই নারীর দাবি।
তিনি বলেন, “এরপর ২১ নভেম্বর তিনি বিবাদীর বাড়িতে গেলে তাকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়।
“এরমধ্যে তারা বিবাদীকে (সূফি) অন্যত্র রেখে আসে এবং বিবাদীকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবে বলে আমাকে জানায়।”
ওই ঘটনার পর ক্যান্টনমেন্ট থানায় জিডি করেছেন জানিয়ে এই নারী বলেন, “বিবাদী বর্তমানে আমার প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। সে যে কোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারে। তাই উল্লিখিত বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত আবশ্যক।
“আমি পারিবারিকভাবে বিবাহের চেষ্টা করে ব্যরআথ হয়ে এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আলোচনা শেষে এজাহার দায়েরে বিলম্ব হল।”