সততার মহান প্রতীক : দেড় যোগ পড়েছেন সেলাই করা এক পাঞ্জাবী, পড়েছেন শালটিও
তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : নাসিরনগরের উন্নয়নের মহানায়ক বলা হয় প্রয়াত মন্ত্রী সায়েদুল হককে। দেশের অন্যতম সৎ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত প্রয়াত মৎস্য ও প্রানি সম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ভিটে বাড়িটি টিনের দুচালা ঘরই এখনো তার একমাত্র অবলম্বন, সম্বল। ত্যাগী এই মহাবীর নিজের জন্য তেমন কিছুই করেন নি। মৃত্যুর পর তার এলকার লোকজন এখন মুখে মুখে এ কথাই বলেছে। তারা বলেছেন, তিনি যা করেছেন জনগনের জন্য করেছেন। দেশবাসীর জন্য করেছেন।
সে সবের প্রমানও মিলেছে। পিতার সময়কার নির্মিত দু,চালা টিনের ঘরটি ছিল তার ভরসা। সে ঘরটি ও জীর্নশীর্ন। কোথাও কোথাও ভেঙ্গে পড়েছে। বাড়িতে রাত্রি যাপনের প্রয়োজন হলে পিতার নির্মিত বৈঠক খানায় রাত্রি যাপন করতেন। এখানেও তিনি ২টি টেবিল জোড়া দিয়ে চৌকি বানিয়ে ঘুমাতেন। বিলাসী জীবন তার পছন্দ নয়। তবে তিনি সবসময় পরিপাটি থাকতেন। চোখে সুরমা ব্যবহার করতেন। ৫ ওয়াক্তের নামাজ পড়তেন।
সহকর্মী রাজনৈতিক কর্মীদের দীক্ষা দিতেন কখনো অর্থের কোন অপচয় করো না। অতিরিক্ত অর্থ অপচয় করলে স্বভাব খারাপ হয়ে যায়। সব কিছুর হিসাব দিতে হবে। লোভ লালসা তাকে কাবু করতে পারেনি কখোনো। প্রয়াত মন্ত্রীর ৫১ বছরের সহযোগি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা ভানেশ্বর দেবনাথ বলেন, উনি ছাত্র জীবনের পর যখন আইন পেশায় ভর্তি হন, তখন ১৭ বছর একাধারে একটি পাঞ্জাবী পড়েছেন। নিজ হাতে সেলাই করে পাঞ্জাবী পরত।
তিনি আরো বলেন, সায়েদুল হকের সাথে থেকে আমার জীবনটা ও সাধু সন্নাসীর পর্যায়ে চলে এসছে। যদিও আমি সাধু নই। তিনি আরো বলেন, তাঁর জীবনে খুব বেশি দামী কাপড় পড়েন নি। সাধারন কাপড়েই তিনি চলাফেরা করতেন। একই গ্রামের আবদু মিয়া বলেন, তিনি ২০ বছর ধরে একটি শাল পড়েছেন। ১৪ টি সেলাই দিয়ে তা ব্যবহার করতেন।
আরও : বাংলাদেশের উপকূলে আসতে থাকা জ্বলন্ত জাহাজ আটকে দিলো ভারত
১০০/২০০ টাকা দামের লুঙ্গী পড়ে, খুবই সাধা সিধে জীবন যাপন করতেন। করিম মিয়া বলেন, মন্ত্রী ছায়েদুল হক বাড়িতে আসলে ২ টি টেবিল জোড়াতালি দিয়ে ঘুমাত। তিনি কখনো অন্যায় ভাবে টাকা গ্রহন করেন নি, টাকা দেয় নি। পূর্বভাগ গ্রামের এক এক আত্মীয় বলেন, যে ঘরে এসে এটি তার পিতার বসত ঘর। তিনি সৎ ব্যক্তি ছিলেন। তা না হলে তিনি কি ভাবে ৫ বার এমপি হলেন। স্থানীয় স্কুল ছাত্র রায়হান বলেন, আওয়ামীলীগ-বিএনপি নয়, তিনি নাসিরনগরের মানুষকে একটি পরিবার মনে করতেন। পরিবারের অভিভাবক হিসেবে এমন ভাবেই তাদেরকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার জরাজীর্ন ঘরটি দেখলে মনে হবে পরিত্যক্ত কোন ঘর।
প্রকৃত পক্ষে তা নয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই ঘরটি দেশের ৫ বারের নির্বাচিত জনপ্রিয় সংসদ সদস্য ও প্রয়াত মৎস্য ও প্রানি সম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের। নিজে এত ত্যাগ স্বীকার করলেও তিনি কখনো এলাকার জনগনকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন নি। নাসিরনগরে তার শাসনামলে ইতিহাসের নজির বিহীন কাজ করেছেন। এলাকার উন্নয়নের স¤্রাট বলা হয় তাকে। বিদ্যু ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট নির্মান, সড়ক ও মহাসড়ক নির্মান, জেলা সদরের সাথে প্রত্যন্ত অঞ্চল নাসিরনগরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, পাশ্ববর্তী জেলার গুলোর সাথে তিনি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় বহু রাস্তাঘাট পুল ব্রীজ কালভার্ট নির্মান করেন।
শুধু নাসিরনগরই নয় ব্রাহ্মনবাড়িয়া শহরেও তার মৃত্যুর পর সাধারন মানুষ এসব নিয়ে গত দু,দিন ধরে সরব আলোচনা করছেন। এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ তাকে সৎ হিসেবেই চিনতেন, জানতেন। সততার জ্বলন্ত এ দৃষ্টান্ত তার সহকর্মীসহ নাসিরনগর বাসীকে এখন কাঁদিয়ে বেড়াচ্ছে। ত্যাগী আদর্শবান নেতা ছায়েদুল হক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর, জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ নাসিরনগরের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বর্ষীয়ান নেতা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছায়েদুল হক ১৯৭৩ সালে আওয়ামীলীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নিবার্চিত হন। এরপর ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮, ২০১৪ সালের নিবার্চনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহন করে সংসদ সদস্য নিবার্চিত হন।
তিনি দশম সংসদ নিবার্চনের পর মন্ত্রী পরিষদে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনি বর্তমান আওয়ামীলীগের শাসনামলে নাসিরনগরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সব সময় তিনি গ্রামের মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতেন।