সোমবার, ১৮ই জুন, ২০১৮ ইং ৪ঠা আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

রসায়নের ‘এলিয়েন গার্ল’ মৌরি

মাকসুদা পারভীন মৌরি বাবা-মায়ের ছোট মেয়ে। রাজবাড়ী জেলায় জন্ম হলেও বড় হয়েছেন ঢাকার রামপুরায়। বন্ধুরা মৌরিকে ‘এলিয়েন গার্ল’ বলে ডাকেন। এলিয়েন বলবেনই বা না কেন? মৌরির যে সাফল্য!

মৌরি এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রসায়ন বিভাগের অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ ফল অর্জন করেছেন। স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে সিজিপিএ চালু হওয়ার পর এযাবৎকালের সর্বোচ্চ সিজিপিএ ৩ দশমিক ৯৪ পেয়েছেন তিনি।

মৌরির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় থেকে বুঝতে পারেন ভালোভাবে পড়াশোনা করলে ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব। এরপর চতুর্থ শ্রেণি থেকে প্রতি ক্লাসেই প্রথম স্থান অর্জন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পান। মৌরি ২০১০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় রামপুরা ইকরামুন্নেচ্ছা গার্লস স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সব বিষয়ে (গোল্ডেন) জিপিএ ৫ পান। ২০১২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ভিকারুননিসা নূন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সব বিষয়ে জিপিএ ৫ পান।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মৌরিকে। তিনি স্বপ্ন দেখতেন চিকিৎসক হওয়ার। একসময়ে সেই স্বপ্ন বদলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নকে লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ২৫২৯তম হয়ে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। ভর্তি হয়েই থেমে থাকেননি মৌরি। নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং লক্ষ্য ঠিক করে এগিয়ে যান। একসময় বিভাগের পরীক্ষায় প্রথম হন। শুধু প্রথমই হননি, ঢাবির রসায়ন বিভাগের সিজিপিএর ইতিহাসে সেরা সাফল্য অর্জন করেন।

মৌরি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রথমত নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস জরুরি। পড়াশোনার ব্যাপারে শিক্ষক ও পরিবারের সবার উৎসাহ ভালো ফল অর্জনে ভূমিকা রেখেছে। পরিবারের সবাই তাঁকে তাঁর পছন্দের বিষয়ে পড়তে উৎসাহ দিতেন।

আরও : আবর্জনার মতোই আনুষ্কার কথাবার্তা, পাল্টা জবাব সেই যুবকের…

প্রথম বর্ষে মৌরি তাঁর ব্যাচের মধ্যে সর্বোচ্চ জিপিএ ৩ দশমিক ৮৩ পান। এরপর তাঁর উৎসাহ-উদ্দীপনা আরো বেড়ে যায়, তাঁর মধ্যে একটা সাহস চলে আসে। পড়াশোনার বিষয়গুলো বুঝে এবং নিজের লক্ষ্য ঠিক রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যান। দ্বিতীয় বর্ষে জিপিএ ৩ দশমিক ৯৯, তৃতীয় বর্ষে জিপিএ ৩ দশমিক ৯৯ ও চতুর্থ বর্ষে জিপিএ ৩ দশমিক ৯৩ অর্জন করেন। স্নাতক (সম্মান) শেষে রসায়ন বিভাগে তাঁর ব্যাচে সর্বোচ্চ সিজিপিএ ৩ দশমিক ৯৪ লাভ করেন। এই ফল রসায়ন বিভাগের ইতিহাসে আর কেউ অর্জন করতে পারেননি।

সর্বোচ্চ ফল অর্জন করায় মৌরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন। স্নাতকোত্তরেও ভালো ফলের জন্য তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ ছাড়া ২০১৫ ও ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ রেজাল্টের জন্য ‘অধ্যাপক আবদুল মুকতাদির স্মারক ট্রাস্ট ফান্ড’ বৃত্তি পান মৌরি।

পড়াশোনার এই সাফল্যের কারণ জানতে চাইলে মৌরি বলেন, পড়াশোনার কোনো বিষয় না বুঝলে তিনি ইউটিউব ও ইন্টারনেটের সাহায্য নেন।

নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মৌরি বলেন, তত্ত্বীয় বিষয় পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণাগারের কাজগুলো ভালোভাবে হাতেকলমে শেখা জরুরি। বুঝতে না পারা বিষয়গুলো জানতে ইন্টারনেটের সাহায্যও নেওয়া জরুরি। নিজেকে নিয়ে হতাশ না হয়ে, আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্নকে শেষ না করে সেই স্বপ্নকে বুনতে হবে। সাফল্য আসবেই ।

মৌরির ইচ্ছা রসায়ন বিশেষজ্ঞ হওয়ার। নিজে যা শিখেছেন, সেই বিষয়গুলো অন্যদের বোঝানো। আর উচ্চতর শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান তিনি।

মৌরি চলচ্চিত্র দেখতে ও বই পড়তে পছন্দ করেন। কোন ধরনের চলচ্চিত্র পছন্দ করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র আমার খুব ভালো লাগে। ‘আমার আছে জল’, ‘শ্যামল ছায়া’ এই চলচ্চিত্রগুলো আমার অনেক ভালো লেগেছে।” এ ছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, হিমু সিরিজের বইগুলো তাঁর পছন্দের বইগুলোর মধ্যে অন্যতম।

প্রয়াত নন্দিত ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই রসায়ন বিভাগ থেকেই পড়াশোনা করেছেন। এবং একসময় ওই বিভাগে শিক্ষকতাও করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

এ জাতীয় আরও খবর

জিপিএ-৫ বিক্রি কেলেঙ্কারীতে বন্ধ হচ্ছে ৫ কলেজ

৩৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ফলাফল প্রকাশ

ঈদের আগেই সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি

গোপালগঞ্জে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস খাদে পড়ে আহত ১৫

আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রিন বিল্ডিং বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত