নতুন রেকর্ড বিদেশি লেনদেনে
নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফিরেছে দেশের শেয়ারবাজার। এতে বাজারের উপর সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও। শেয়ারবাজারে বিদেশিদের লেনদেনে সৃষ্টি হয়েছে নতুন রেকর্ড।
সদ্য সমাপ্ত নভেম্বরে শেয়ার লেনদেনে বিদেশিদের অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে গেছে। মাসটিতে বিদেশিরা ১ হাজার ২৫৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছেন। শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এক মাসে বিদেশিরা এত বেশি টাকার শেয়ার লেনদেন আগে কখনো করেনি।
এর আগে বিদেশিদের এক মাসে সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল গত মার্চে। মাসটিতে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। তার আগে বিদেশিরা এক মাসে সর্বোচ্চ লেনদেন করে ১ হাজার ৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বিদেশিরা এই শেয়ার লেনদেন করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে।
ফলে এক বছরে তিনবার বিদেশিদের শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টি হলো। শুধু তাই নয়, চলতি বছরে বিদেশিরা পাঁচ মাসে হাজার কোটি টাকার উপরে লেনদেন করেছেন। ২০১৭ সালের আগে কখনো বিদেশিরা এক মাসে এক হাজার কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করেননি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। মাঝে কিছুদিন বাজারে মন্দা দেখা দিয়েছিল। এ সময় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। সেই সুযোগই নিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় তারা শেয়ার ক্রয়ে মনযোগী হয়েছেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন শেয়ারবাজারে মন্দাভাব থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানের দাম বেশ কমে যায়, এ কারণেই হয় তো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ে আকৃষ্ট হয়েছেন। তাছাড়া ২০১৭ সালের শুরু থেকেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এতে বাজারের উপর সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা বেড়েছে।
আরও : আবর্জনার মতোই আনুষ্কার কথাবার্তা, পাল্টা জবাব সেই যুবকের…
তিনি আরও বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সার্বিক তথ্য পর্যালোচনা করে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করেন। দেখা যায়, শেয়ারের দাম যখন কম থাকে তখন তাদের ক্রয়ের পরিমাণ বেড়ে যায়। আবার ঊর্ধ্বমুখী বাজারে তারা শেয়ার বিক্রি করে দেন। সে কারণে বিদেশিদের বিনিয়োগ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে সেটি চিন্তার বিষয়। তবে আশার কথা আমাদের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছেনি।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের শুরু থেকেই বিদেশিরা শেয়ার ক্রয়ে মনোযোগী হয়। ফলে প্রতি মাসেই তাদের শেয়ার বিক্রির থেকে ক্রয়ের পরিমাণ বেশি থাকে। কিন্তু অক্টোবরে এসে ক্রয় থেকে বিক্রয় বেড়ে যায়। মাসটিতে বিদেশিরা ২৪৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় করে ৩৯৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিক্রয় বেশি হয় ১৫১ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
তবে এক মাসের ব্যবধানে নভেম্বরে আবার বিক্রয় থেকে ক্রয় বেশি হয়েছে। নভেম্বর মাসজুড়ে বিদেশিরা শেয়ার ক্রয় করেছে ৬৩৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর বিপরীতে বিক্রয় করেছে ৬১৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিক্রয়ের থেকে ক্রয় বেশি হয়েছে ১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বিদেশিরা ৬১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় করে ৪২৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। পরের মাস ফেব্রুয়ারি ৪৩৫ কোটি টাকা ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় করে ১৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। মার্চে ৭১১ কোটি ৯ লাখ টাকার ক্রয়ে বিপরীতে বিক্রয় হয় ৩৮১ কোটি ৯ লাখ টাকা।
বিক্রয় থেকে ক্রয় বেশি হওয়ার এ ধারা পরের মাসগুলোতেও অব্যাহত থাকে। এপ্রিলে ৪৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় হয় ৩৯৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। মে মাসজুড়ে বিদেশিরা ৫২৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয় করে। এর বিপরীতে বিক্রয় করে ৩৭১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। জুন মাসে ৭৩১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় ছিল ৩৪১ কোটি ১৫ লাখ টাকার।
এ ছাড়া জুলাই মাস বিদেশিরা ৬২৫ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয় করে, বিপরীতে বিক্রয় করে ৪২৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। পরের মাস আগস্টে ৪৩২ কোটি টাকার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় ছিল ৪০০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর সেপ্টেম্বরে ৫৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্রয়ের বিপরীতে বিদেশিরা বিক্রয় করে ৩৮৬ কোটি ৫ লাখ টাকা।