যে কারণে তিন ধর্মের কাছেই জেরুজালেম গুরুত্বপূর্ণ
ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দিয়ে মুসলিমসহ বিশ্বের নিন্দার মুখে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘোষণার পর নতুন সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের ডাক দিয়েছে ফিলিস্তিনের ফাতাহ, হামাস ও পিএলও। অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। ভেঙে পড়তে পারে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তি আলোচনা।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বে রাজনৈতিক গুরুত্ব ছাড়াও জেরুজালেম বিশ্বের প্রধান তিনটি ধর্মের পবিত্র স্থান। ফলে শহরটির ধর্মীয় গুরুত্বও তাৎপর্যপূর্ণ।
১৯৬৭ সালে জেরুজালেম অবৈধভাবে দখল করে ইসরায়েল। প্রায় ৫০ বছর পর সাড়ে তিন লাখ ফিলিস্তিনি নৃশংস ইসরায়েলি দখলদারিত্বের মধ্যে বাস করছেন। পদে পদে তাদের অধিকার লঙ্ঘন ও খর্ব করছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। এই অবস্থা পরিবর্তনের বাস্তব কোনও আশাবাদ দৃশ্যমান নেই।
জেরুজালেমের পুরনো শহরে ইসলাম, খ্রিস্ট ও ইহুদি ধর্মের অনুসারীরা প্রতিদিনই প্রদক্ষিণ করেন। জেরুজালেমের ধর্মীয় তাৎপর্য তাই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই শহরের ধর্মীয় তাৎপর্য তিন হাজারের বেশি বছরের। তিন ধর্মের কাছেই শহরটির তিনটি স্থাপনা পবিত্র বলে স্বীকৃত।
হারাম শরিফ
আল আকসা মসজিদ ও পাথরের গম্বুজের (ডোম অব দ্য রক) সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে হারাম আল শরিফ। মক্কা ও মদিনার পর এটি মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান। ইসলাম ধর্মের শুরুতে মহানবী (সা.) আল আকসা মসজিদকে কেবলা ধরে নামাজ আদায় করতে বলেছিলেন। পরে তা কেবলা মক্কামুখী করা হয়।
এখানে প্রথম ছোট একটি মসজিদ নির্মাণ করেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর, পরে ৭০৫ সালে এখানে প্রথম বড় আকারে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। দু’দফা ভুমিকম্পে দুবার ধ্বংস হয়ে গেলে তা পরে পুনঃনির্মাণ করা হয়। এখন যে মসজিদটি আছে তা নির্মিত হয় ১০৩৫ সালে।
মসজিদের পাশেই রয়েছে সোনালী গম্বুজবিশিষ্ট ‘ডোম অব দি রক’ বা ‘কুব্বাত আল-শাখরা’। ইহুদিদের মন্দির ধ্বংস করে রোমানরা এখানে দেবতা জুপিটারের একটি মন্দির তৈরি করেছিল। পরে ৬৮১ সালে উমাইয়া খলিফা আবদ-আল মালিকের সময় নির্মাণ করা হয় এই ‘ডোম অব দি রক’। ১০৯৯ সালে ক্রুসেডাররা এ জায়গাটি দখল করে নিলে তারা ‘ডোম অব দি রক’কে একটি গির্জা হিসেবে এবং আল-আকসাকে রাজপ্রাসাদ ও নাইট টেম্পলারদের দফতর হিসেবে ব্যবহার করে।
আটকোণা এই গম্বুজের ভেতরেই রয়েছে সেই পাথরের ভিত্তি – যেখান থেকে ইসলামের নবী মুহাম্মদ মিরাজে গিয়েছিলেন বোরাক চড়ে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, বোরাকের পায়ের ছাপ এখনও পাথরে দেখা যায়।
আরও : বাংলাদেশের উপকূলে আসতে থাকা জ্বলন্ত জাহাজ আটকে দিলো ভারত
আল বুরাক দেওয়াল
জেরুজালেমে সর্বশেষ ইহুদি মন্টির স্থাপন করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ২০ সালে। যা পশ্চিম দেওয়াল বা কটেল নামে ইহুদিদের কাছে পরিচিত। ৭০ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটি ধ্বংস করে রোমনরা। এই মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে একটি বড় পাথর এখনও দৃশ্যমান আছে। ইহুদিদের কাছে তা এখনও পবিত্র স্থান।
১৯৬৭ সালে ইসরায়েল জেরুজালেমের পুরনো শহর দখল করলে বুলডোজার দিয়ে পুরনো বাড়িঘর ধ্বংস করে আল বুরাক দেওয়ালের সামনের অংশে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করে। হারাম শরিফ সরাসরি আল বুরাক দেওয়ালের উপরে অবস্থিত। চরমপন্থী ইহুদিরা মনে করেন, হারাম শরিফে তাদের প্রবেশাধিকার রয়েছে।
পবিত্র সমাধির গির্জা
দখলকৃত জেরুজালেমেই খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিস্টকে রোমানরা বিচার ও ক্রুশবিদ্ধ করে। যে পথ দিয়ে যিশুকে হাঁটিয়ে নেওয়া হয়েছিল সেই পথটি এখনও বিদ্যমান। এই পথেই যাওয়া যায় যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার স্থান ও সমাধিতে।
পবিত্র সমাধির গির্জা (দ্য চার্চ অব দ্য হলি সেপালচার) ১ হাজার ৭০০ বছর আগে বাইজেন্টাইন সম্রাজ্ঞী হেলেনা নির্মাণ করেন। ৩২৬ ও ৩২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই স্থানটি পরিদর্শন করেছিলেন এবং সেখানে বেশ কয়েকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করেন।
তীর্থযাত্রী
জেরুজালেমের পুরনো শহরে প্রতিদিন তিন ধর্মের বিপুল সংখ্যক অনুসারী ভ্রমণ করেন। ইহুদিরা ডেভিড স্ট্রিটসহ আল বুরাক দেওয়াল থেকে আল খলিল গেট পর্যন্ত বা তারিক আল ওয়াদ থেকে আল আমুদ গেট (দামেস্ক গেট) পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করেন। এদের সঙ্গে যোগ দেয় খ্রিস্টানরা । তারাও যিশু খ্রিস্টের শেষ দিনের পথ দিয়ে মুসলিম কোয়ার্টার হয়ে হারাম শরিফে পৌঁছায়। সূত্র: গালফ নিউজ।