সৌদি আরবে এবার ধরপাকড়ে টার্গেট নেতৃস্থানীয় মানবাধিকার নেতা ও বিচারবিভাগের লোকজন। দেশটিতে কোনো বাক স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। এরপরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা কোনোভাবে মত প্রকাশ করলে সৌদি কর্তৃপক্ষের পছন্দ না হলে গ্রেফতার ও নির্যাতন অবধারিত এবং তা ধারাবাহিকভাবে হয়ে থাকে। মিডিল ইস্ট আই ডটনেট
গত সোমবার অন্তত ৮ জনকে আটক করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এদেও মধ্যে আলেম, রাজনৈতিক চিন্তাশীল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় এমন ব্যক্তি রয়েছেন। গত সপ্তাহের শেষ দিকে সৌদি সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটস এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য আব্দুলআজিজ আল-সুবাইলি ও ইসা আল-হামিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। গত সোমবার গ্রেফতারকৃত ৮ ব্যক্তির মধ্যে ৬ জন ফৌজদারী আদালতের বিচারক ও দুজন বিচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রয়েছেন।
এছাড়া আটক করা হয়েছে ফরেনসিক গবেষক মুসা আল-ঘাননামিকে। মুসা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বেশ সরব ভূমিকার জন্যে পরিচিত। টেলিভিশন শো’তে আইএস জঙ্গিরা যে ইসলামের অনুসারী নয় এবং তাদের কর্মকা- যে পুরোপুরি অনৈসলামিক এব্যাপারে ধর্মীয়ভাবে মুসা তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
এধরনের ধরপাকড়ের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। প্রতিবাদ জানিয়ে এক ব্যক্তি বলেছেন, সৌদি আরবে কোনো সংস্কারের কথা বললেই তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, বিদেশে কেউ তা বললে তাকে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করা হয়। সংস্কারের চিন্তা মানেই তার জন্যে কারাগার অপেক্ষা করছে। তাহলে আমরা সৌদি নাগরিকরা কি করব?
অনেকে সৌদি আরবে এধরনের ধরপাকড়কে অন্ধকার সময়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। গত সপ্তাহে অন্তত ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ আলেম সালমান আল-ওধা এবং আওয়াদ আল-কার্নি রয়েছেন। সাবেক সৌদি বাদশাহ ফাহদের পুত্র আব্দুল আজিজ আল-সৌদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এধরনের গ্রেফতারের লক্ষ্য হচ্ছে মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কণ্ঠরোধ করা। এ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক সামাহ হাদিদ বলেন, সৌদি আরবে বাকস্বাধীনতার অন্ধকার যুগ চলছে। ইসা আল-হামিদ এবং আব্দুলআজিজ আল-সুবাইলির মত ব্যক্তিরা বিবেকের বন্দী। সৌদি সরকারের উচিত তাদের অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেওয়া উচিত।
সামাহ হাদিদ বলেন, সৌদি আরবের বাকস্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধির স্বপক্ষের মানবাধিকার সম্প্রদায় ইতিমধ্যে স্বৈরশাসকের হাতে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সাম্প্রতিক ধরপাকড়ের মাধ্যমে দেশটির সকল নেতৃস্থানীয় মানবাধিকার কর্মীদের কারাগারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার মত উদ্ভট ও মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে।
চলতি মাসে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ বিচারক, আলেম, মানবাধিকার কর্মী ও সুশীল সমাজের অন্তত ৩০জনকে গ্রেফতার করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এধরনের ধরপাকড়কে পরিকল্পিত অভিযান হিসেবে উল্লেখ করেছে।