৩২ সপ্তাহ পর নাবালিকা পেল গর্ভপাতের অনুমতি
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ৩২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা এক নাবালিকাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আবেদনকারীর ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে, এই প্রথম ভ্রূণের এত পরিণত অবস্থায় গর্ভপাতের রায় দিল দেশটির শীর্ষ আদালত।
মুম্বাইয়ের ১৩ বছরের ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করেছিল তার বাবার বন্ধু। আতঙ্কে গোটা বিষয়টি পরিবারের কাছে লুকিয়ে যায় কিশোরী। মেয়েটি হঠাৎ মোটা হয়ে যাচ্ছে দেখে আগস্ট মাসে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান বাবা-মা। তাদের মনে হয়েছিল, মেয়ের হয়তো থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এরপর সোনোগ্রাফি করাতে গিয়ে ধরা পড়ে, কিশোরী ২৭ সপ্তাহের গর্ভবতী।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩(২)বি ধারা অনুযায়ী ভ্রূণের বয়স ২০ সপ্তাহ হয়ে গেলে আর গর্ভপাত করানো যায় না। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কিশোরীর পরিবার।
এরপর থানা-পুলিশ করতে গিয়েও বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে যায়। বাইকুল্লার একটি হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মেয়েটিকে। মুম্বাইয়ে টানা বৃষ্টি-বন্যায় মেডিক্যাল রিপোর্ট তৈরিতে দেরি হয়ে যায়। বেশ কিছু ছুটি পড়ে যাওয়ায় আরও পিছিয়ে যায় শুনানির দিন। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে মুম্বাইয়ের জে জে হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড সব দিক বিচার করে গর্ভপাতের অনুমতি দেয়। কিন্তু তত দিনে ৩২ সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে ভ্রূণের।
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, অবিলম্বে গর্ভপাতের প্রক্রিয়া শেষ করা হোক। সম্ভব হলে, শুক্রবারই। অন্য দুই বিচারপতি অমিতাভ রায় ও এ এম খান্ডিলকর বলেন, আবেদনকারীর বয়স বিচার করে এবং যৌন হেনস্থার দরুন সে যে রকম মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সে কথা ভেবে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়াই যথার্থ মনে করে আদালত।
আবেদনকারীর আইনজীবী জানান, আজ বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দিয়েছে আদালত। শুক্রবার হয়তো গর্ভপাত করানো হবে। এই সন্তানের জন্ম দিলে মেয়েটি যে মানসিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, তা ভয়ঙ্কর। তার গর্ভপাতের ইচ্ছেকেই তাই সমর্থন জানিয়েছে আদালত।
সম্প্রতি চণ্ডীগড়ের ৩২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা এক কিশোরীর গর্ভপাতের আর্জি খারিজ করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। দশ বছরের মেয়েটির শারীরিক অবস্থা বিচার করে সুপ্রিম কোর্ট সেবার জানিয়েছিল, গর্ভপাত ওই নাবালিকা ও ভ্রূণ, দুইজনের পক্ষেই বিপজ্জনক। সম্প্রতি সে সন্তানের জন্ম দিয়েছে।
আদালতের এ দিনের রায়ে খুশি চিকিৎসকদের একাংশ। যদিও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ বলেন, ‘৩২ সপ্তাহ খুবই দেরি হয়ে গিয়েছে। আট মাসের ভ্রূণ পরিপূর্ণ। আমি হলে হয়তো অনুমতি দিতে পারতাম না। বিদেশেও ২৪ সপ্তাহের পরে অনুমতি দেওয়া হয় না। এক্ষেত্রে মায়েরও ঝুঁকি থাকে। মা তো নিজেই শিশু।’
ধর্ষণে অভিযুক্ত ২৩ বছর বয়সি যুবক মেয়েটির বাবার ব্যবসার অংশীদার ছিল। তাদেরই বাড়িতে থাকত। মেডিক্যাল রিপোর্টে সন্দেহ করা হয়েছে, মেয়েটিকে বহুবার ধর্ষণ করেছিল ওই যুবক। আপাতত মুম্বাই পুলিশের হেফাজতে রয়েছে সে।