চিত্রনায়িকা পপির অজানা অধ্যায়
---
সাদিকা পারভিন পপি বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও মডেল। যিনি পপি নামে পরিচিত, তিনি ১৯৯৭ সালে মনতাজুর রহমান আকবরের কুলি ছায়াছবিতে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে চলচ্চিত্রে আবির্ভূত হন। এ পর্যন্ত তিনি মেঘের কোলে রোদ, কি যাদু করিলা, গঙ্গাযাত্রা ছায়াছবিতে অভিনয়ের করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুস্কাররে ভূষিত হয়েছেন।
জীবনের শুরু যেখানে:
পপি ১৯৭৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কাটে খুলনায় দাদাবাড়িতে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে পপি বড়। পড়াশুনা করেছেন খুলনার মুন্নুজান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে।
অভিনয় জীবন:
মডেলিং থেকে চলচ্চিত্রে আসেন পপি। লাক্স আনন্দ বিচিত্রার সুন্দরী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরিচিতি লাভ করেন পপি। ১৯৯৭ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত আমার ঘর আমার বেহেশত ছায়াছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখেন পপি। কিন্তু তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র কুলি। মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত এই চলচিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন ওমর সানি। এরপর শাকিল খানের বিপরীতে বেশ কিছু রোমান্টিক মুভিতে অভিনয় করে পপি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে খোলামেলা পোশাক পড়ে আলোচিত সমালচিত হন পপি। এরপর রুবেলের সাথে জুটি বেঁধে অশ্লীল চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক ভাবে সমালোচিত হন। বিয়ে সংক্রান্ত নানা রকম সমস্যার কারণে শাকিল খানের পাশাপাশি রুবেলের সাথেও জুটি ভেঙে যায় পপির। এরপর থেকে পপি চেষ্টা করতেন নারী নির্ভর গল্পের চলচ্চিত্রে কাজ করার। মান্না প্রযোজিত লাল বাদশা ছায়াছবি ব্যবসা সফল হয় ও তার অভিনয় জীবনে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। ২০০৩ সালে অভিনয় করেন কালাম কায়সার পরিচালিত কারাগার ছায়াছবিতে। এতে এক টোকাই চরিত্রে অভিনয় করে প্রথম বারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৬ সালে কথাসাহিত্যিক আসকার ইবনে শাইখ রচিত গল্প অবলম্বনে স্যাটেলাইট চ্যানেল এনটিভির প্রথম প্রযোজিত ছায়াছবি বিদ্রোহী পদ্মায় তার অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। বিদ্রোহী পদ্মা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে পপি অতীতের অশ্লীল ইমেজ থেকে বেরিয়ে আসে। এরপর থেকে বেশ কিছু সুস্থধারার চলচ্চিত্রে কাজ করে। ২০০৬ সালে আরও মুক্তি পায় ফেরদৌসের বিপরীতে সামিয়া জামান পরিচালিত রানীকুঠির বাকী ইতিহাস। ২০০৮ সালে নারগিস আক্তার পরিচালিত এইডস বিষয়ক সচেতনতামূলক ছায়াছবি মেঘের কোলে রোদ ও চন্দন চৌধুরী পরিচালিত কি যাদু করিলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। মেঘের কোলে রোদ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি অর্জন করেন দ্বিতীয় বারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়া কি যাদু করিলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য অর্জন করেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে বাচসাস পুরস্কার। পরের বছর সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড পরিচালিত গঙ্গাযাত্রা ছায়াছবিতে ধুঙ্গরের চরিত্রে অভিনয় করেন। এ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি তৃতীয় বারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।এছাড়াও পান টানা দ্বিতীয়বারের মত বাচসাস পুরস্কার।
২০১২ সালে মুক্তি পায় ইমনের বিপরীতে জি সরকার পরিচালিত গার্মেন্টস কন্যা। বড় বাজেটের এই ছায়াছবিটি ব্যবসাসফল হয়। দুই বছর বিরতির পর ২০১৪ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত চার অক্ষরের ভালোবাসা। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন নিরব। ২০১৫ সালে আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত শেষ চলচ্চিত্র দুই বেয়াইয়ের কীর্তিতে অভিনয় করেন। ২০১৬ সালে অভিনয় করেন নরেন্দ্রনাথ মিত্র রচিত গল্প রস অবলম্বনে নারগিস আক্তার নির্মিত পৌষ মাসের পিরীত-এ। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন টনি ডায়েস। এছাড়া অভিনয় করছেন নাজমুল হাসানের দুই নয়ন ছায়ছবিতে।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি টেলিভিশনের নাটকে ও টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন। কাজ করেছেন মেজবাহ শিকদার পরিচালিত গোধূলির দেখা আলো নাটকে। ২০১৩ সালের ঈদে বাংলাভিশনের জন্য নির্মিত আমি ভালোবাসিনি টেলিফিল্মে অভিনয় করেন। টেলিফিল্মটি পরিচালনা করেছেন হিমেল আশরাফ এবং তার বিপরীতে ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। ২০১৪ সালে রেজানুর রহমানের নির্দেশনায় নোটবুক টেলিফিল্মে একজন বিবাহিত নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া অভিনয় করেছেন বি ইউ শুভ্র পরিচালিত নবনীতা তোমার জন্য ও নীল কষ্ট খণ্ড ধারাবাহিকে এবং প্রহর ও পলাশপুরের মেহেরজান টেলিফিল্মে। ২০১৫ সালের ঈদুল আযহা উপলক্ষে একুশে টেলিভিশনের জন্য নির্মিত এক্সপ্রেশন অব লাভ টেলিফিল্মে অভিনয় করছেন।
মডেলিং:
২০১৫ সালের শেষের দিকে ১ বছরের চুক্তিতে রোমানিয়া বিস্কুটের ব্রান্ড এম্বাসেডর হন। এ সময় তাকে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের নির্দেশনায় রোমানিয়া বিস্কুটের বিজ্ঞাপনে দেখা যায়।