প্রভুর প্রেমময় স্মরণে ইতিকাফ
---
মুফতি শাহেদ রহমানি : রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া। অর্থাৎ পুরো মহল্লার কেউ ইতিকাফ না করলে সবাই গুনাহগার হবে।
আর একজনও যদি আদায় করে, তাহলে সবাই রেহাই পাবে। এই ইতিকাফের জন্য রমজানের ২০ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে। আর ঈদের চাঁদ উদিত হলে ইতিকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারবে। তবে ঈদের নামাজ আদায় করে বের হওয়া উত্তম। কেননা এতে ঈদের রাতে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ইবাদত করা যায়।
ইতিকাফের বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। ইতিকাফকারী এক নামাজের পর অন্য নামাজের অপেক্ষায় থাকে। ইতিকাফকারী শবেকদরের তালাশে থাকে। ইতিকাফের ফলে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হয়। আল্লাহর জন্য মস্তকাবনত করার প্রকৃত চিত্র ফুটে ওঠে। ইবাদতের বিবিধ প্রতিফলন ঘটে। ইতিকাফ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদতের সীমানায় বেঁধে নেয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় ব্যাকুল হয়ে পড়ে।
মসজিদে ইতিকাফের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়ার কারণে অন্তরের কঠোরতা দূর হয়। মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার কারণে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসায় ছেদ পড়ে, আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভব হয়। মসজিদে ইতিকাফ করার কারণে ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকে, ফলে ইতিকাফকারী ব্যক্তির আত্মা নিম্নাবস্থার নাগপাশ কাটিয়ে ফেরেশতাদের স্তরের দিকে ধাবিত হয়। এ ছাড়া ইতিকাফের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে। বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াতের সুযোগ হয়। ঐকান্তিকভাবে তওবা করার সুযোগ লাভ হয়। তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া যায়। সময়কে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়।
রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফের জন্য ২০ রমজান সূর্য ডুবে যাওয়ার আগে অবশ্যই ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে। (মাসাইলে আরকান : ২৩১)
মাগরিবের পরও যদি কেউ প্রবেশ করে, তাহলে সুন্নাত ইতিকাফ হবে না, তার ইতিকাফ নফল হিসেবে গণ্য হবে। (ইমদাদুল ফাতাওয়া)
এই ইতিকাফের শেষ সময় হলো ঈদের চাঁদ ওঠার দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তাই ২৯ রমজান বা ৩০ রমজান সূর্যাস্তের আগে যদি চাঁদ দেখা যায়, তবুও সূর্য ডুবে যাওয়ার আগে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। সূর্য ডুবে যাওয়ার পর মসজিদ থেকে বের হতে পারবে। (ফাতাওয়া শামি : ২/১৩৭)
ইতিকাফকারীর জন্য প্রাকৃতিক ও শরিয়ত সমর্থিত প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ। তাই প্রস্রাব-পায়খানা, ফরজ গোসল, খাবার পৌঁছে দেওয়ার লোক না থাকলে খাবার নিয়ে আসার জন্য, ইতিকাফরত মসজিদে যদি জুমার ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে জুমার নামাজ আদায় করার জন্য অন্য মসজিদে যাওয়া জায়েজ। (ফাতাওয়া শামি : ২/১৩২)
প্রাকৃতিক ও শরিয়ত সমর্থিত প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয়ে যদি প্রয়োজন শেষে আধা মিনিটও দেরি করা হয়, তাহলে এতেও ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। (তহতবি : ৫৮৫; হিন্দিয়া : ১/২১২)
বাথরুম যদি মসজিদের অনেক দূরে থাকে, তাহলে প্রস্রাব-পায়খানার জন্য সেখানে যাওয়াও বৈধ। (ফাতাওয়া শামি : ২/১৩২)
ফরজ গোসল ছাড়া অন্য যেকোনো গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়া শামি : ২/১৩২)
এ ক্ষেত্রে বড় পাত্রের ব্যবস্থা করে মসজিদের ভেতর এমনভাবে গোসল করা যায়, যাতে গোসলের পানি মসজিদে না পড়ে কিংবা কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে নেবে।
জানাজা, রোগীর সেবা ইত্যাদির জন্য মসজিদ থেকে বের হলেও ইতিকাফ ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়া শামি : ২/২১৩)
লেখক : সিইও, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিকস বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।