বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’র পূর্ণ বিবরণ (ভিডিও)
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বিএনপি মনে করে বাংলাদেশের জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল আজ সে রাষ্ট্রের মালিকানা তাদের হাতে নেই। তাই দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায় বিএনপি। বিএনপি এমন এক উদার গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাস করে যেখানে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত হবে। যত সংখ্যালঘিষ্ঠই হউক না কেন, কোন মত ও বিশ্বাসকে অমর্যাদা না করার নীতিতে বিএনপি বিশ্বাস করে। আমরা ‘ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে’ বিশ্বাসী নই। তিনি একটি পাঁচতারকা হোটেলে ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছেন। সেখানে তিনি তুলে ধরেছেন বিভিন্ন প্রসঙ্গ। তার এই ভিশন ২০৩০ নিয়ে ব্যাপক কৌতুহল ছিল জনগণের মধ্যে। সরকারি দলেও আগ্রহ ছিল।
তিনি ভিশন ২০৩০ সম্পর্কে বলেছেন, ১৯ মার্চ, ২০১৬ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কাউন্সিল অধিবেশনে আমি যে সভাপতির ভাষণ দিয়েছিলাম-তাতে বিএনপির ভিশন টুয়েন্টি-থার্টি এর একটি সংক্ষিপ্ত রূপ-রেখা তুলে ধরেছিলাম। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশেষজ্ঞ ও দলীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এর একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ আমরা প্রস্তুত করেছি। আপনাদের মতামত ও পরামর্শ সাপেক্ষে এটিকে আরও পরিশীলিত করার সুযোগ রয়েছে। আপনাদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় এই সব লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার অর্থ্যাৎ একটি যথার্থই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে আমাদের এই ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়ন করা হবে ইনশা-আল্লাহ।
তিনি বলেন, সকল জনগণের বৃহত্তর সম্মিলনের মাধ্যমে ‘ইনক্লুসিভ সোসাইটি’ গড়ে তোলার মহৎ লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়াই বিএনপি’র নীতি। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। এজন্য নতুন এক সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে বিএনপি সচেষ্ট হবে।
তিনি বলেন, বিগত দিনগুলোতে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। এ কারণেই ব্যক্তির বিশ্বাস-অবিশ্বাস এবং দলীয় আনুগত্যকে বিবেচনায় না নিয়ে কেবলমাত্র সততা, দক্ষতা, মেধা, যোগ্যতা, দেশ-প্রেম ও বিচার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের প্রশাসন-যন্ত্র, পুলিশ এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকারিতা নিশ্চিত করবে বিএনপি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে যারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ‘ভিশন-২০৩০’ (ভিশন টুয়েন্টি-থার্টি) উপস্থাপন অনুষ্ঠানে শত ব্যস্ততার মধ্যেও যোগ দিয়েছেন তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজ শুভ বৌদ্ধ পূর্ণিমা। এই শুভ দিনে আমি দেশের বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী সকল নারী-পুরুষ ও শিশুকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। যেকোন দেশের জনগণ বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ছাড়া এগুতে পারে না। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ স্বপ্ন দেখে একটি সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের। পরিকল্পনা দ্বারা জাতি পায় কর্মস্পৃহা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রচনা করতে পারে একটি সুখ ও শান্তির নীড়। রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হ’ল জনগণের আশা-আকাঙ্খাকে ধারণ করে ভবিষ্যতের দিনগুলোতে জাতিকে উন্নত সোপানের পথে পরিচালিত করা। এ পথ বাধা-বিঘœ মুক্ত নয়। এই বাস্তবতা উপলদ্ধি করেও উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ১৯ মার্চ, ২০১৬ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কাউন্সিল অধিবেশনে আমি যে সভাপতির ভাষণ দিয়েছিলাম- তাতে বিএনপির ভিশন টুয়েন্টি-থার্টি এর একটি সংক্ষিপ্ত রুপ-রেখা তুলে ধরেছিলাম। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশেষজ্ঞ ও দলীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এর একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ আমরা প্রস্তুত করেছি। আপনাদের মতামত ও পরামর্শ সাপেক্ষে এটিকে আরও পরিশীলিত করার সুযোগ রয়েছে। আপনাদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় এই সব লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার অর্থ্যাৎ একটি যথার্থই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে আমাদের এই ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়ন করা হবে ইনশা-আল্লাহ। মহান সৃষ্টিকর্তার অপরিসীম দয়া ও ইচ্ছায় এই ভিশন বাস্তবায়ন সম্ভব হলে আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশ হয়ে উঠবে সুখী, সমৃদ্ধশালী, শোষণ ও নিপীড়ণমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও কল্যাণমূলক আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র। এমন একটি রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে আমরা গর্ব বোধ করব। বিএনপি বিশ্বাস করে জনগণই হবে সকল উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। যে সব বাধা জনগণের মেধা, শ্রম, উদ্যোগ এবং উৎসাহকে দমিয়ে দেয় সেগুলোকে দূর করে বিএনপি বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে ভিশন- ২০৩০ প্রণয়ন করেছে। আমাদের ভিশন-২০৩০ আপনাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আমি এখন এর সার-সংক্ষেপ আপনাদের নিকট উপস্থাপন করছি।
গণতন্ত্র প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া সুশাসন, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি, নৈতিকতার শক্তি পুনরুদ্ধার, পরিসেবা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা, সন্ত্রাসবাদ, অর্থনীতি, গবেষণা ও উন্নয়ন, জনমিতিক লভ্যাংশ , শিক্ষা ও মানব সম্পদ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, বিদেশে কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ, মিডিয়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, কৃষি ও কৃষক, শ্রমিক কল্যাণ, নগরায়ণ ও আবাসন, নিরাপদ খাদ্য ও ঔষধ, স্বাস্থ্যসেবা, যুব, নারী ও শিশু , জলবায়ু পরিবর্তন, পানি সম্পদ, নীল অর্থনীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ , বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিল্প , যোগাযোগ (সড়ক, রেল ও নৌ-পথ), পর্যটন, সামাজিক ব্যাধির সমস্যা, ভূমিকম্প , পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অনগ্রসর অঞ্চল, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিষয়ে তিনি তার বক্তৃতায় এই সব বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। এই সব বিষয় তিনি বক্তব্য তুলে ধরে আশা প্রকাশ করেছেন, আমরা যে ভিশন উপস্থাপন করলাম তা অর্জন কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। আমরা লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছি। এই দেশটাকে উন্নত ও মর্যাদাবান দেশে পরিণত করা আমাদের সকলের পবিত্র দায়িত্ব। আমরা আশা করি, এই ভিশন বাস্তবায়নে আমরা দেশবাসীর সক্রিয় সমর্থনের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানসমূহেরও সহযোগিতা পাবো। দেশের স্বাধীনতা অর্জন, গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং আমাদের আপোষহীন ও সংগ্রামী ভূমিকা বিবেচনা করে দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিক এই ভিশন বাস্তবায়নে আমাদের সক্রিয় সমর্থন জানাবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
গণতন্ত্র প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেছেন, বিএনপি মনে করে বাংলাদেশের জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল আজ সে রাষ্ট্রের মালিকানা তাদের হাতে নেই। তাই দেশের জনগনের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায় বিএনপি। বিএনপি এমন এক উদার গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাস করে যেখানে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত হবে। যত সংখ্যালঘিষ্ঠই হউক না কেন, কোন মত ও বিশ্বাসকে অমর্যাদা না করার নীতিতে বিএনপি বিশ্বাস করে। আমরা ‘ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে’ বিশ্বাসী নই। জনগণের ক্ষমতাকে কেবল নির্বাচনের দিন বা ভোট দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়না বিএনপি। নিত্যদিনের জন-আকাক্সক্ষাকে মর্যাদা দিয়ে তাদেরকে স¤পৃক্ত করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করবো আমরা। সুধি সমাজ, গণমাধ্যম, জনমত জরিপ, জনগণের দৈনন্দিন চাওয়া-পাওয়া, বিশেষজ্ঞ মতামত ও অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ পরিচালনা করা বিএনপি’র লক্ষ্য। কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং ‘গণতন্ত্রের চাইতে উন্নয়ন শ্রেয়’এ অজুহাতে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি প্রতিহত করবে। বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোয় প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপর ন্যস্ত। এরূপ ব্যবস্থা সংসদীয় সরকার পদ্ধতির স্বীকৃত রীতির পরিপন্থী। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় দেশবাসী গভীরভাবে উপলব্ধি করছে যে, প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। বিদ্যমান অবস্থার অবসানকল্পে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে। সংবিধানের এক-কেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুন্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে পরিক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোট ব্যবস্থা বাতিল, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, সংসদ বহাল রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান প্রবর্তন, সংবিধানের কিছু বিষয় সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ এবং সংবিধানের কতিপয় ধারা-উপধারা সংশোধনের অযোগ্য করার বিধান প্রবর্তন, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের উপর ন্যস্তকরণের বিধানসহ কয়েকটি অগণতান্ত্রিক বিধান প্রণয়ন করেছে। বিএনপি এসব বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক বিধানাবলী পর্যালোচনা ও পুন:পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার করবে। বিএনপি সংবিধানে ‘‘গণ-ভোট’’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃস্থাপন করবে। জাতীয় সংসদকে সকল জাতীয় কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে। জাতীয় স্বার্থ স¤পর্কিত বিষয়ে বিরোধী দলসমূহের সাথে আলোচনা করা হবে। পাবলিক একাউন্টস কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিংস কমিটির সভাপতিত্ব বিরোধী দলের সদস্যদের উপর অর্পণ করা হবে। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে জাতিকে পৌঁছাতে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। এজন্য সুনীতি, সুশাসন এবং সু-সরকারের (৩এ) সমন্বয় ঘটাবে বিএনপি।
জাতি গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটাতে চায়। সকল জনগণের বৃহত্তর সম্মিলনের মাধ্যমে ‘ইনক্লুসিভ সোসাইটি’ গড়ে তোলার মহৎ লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়াই বিএনপি’র নীতি। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। এজন্য নতুন এক সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে বিএনপি সচেষ্ট হবে।
সুশাসন বিষয়ে তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো স্বার্থপরতা ও দলীয়তার কালিমা মুক্ত করে এগুলোর দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য আইনি ও প্রক্রিয়াগত পদক্ষেপ নেবে বিএনপি। বিগত দিনগুলোতে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। এ কারণেই ব্যক্তির বিশ্বাস-অবিশ্বাস এবং দলীয় আনুগত্যকে বিবেচনায় না নিয়ে কেবলমাত্র সততা, দক্ষতা, মেধা, যোগ্যতা, দেশ-প্রেম ও বিচার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের প্রশাসন-যন্ত্র, পুলিশ এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকারিতা নিশ্চিত করবে বিএনপি। প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা, সততা, মেধার উৎকর্ষ এবং সৃজনশীলতাকে বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করা হবে। দলীয় ও সকল প্রকার আইনবহির্ভূত হস্তক্ষেপের অবসান ঘটিয়ে বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর আইনানুগভাবে কতর্ব্য পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। বিএনপি দুর্নীতির সাথে কোন আপস করবে না। সমাজের সর্বস্তরে দুষ্টক্ষতের মত ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির রাশ টেনে ধরার জন্য পদ্ধতিগত ও আইনের সংস্কারের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ এর অফিস কার্য্যকর করা হবে। দেশে আশংকাজনকভাবে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। সে লক্ষ্যে জনপ্রশাসন, বিচার, পুলিশ ও কারাগার এ চার প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছ, দক্ষ, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। বিএনপি মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদায় বিশ্বাসী; আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। আইনের শাসনের নামে কোন প্রকার কালা-কানুনের শাসন গ্রহণযোগ্য হবে না। সকল প্রকার কালা-কানুন বাতিল করা হবে। সকল প্রকার নিষ্ঠুর আচরণ থেকে মানুষকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম, খুন এবং অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বাতিল করা হবে। মানবাধিকার স¤পর্কিত জাতিসংঘের সর্বজনীন ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে। দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নীতিবোধ, দেশপ্রেম, বিচার-বোধ ও সুনামের কঠোর মানদ-ে যাচাই করে সকল আদালতের বিচারক নিয়োগ করা হবে। যোগ্যতা, মেধা ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধানের আলোকে বিচারপতি নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদন্ড সম্বলিত আইন প্রণয়ন করে বাছাই কমিটি ও সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। নিয়োগের জন্য বাছাইকৃত/সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য ও সম্পদ বিবরণী জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করে জনগণের জন্য ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা হবে। অধস্তন আদালতকে নির্বাহী বিভাগের আওতামুক্ত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় স্থাপন করা হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে মামলার জট কমিয়ে আনা হবে। নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, দ্রুত ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে সমাজে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা সম্মানীয়, নীতিবান, যোগ্য ও আদর্শ মানুষদের দিয়ে পাইলট ভিত্তিতে ‘জুরি’ ব্যবস্থার পুনঃ প্রবর্তন করা হবে। আদালতে মামলার বোঝা কমানো এবং স্থানীয় বিচার ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গ্রাম-আদালতকে উপযুক্ত সংস্কারের মাধ্যমে কার্যকর আদালত হিসাবে রূপান্তর করা হবে। বর্তমানে বিদ্যমান ইউনিয়ন কাউন্সিল ব্যবস্থায় গ্রাম-আদালতের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী অনানুষ্ঠানিক সালিশী আদালত পুনঃপ্রবর্তন করা যায় কিনা তা’ পরীক্ষা করে দেখা হবে। বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা হবে। বর্তমানে থানায় গেলে অনেক সময় পুলিশ মামলা নেয় না। এটা ডিনায়েল অব জাস্টিস। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য দেশব্যাপী থানাগুলোতে অন-লাইন পদ্ধতি ও মোবাইল টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযোগ দায়েরের সুযোগ সৃষ্টি করে ফৌজদারী বিচার প্রার্থীদের আইনের নিরাপত্তা পাওয়ার সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। পুলিশ বাহিনীকে একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। জনগণের সেবক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পুলিশের মোটিভেশন, ট্রেইনিং ও নৈতিক উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সিআরপিসি, পিআরবি, পুলিশ আইন এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি অনুযায়ী পুলিশের উপর বিচার বিভাগীয় তদারকি নিশ্চিত করে জবাবদিহি ও কল্যাণমূলক জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সঙ্গতি রেখে পুলিশ বাহিনীকে দক্ষতাসম্পন্ন যুগোপযোগী সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। জনগণের জান-মাল ও সম্ভ্রম রক্ষা এবং সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরপেক্ষভাবে পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত একটি চৌকষ, দক্ষ, নিরপেক্ষ, জনকল্যাণমুখী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর অনাকাঙ্খিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। পুলিশের কনস্টবল/ট্রাফিক পুলিশ এবং এএসআই পর্যন্ত নি¤œপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে একটানা ৮ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা হবে না। ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য ঝুঁকিভাতা এবং ৮ ঘন্টার অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কর্মঘন্টা হারে যুক্তিসংগত ওভার-টাইম ভাতা প্রদান করা হবে। এএসআই থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত পুলিশের আবাসন সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। দ্রব্যমূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। একটি দক্ষ, স্বচ্ছ, গতিশীল, মেধাবী, জবাবদিহিমূলক যুগোপযোগী ও গণমুখী জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে। মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যথাযথ সংস্কার করা হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নারী ও প্রান্তিক নৃ-গোষ্ঠী কোটা ব্যতিরেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হবে। গতিশীল বিশ্বায়নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংবিধানের আলোকে একটি যথোপযুক্ত সিভিল সার্ভিস আইন প্রণয়ন করা হবে। সকল পর্যায়ে ই-গভার্ন্যান্স চালু করা হবে। জনপ্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশে বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রতিরক্ষা বিষয়ে বলেছেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অখন্ডতা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত, যুগোপযোগী এবং সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে। গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কের ভিত্তি ও বিন্যাস প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হবে। জাতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা হবে।
পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে বিএনপি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিএনপি অন্য কোন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং অন্য কোন রাষ্ট্রের জন্য নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করবে না। একইভাবে বিএনপি দৃঢ় অঙ্গীকার করছে যে অন্য কোন রাষ্ট্রও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করলে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বিএনপি বিশ্বাস করে, আমাদের সীমান্তের বাইরে বাংলাদেশের বন্ধু রয়েছে, কোন প্রভু নেই। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। মুসলিম উম্মাহ ও প্রতিবেশি দেশসমূহের সাথে বিশেষ স¤পর্ক গড়ে তোলা হবে।
নৈতিকতার শক্তি পুনরুদ্ধার বিষয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে নৈতিক মূল্যবোধের ভয়াবহ অবক্ষয় ঘটেছে। এর ফলে সমাজে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিএনপি গণমাধ্যম, একাডেমিক-কারিক্যুলাম, সঠিক ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা এবং ইতিবাচক সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রতিরোধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
পরিষেবা বিষয়ে বলেছেন, দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা, জনগণের প্রতি সংবেদনশীলতার অভাব, সামাজিক বৈষম্য, জবাবদিহিতার অভাব, জনসচেতনতার অভাব এবং সর্বোপরি পরিষেবা উৎপাদন ও বিতরণে জনগণের অংশগ্রহণ না থাকার ফলে পরিষেবাগুলোর সুফল জনগণ পায় না। বিদ্যুৎ সরবরাহ, পানীয় জলের সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাষন, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, পুলিশী সেবা, বিচারিক সেবা, স্বাস্থ্য সেবা, প্রশাসনিক সেবাসহ সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসমূহের সেবার মান ক্রমান্বয়ে উন্নত করা হবে।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, দারিদ্র্য নিরসন না হওয়া পর্যন্ত ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে সুবিধাবঞ্চিত হত-দরিদ্র মানুষদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করা হবে, যাতে করে একটি দরিদ্র দুঃস্থ মানুষও নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে না থাকে। মূল্যস্ফীতির নিরিখে এর মাথাপিছু পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে। অতিস্বল্প আয়ের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারী রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। সকল দুঃস্থ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা এবং অসহায় বয়স্কদের ভাতার পরিমাণ মূল্যস্ফীতির নিরিখে বৃদ্ধি করা হবে। এই বিশেষ ভাতা ব্যবস্থাকে দুর্নীতি ও ত্রুটিমুক্ত করা হবে। বেসরকারি খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য বার্ধ্যক্যের দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে আইন প্রনয়ণের মাধ্যমে একটি “পেনশন ফান্ড” গঠন করা হবে। প্রবীণদের শেষ বয়সের দিনগুলোতে দুঃখ-কষ্ট লাঘবের জন্য তাদের প্রতি মাসে পেনশন দেওয়া হবে। বেসরকারি খাতে নিয়োজিত প্রত্যেকের আয়ের নির্দিষ্ট অংশ এই ফান্ডে জমার ভিত্তিতে পেনশন ফান্ডটি গড়ে তোলা হবে এবং এর জন্য ন্যায্য হারে মুনাফা প্রদান করা হবে। এ ফান্ডের অর্থ উন্নয়ন অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য বিনিয়োগ করা যাবে। বাংলাদেশের দারিদ্র্য-পীড়িত, দুঃস্থ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং অবকাঠামোগত সুযোগ বঞ্চিত এলাকাগুলোর হত-দরিদ্র মানুষগুলোকে স্বল্পমেয়াদী বৈষয়িক সাহায্য দিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয়া হবে। মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে এসব এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভৌত অবকাঠামোগত সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে যাতে তাদেরকে ভবিষ্যতে খয়রাতি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল থাকতে না হয়। বার্ধক্য, প্রতিবন্ধীত্ব এবং রোজগারকারী না থাকার ফলে যারা দুঃস্থ অবস্থায় আছেন তাদেরকে অব্যহতভাবে নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসা হবে। বাস-ট্রেনে-লঞ্চে বিনা ভাড়ায় প্রতিবন্ধীদের যাতায়াতের বিধান করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, বিএনপি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবে। বিএনপি সকল মুক্তিযোদ্ধাদের “রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক” হিসাবে ঘোষণা করবে।মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের নামে দুর্নীতির অবসান ঘটানো হবে। বিএনপি একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করবে। মূল্যস্ফীতির সাথে সঙ্গতি রেখে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বৃদ্ধি করা হবে এবং এই ভাতা ব্যবস্থাপনাকে দুর্নীতি ও ত্রুটিমুক্ত করা হবে। আগ্রহী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হবে এবং সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় যোগ্য ও দক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা, ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গনকবর চিহ্নিত করে সে সব স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়- দুঃখের বিষয়, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়না। বিএনপি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন করবে এবং তাদের যথাযথ মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করবে। মূল্যস্ফীতির নিরিখে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের বাস-ট্রেনে-লঞ্চে যাতায়াতে নির্ধারিত ভাড়ার অর্ধেক মূল্যে যাতায়াতের বিধান করা হবে।
সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে বলেছেন, বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ জাতির জন্য একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, আইনের শাসনের অভাব ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এদেশে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ বিস্তারে অন্যতম কারন। এই সমস্যার সমাধান না করতে পারলে জাতীয় উন্নয়নে সকল প্রয়াসই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। জাতি এক ভয়াবহ অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়বে। এই জন্য বিএনপি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ সকল রাষ্ট্রের জন্যই হুমকির কারণ। এ কারণে বিএনপি বাংলাদেশের ভূখন্ডের মধ্যে কোনরকম সন্ত্রাসবাদী তৎপরতাকে বরদাশত করবে না এবং সন্ত্রাসবাদীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং জনগণের অংশগ্রহণে এসব গনবিরোধী চক্র নির্মূল করা হবে। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকৌশল হিসাবে দারিদ্র্য দূরীকরণ, বেকার সমস্যার সমাধান, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি ও সম্প্রীতির মূল্যবোধ শক্তিশালী করা এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপকে উৎসাহিত করা হবে।
অর্থনীতি বিষয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বিএনপি দরিদ্রবান্ধব ও সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বাসী। প্রবৃদ্ধির হারকে বৃদ্ধি করে এবং এর সুফলের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে বিএনপি ধনী দরিদ্রের বৈষম্যের সমস্যাকে মোকাবেলা করবে। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চাই। এসময়ের মধ্যে মাথাপিছু আয় ৫০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হবে। এর জন্য বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ডবল ডিজিটে উন্নীত করার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশে ভূমির অর্থনৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করে শিল্প স্থাপন করার এবং ভূমির সীমিত ব্যবহার ভিত্তিক আধুনিক সেবাখাত যেমন- ব্যাংক, ইন্সিওরেন্স ও ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, আইটি ইন্ডাস্ট্রি, বিনোদন শিল্প, পর্যটন শিল্প, পরিবহন, টেলিকমিউনিকেশন, দূর-শিক্ষণ, এয়ার-হাব, ওয়াটার হাব, সিকিউরিটি সার্ভিস, বন্দর ও জাহাজ, টেলি-মেডিসিন ইত্যাদি সমৃদ্ধ করার উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করা হবে। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্ত্বশাসন, ক্ষমতা ও তদারকি নিবিড় ও শক্তিশালী করা হবে। শেয়ারমার্কেট এবং ব্যাংক লুটের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যতে যাতে কেউ এমন দুর্নীতি-অনাচার করতে না পারে সেই লক্ষ্যে সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ব¡ ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডে যোগ্য, সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হবে। ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। অর্থমন্ত্রনালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকসমূহ পরিচালনা ও তদারকির ভার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করা হবে।
গবেষণা ও উন্নয়ন বিষয়ে বলা হয়েছে, যে কোন আধুনিক ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন (Research & Development -R&D) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জ্উ’র জন্য প্রয়োজন দক্ষ প্রকৌশলি, শিল্পবিজ্ঞানী এবং গবেষক। জ্উ খাতে বিনিয়োগ অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। জ্উ খাতে ব্যক্তি-খাত সহায়ক বাজেট বরাদ্দ রাখা হবে। একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবী জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির জগতে প্রবেশ করেছে। বৈশ্বিক এই উন্ন্য়নের ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বিএনপি জ্উ খাতের বিকাশ ও পরিবর্ধন করবে।
জনমিতিক লভ্যাংশ বিষয়ে বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৩.২৫ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী কর্মক্ষম বয়সের মধ্যে পড়ে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর বিশাল তাৎপর্য রয়েছে। এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায় বাংলাদেশে প্রতি বছর ২২ লক্ষ মানুষ কর্ম-বাজারে প্রবেশ করে, এর মধ্যে মাত্র ১০ লক্ষ মানুষ কাজ পায়। বাকিরা থাকে বেকার। এ সব কর্মক্ষম বেকার মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। পেশাগত ও কারিগরি শিক্ষা, প্রকৌশল বিদ্যা, চিকিৎসা বিদ্যা, বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা, শত শত ধরনের ট্রেড ও পেশার জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচী মানবসম্পদকে বিকশিত করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন হবে গুণগতভাবে উন্নত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার। সকল ধরনের ট্রেড ও পেশার শিক্ষার মান উন্নতকরন এবং সনদায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলতে হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ঈঝজ কর্মসূচীর সিংহভাগ মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যয় করতে উৎসাহিত করা হবে। জ্ঞান, প্রযুক্তি, তথ্য প্রযুক্তি ও শিক্ষার মাধ্যমে মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন করা ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করাই হবে বিএনপি’র অন্যতম অগ্রাধিকার। ২০১৬ সনের জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী বিশ্বের ১৮৮ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯ তম। এতে বুঝা যায় বাংলাদেশ এখনও মানব উন্নয়নে অর্থবহ কার্যক্রম নিতে পারেনি। বিএনপি ২০৩০ সনের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মানব উন্নয়ন স্কেলে উন্নীত করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ে বলেছেন, শিক্ষাকে কর্মমুখী ও ব্যবহারিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করা হবে। বিএনপি শিক্ষার প্রতিটি স্তরে গুণগত মান নিশ্চিত করবে এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় অনগ্রসরতা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। শিক্ষা ধনিক শ্রেণীর একচেটিয়া অধিকার নয়। বিএনপি ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করবে। বিএনপি শিক্ষার সুযোগকে অনগ্রসর এলাকার জনসাধারণের দ্বার-প্রান্তে নিয়ে যাবে। এক দশকের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করা হবে। শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫% অর্থ ব্যয় করা হবে। উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষা হবে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে সমৃদ্ধ। গুরুত্ব দেওয়া হবে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার উপর। গড়ে তোলা হবে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য জাতীয় টিভিতে একটি পৃথক শিক্ষা চ্যানেল চালু করা হবে। বিশ্বের মেধা জগৎ ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে বাংলাদেশের একটি নতুন মাত্রা যোগের জন্য বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজীসহ অন্যান্য বিদেশী ভাষা শেখার জন্য অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। সরকারী উদ্যোগে আরও বিদেশী ভাষা ইন্সটিটিউট গড়ে তোলা হবে এবং বেসরকারি খাতকে ভাষা ইন্সটিটিউট গড়ে তুলতে উৎসাহ ও প্রণোদনা দিয়ে নিবিড় রেগুলেটরি ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে। বিদেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনের সুবিধার্থে মেধাবীদের বৃত্তি প্রদানের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হবে। মেয়েদের এবং ছেলেদের জন্য ¯œাতক ও সমপর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। ছেলে ও মেয়েদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে। বিএনপি’র শিক্ষানীতি হবে জীবনমুখী, ডিগ্রীমুখী নয়। আমাদের দেশে ব্যবস্থাপক, ব্যবসায়-প্রশাসক, কারিগরি ও অন্যান্য ধরনের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের মানবস¤পদের ঘাটতির ফলে বিপুল সংখ্যক বিদেশী আমাদের বিভিন্ন ব্যবসায় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত হয়েছে এবং হচ্ছে। এরা বাংলাদেশ থেকে নিজ নিজ দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রেরণ করায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য আমাদের দেশেই প্রয়োজনীয় দক্ষ মানবস¤পদ সৃষ্টি করতে হবে। অদক্ষ শ্রমিকদের দেশী ও বিদেশী চাহিদার নিরিখে ভোকেশনাল ও টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় ভাষাশিক্ষা দিয়ে কর্মসংস্থানমুখী দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে যাবতীয় প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সর্বপর্যায়ে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ লাভের ক্ষেত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জেন্ডার ও অর্থনৈতিক বাধাসমূহ দূর করা হবে। দৈহিক, মানসিক এবং আবেগগতভাবে প্রতিবন্ধীদের যথোপযুক্ত শিক্ষা অর্জনের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষা উপকরণসহ পর্যাপ্ত সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-সংসদের নির্বাচন নিশ্চিত করে ছাত্রদের মধ্য হতে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বিকাশের পথ সুগম করা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্যে দ্রব্য মূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে নিয়মিত বেতন ভাতাদি বৃদ্ধি করা হবে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হবে। তাদের কারিকুলামে পেশাভিত্তিক ও বৃত্তিমূলক বিভিন্ন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই সংস্কারের আওতায় ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও আইটি এবং ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। উল্লেখ্য যে, বিএনপি সর্বশেষ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকাকালীন কওমী মাদ্রাসার ‘দাওরায়ে হাদিস’ সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রীর সমমান ঘোষণা করেছিল।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে বলেছেন, তথ্য ও প্রযুক্তি খাত হবে বিএনপি’র বিশেষ অগ্রাধিকার খাত। বর্তমান সরকার ওঈঞ সেক্টরে উন্নয়নের বাগাড়ম্বর করলেও বাস্তব চিত্র সুখকর নয়। ওঞট এর এক তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে আইসিটি সেক্টরে ১৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৫ তম যা মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানেরও নিচে। বিএনপি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলায় সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে সেবাখাত-নির্ভর উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সংগতি রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতকে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতে রূপান্তর করা হবে। আউটসোর্সিং এবং সফটঅয়্যার খাতকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হবে এবং তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে বিদেশ হতে অর্জিত অর্থ দেশে আনয়নের ক্ষেত্রে সকল প্রকার অযৌক্তিক বাধা দূর করা হবে। ফ্রিল্যান্সার ও আউটসোর্সিং এর সাথে জড়িত সকলকে সুবিধা দেয়ার উদ্দেশ্যে স্বল্প চার্জে PayPal Payment সহ অন্যান্য Global Payment Gateway সুবিধা দেয়া হবে। প্রশাসন, বিচার বিভাগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, যোগাযোগ, কৃষি ও গবেষণাসহ যে সকল ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে সে সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তির পরিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এজন্য একটি সু¯পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করা হবে। তথ্য প্রযুক্তিতে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় পুরষ্কার প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। শ্রেষ্ঠ স্কুল, শ্রেষ্ঠ কলেজ ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সারের জন্য জাতীয় ওঈঞ এ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিদেশী বিনিয়োগ সহজসাধ্য করা হবে। ওঈঞ খাতে বিদেশী বিনিয়োগ এবং দেশি বিদেশী যৌথ উদ্যোগ নিশ্চিত করতে যথোপযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও নানামুখী প্রণোদনা প্রদান করা হবে। প্রতিভাবান যুব সম্প্রদায় ও আগ্রহী উদ্যোক্তাদের সফটঅয়্যার শিল্প ও আইটি সার্ভিস সেক্টরে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে। নবাগত উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী শক্তি যথাযথ ক্ষেত্রে প্রয়োগের লক্ষ্যে একটি পরামর্শক সংস্থা গড়ে তোলা হবে। সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে একাধিক সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে bandwidth এর capacity বৃদ্ধি করে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা হবে। মোবাইল কোম্পানীগুলোর মাধ্যমে সারা দেশে বিশেষ করে মফঃস্বলে উচ্চ গতির ৪এ কভারেজ নিশ্চিত করা হবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভবিষ্যতে ৪এ বা তার চেয়ে উচ্চ গতির ইন্টারনেট কভারেজ নিশ্চিত করা হবে। সফটঅয়্যার ও হার্ডঅয়্যার শিল্পে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেয়া হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মূল উপাদানগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে দেশে উৎপাদন উৎসাহিত করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত সকল প্রকার উপকরণ সামগ্রীর উপর শূন্য শুল্ক সুবিধা বজায় রাখা হবে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সফটঅয়্যার টেকনোলজি পার্ক, হাইটেক পার্ক, এডুকেশন পার্ক, কম্পিউটার ভিলেজ, আইটি ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠা করে জ্ঞান বিকাশ ও দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার সমর্থিত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। এ পর্যায়ে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিক্ষা চালু করা হবে। এ লক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। প্রত্যেক জেলায় একটি করে ‘স্মার্ট স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং এসব স্কুল অন্যান্য স্কুলের জন্য মডেল প্রযুক্তি প্রদর্শকের কাজ করবে। কম্পিউটার শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য প্রতি জেলায় একটি করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্থাপন করা হবে। ২০২০ সালের মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ প্রাথমিক স্তরে প্রশিক্ষিত শিক্ষক, হার্ড-অয়্যার, ল্যাবরেটরিসহ সব দিক থেকে উন্নততর আইটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও জনগণের সুবিধার্থে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ পাবলিক-প্লেসগুলোকে Free & Safe Internet Wi-Fi Zone এর আওতায় আনা হবে। বিএনপি জনগণের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে বলে তথ্য প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ক সকল আইনের অগণতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রনমূলক ধারাসমূহ সংশোধন করবে।
ক্রীড়া বিষয়ে তিনি বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে খেলাধুলার কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ যাতে একটি গ্রহণযোগ্য স্থান করে নিতে পারে সে লক্ষ্যে পরিকল্পিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। খেলাধুলায় আন্তর্জাতিক মান অর্জনের জন্য প্রতি জেলায় একটি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ক্রীড়া একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। সাউথ এশিয়ান গেমস, এশিয়ান গেমস, কমন ওয়েলথ গেমস, অলিম্পিক গেমস ইত্যাদিতে বাংলাদেশের সম্মানজনক স্থান অর্জনের জন্য দেশে একটি আধুনিক জাতীয় অলিম্পিক একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। ক্রীড়া ও খেলাধুলার উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষক, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ও ক্রীড়া সরঞ্জামাদি সংগ্রহের জন্য সরকারী ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হবে। ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রীড়া ও খেলাধুলার মান উন্নয়নকে তাদের কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটির (ঈঝজ) অন্তর্ভুক্ত করতে আরও উৎসাহিত করা হবে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীড়ার ক্ষেত্রে মূল্যায়নের ভিত্তিতে যাদেরকে প্রতিশ্রুতিবান বিবেচনা করা হবে তাদের একটি জাতীয় তালিকা প্রণয়ন করা হবে। এছাড়া সামাজিক প্রতিষ্ঠান, ক্লাব ও গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে ক্রীড়া ও খেলাধুলার ক্ষেত্রে ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ স্কিম চালু করা হবে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী ক্রীড়াবিদদের সম্মানজনক জাতীয় পুরষ্কার দেয়া হবে। প্রতিটি প্রশাসনিক ইউনিটে (উপজেলা, জেলা, বিভাগ) ক্রীড়া ও খেলাধুলার ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় পুরষ্কার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ক্রীড়াঙ্গন ও ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠাকল্পে দলীয় হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে।
সংস্কৃতি বিষয়ে তিনি বলেছেন, সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে জাতির মনন ও রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সংস্কৃতি চর্চার লক্ষ্য হবে দেশপ্রেম, মানবিক মূল্যবোধ, জাতির আত্ম-পরিচয় এবং নির্মল বিনোদনের জন্য পরিবেশ তৈরি করা। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অনৈতিক আকাশ-সংস্কৃতি ও অপ-সংস্কৃতির আগ্রাসন রোধ করা হবে। জাতীয় ঐতিহ্যের সংগে সংগতিপূর্ণ-সঙ্গীত, নৃত্য-কলা, নাটক, সাহিত্য চর্চা, চলচ্চিত্রসহ সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানকে সমৃদ্ধ করা হবে। জাতীয় ভাবধারার পরিপন্থী অপসংস্কৃতি চর্চাকে নিরুৎসাহিত করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুস্থ সংস্কৃতি ও বিনোদন চর্চার পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। জাতীয় সংস্কৃতির প্রধান প্রধান ক্ষেত্রে জাতীয় পদক প্রদানের রীতি আরও সম্প্রসারিত করা হবে।
বিদেশে কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ে বলেছেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ, ঝুঁকিমুক্ত অভিবাসন নিশ্চিতকরণ ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনা খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুচিন্তিুত ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বৈদেশিক শ্রমবাজারের চাহিদার নিরিখে বিদেশে নিয়োগ প্রাপ্তিতে ইচ্ছুক বাংলাদেশী শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদেশী ভাষাসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। অভিবাসন ব্যয় যুক্তিসংগত ও সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সমস্যাটির জটিলতা পরীক্ষা করে কার্যকর আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। প্রবাসীরা যাতে তাদের কষ্টার্জিত আয় বৈধ পথে বাংলাদেশে প্রেরণ করতে পারে সে জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক এক্সচেঞ্জ হাউস ও ব্যাংকের সংগে প্রণোদনা সুবিধাসহ রেমিট্যান্স প্রেরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের নানাবিধ সমস্যা বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিভিন্ন অধিকারের গুরুতর লংঘনের বিষয় দ্বিপাক্ষিক-চুক্তি বা সমঝোতা স্বারকের আলোকে সংশ্লিষ্ট সরকারের সাথে অর্থবহ আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধানের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলো যাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করে তা নিশ্চিত করা হবে। বিশ্বের যে সব দেশে ব্যাপক সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছে, ঐসব দূতাবাসে কনসুলার সেবা প্রদানের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত জনবল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। দূতাবাসসমূহে কর্মরত লেবার উইং এর জনবল যুক্তিসংগত হারে বৃদ্ধি করে সেবা সহজলভ্য করা হবে। জাতীয় উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হবে এবং তাদের মতামত ও পরামর্শের যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধাসহ বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের বিমান বন্দরে হয়রানি বন্ধ করা হবে। বিদেশ থেকে ফেরত আসা প্রবাসীদের যথাযথ তালিকা প্রস্তুত করে তাদের কল্যানে নানামুখী প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী এবং জাতীয় অর্থনীতিতে তাদের অবদান বিবেচনায় প্রবাসীদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জাতীয় নির্বাচনে ভোট প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশ পরিচালনায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
মিডিয়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপি বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনাকে সব সময় স্বাগত জানায়। সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং গঠনমূলক ও বস্তুনিষ্ঠ সমালোচকের নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে বিএনপি সর্বদা স্বচেষ্ট থাকবে। তথ্য প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করা হবে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য মুক্ত চিন্তা ও গণতান্ত্রিক চেতনার সাথে সংগতিপূর্ণ একটি নীতিমালা থাকা দরকার। বিএনপি সুপ্রিম কোর্টের একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট নাগরিক, আইটি বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ সাংবাদিক সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করবে। কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অন-লাইন মিডিয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। বিএনপি সৎ সাংবাদিকতার পরিবেশ পুনরুদ্ধার করবে এবং চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার নিশ্চিত করবে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রুজুকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। দেশ চলবে তৃণমূলের জনগণের ইচ্ছায় ও মতামতের ভিত্তিতে। ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদকে অধিকতর শক্তিশালী করা হবে যাতে এ সংস্থাগুলো উন্নয়ন কার্যক্রম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কার্যক্রমসহ জনগণের জন্য পরিষেবা প্রদানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যেখানে সমস্যা সেখানেই সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে। ‘স্থানীয় নেতৃত্বেই টেকসই সমাধান সম্ভব’ -এ নীতির ভিত্তিতে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে ক্ষমতায়িত করা হবে। ক্ষমতা ও উন্নয়নের ভরকেন্দ্র হবে গ্রামমুখী। স্থানীয় সরকারের অনুকূলে সরকারী বরাদ্দের অপ্রতুলতা এবং বৈষম্য নিরসনের জন্য জাতীয় বাজেটের একটি অংশ বরাদ্দ করা হবে। আইন দ্বারা গঠিত একটি স্বাধীন কমিশন সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে বরাদ্দকৃত অর্থ বণ্টনের ব্যবস্থা করবে। বর্তমানে রাজনৈতিক কারনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্বিচারে সাসপেন্ড/ বরখাস্ত/ অপসারণ করা হচ্ছে, যা অনৈতিক ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী। আদালত কর্তৃক দন্ডপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্বাহী আদেশবলে সাসপেন্ড/বরখাস্ত/অপসারণ করা হবে না।
কৃষি ও কৃষক বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, জনসংখ্যা বাড়ছে এবং কৃষি জমি কমছে। এটা বিবেচনায় নিয়ে উদ্ভাবনমূলক কৃষি-কৌশল গ্রহণ করা হবে। সমতল, পাহাড় ও হাওড়-বাওর এলাকার জন্য বিশেষ বিশেষ ফসল চাষের উপেযোগিতা বিবেচনায় রেখে সেই সব ফসল উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য সঠিক বাজারজাতকরণ নীতি প্রণয়ন করা হবে। সেচের পানির প্রাপ্যতা এবং জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য খাল-খনন ও নদীশাসন কার্যক্রম জোরদার ও সম্প্রসারণ করা হবে। কৃষক যাতে তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। উন্নত মানের বীজের দুষ্প্রাপ্যতা বাংলাদেশের কৃষকের একটি কঠিন সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানকল্পে প্রত্যেক উপজেলায় বীজ-বর্ধন ও প্রক্রিয়াকরণ খামার গড়ে তোলা হবে। এ থেকে কৃষি উৎপাদন ৮% থেকে ১০% বৃদ্ধি পাবে। রাষ্ট্রীয় বাজেটের একটি যৌক্তিক অংশ কৃষি গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা হবে। কৃষি নানা ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়ে। এই ঝুঁকি মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও শস্য বীমা, পশু বীমা, মৎস্য বীমা এবং পোল্ট্রি বীমা চালু করা হবে। গরীব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত কৃষকের কৃষি ঋণের সুদ মওকুফ করা হবে। হাঁস-মুরগী ও মৎস্য খামারের জন্য নিরাপদ ‘ফিড’ উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। বার্ড ফ্লু জাতীয় মড়ক থেকে হাঁস মুরগী রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। হাঁস-মুরগী, মৎস্য, পশুসম্পদ, কৃষিজাত ফসল এবং বন-সম্পদ উন্নয়নের জন্য সর্বাত্মক গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। কৃষি-পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পখাতকে প্রণোদনা দেয়া হবে। কৃষি উন্ন্য়নের প্রধান লক্ষ্য হবে খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা বিধান। সুষম ও নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথোপযুক্ত প্রণোদনার মাধ্যমে গোটা কৃষি খাতকে পুনর্বিন্যাস ও বিকশিত করা হবে। কৃষিতে অনিরাপদ ও ক্ষতিকর সার ও কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করা হবে। হাওর ও হাওর অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা উন্নয়নে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই প্রথম ১৯৭৭ সনের ২২শে ফেব্রুয়ারী হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেন। পরিকল্পিতভাবে কম জীবনকাল ফসলের চাষ, ভাসমান শাকসবজি আবাদ, মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলা, জেলেদের আকাল সময়ে সাবসিডি প্রদান, পরিকল্পিতভাবে হাঁস চাষ সহ হাওরের জীব ও প্রাণীকুলের সংরক্ষণের পরিকল্পিত বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
শ্রমিক কল্যাণ বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি শ্রমিক শ্রেণীর ট্রেড ইউনিয়ন ও যৌথ দরকষাকষি করার গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করবে। বাজারমূল্য ও মূল্যস্ফীতির সাথে সঙ্গতি রেখে সকল সেক্টরে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য প্রতি দুই বছর অন্তর রিভিউ ব্যবস্থা চালু করা হবে। যৌক্তিক শ্রমিক স্বাস্থ্য-সেবা নিশ্চিত করতে ব্যক্তিখাতের দায়িত্ব স¤পর্কে আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়ন করবে। এই আইন ও বিধি হবে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংগে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একই ধরনের ব্যবস্থা থাকবে রাষ্ট্রীয় খাতের জন্যও। গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ আবাসন ও যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
নগরায়ণ ও আবাসন বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশের দ্রুত বর্ধনশীল এবং নৈরাজ্যপূর্ণ নগরায়ণকে সুশৃঙ্খল করতে একটি জাতীয় মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। প্রশাসনিক ও অথনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ, জেলা ও উপজেলা শহরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে মহানগরীগুলোতে জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ হ্রাস করে নগরায়ণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা হবে। কৃষি জমি নষ্ট না করে পরিকল্পিত আবাসন যেমন- গুচ্ছ আবাসন, বহুতল আবাসন গড়ে তোলা হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টসহ নগর জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সমন্বিত কৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। বাসস্থান প্রত্যেক নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার। বিএনপি সীমিত আয়ের মানুষের জন্য একটি বাস্তবভিত্তিক বহুমুখী প্রকল্পের আওতায় সাশ্রয়ী মূল্যে পরিকল্পিত আবাসন সুবিধা প্রদানের প্রয়াস নিবে। অবৈধভাবে দখলকৃত ভুমি পুনরুদ্ধার করে তাতে বস্তিবাসী ও বাস্তু-ভিটাহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসিত করা হবে। এইভাবে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন নিশ্চিত করা হবে।
নিরাপদ খাদ্য ও ঔষধ বিষয়ে তার বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ভেজাল প্রতিরোধ, বিশেষ করে খাদ্যে ও ঔষধে ভেজাল রোধে আইনি ব্যবস্থার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে। একটি শক্তিশালী ও কার্যকর খাদ্য ও ঔষধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে।
স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’-এই হবে বিএনপির স্বাস্থ্য-নীতি। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার নিমিত্তে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য বীমা চালু করা হবে। বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এচ(General Practitioners) ব্যবস্থার প্রর্বতন করা হবে। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একজন চিকিৎসক নির্দিষ্ট থাকবেন। ফলে ডাক্তারদেরও কর্মসংস্থান হবে। গরীব মানুষের জন্য ৫০ ধরনের প্রয়োজনীয় ঔষধ বিনামূল্যে দেয়া হবে। একটি কার্যকর রেফারেল সিষ্টেম গড়ে তোলা হবে। ‘নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ শ্রেয়’ এই নীতির ভিত্তিতে বিএনপি সংক্রামক, অসংক্রামক ও নতুন উদ্ভুত রোগসমূহের বিস্তার প্রতিরোধ ও প্রতিকারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
জিডিপির ৫% অর্থ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হবে। উৎপাদনকারী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতার যুক্তিসংগত মুনাফা নিশ্চিত করে ঔষধের মূল্য যুক্তিসংগত হারে হ্রাস করা হবে। দেশে ঔষধ, ঔষধের মূল উপকরণ ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি উৎপাদন উৎসাহিত করা হবে। রাজধানী শহরে প্রাপ্ত সকল চিকিৎসা সুবিধা ক্রমান্বয়ে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত করে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা দেশের মফস্বল পর্যায়েও সহজলভ্য করে তোলা হবে। উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে আড়াই লক্ষ নতুন ডাক্তার এবং আনুপাতিক হারে নার্স ও টেকনিশিয়ানের প্রয়োজন হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাস্তব কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন হেল্থ সেন্টারে ল্যাব সুবিধাসহ অন্ততঃ দুইজন ডাক্তারের অবস্থান নিশ্চিত করে এ সেন্টারগুলোতে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে। প্রত্যেক ডাক্তারকে কমপক্ষে দুইবছর আবশ্যিকভাবে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা দিতে হবে। এই ডাক্তারদের মাধ্যমে কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হবে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে তাল রেখে চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চিকিৎসকদের মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ও দেশে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন এর সমন্বয় ও উন্নয়নে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতি গ্রহণ করা হবে। বিশিষ্ট চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জাতীয় এক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হবে। সংক্রামক ব্যাধি রোধ, মাতৃস্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন, প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, শিশু-মৃত্যুর হার হ্রাস ও শিশুদের অপুষ্টি রোধকল্পে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে। সকলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। মানিসক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং বয়োবৃদ্ধদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপকূলীয় এলাকা এবং চরাঞ্চলের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিকট চালু করা হবে। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের কষ্ট লাঘবের জন্য ‘HOSPICE-CARE’ স্থাপন করা হবে। জলা-উপজেলা পর্যায়ে উন্নত হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে বেসরকারী হাসপাতাল নির্মাণে উৎসাহ প্রদান করা হবে। সরকারী ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সেবার মান নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞসহ সমাজের সর্বস্তরের বিশিষ্ট নাগরিক সমন্বয়ে মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। বিএনপি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার পর্যায়ক্রমে শূন্য শতাংশে কমিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে। পরিবার কল্যাণ কর্মসূচিকে সফল করার জন্য বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত ও শিক্ষার আলোক বঞ্চিতসহ সমাজের প্রতিটি স্তরে পরিবার কল্যাণ কার্যক্রম কার্যকরভাবে সম্প্রসারিত করা হবে।
যুব, নারী ও শিশু বিষয়ে তিনি বলেছেন, যুব, নারী ও শিশুদের জীবন বিকাশের চাহিদার নিরিখে যথোপযুক্ত উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করা হবে। জাতীয় উন্নয়নে যুব ও নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে নারীর অবদানকে বিএনপি দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করে। দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বিএনপি সকল কর্মকা-ে নারী সমাজকে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত করবে। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সকল বাধা অপসারণ করা হবে। নারী নির্যাতন, যৌতুক প্রথা, এসিড নিক্ষেপ, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, নারী ও শিশু পাচাররোধে কঠোর কার্যকর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিশু-শ্রম রোধে কার্যকর বাস্তবানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। শিশু সন্তান রেখে নারীরা যাতে নিশ্চিন্তে কাজে মনোনিবেশ করতে পারে সেই লক্ষ্যে অধিক সংখ্যক Day Care Centre গড়ে তোলার জন্য সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ গ্রহণের পথে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের অধিকতর উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নে প্রয়োজনীয় সমর্থন, স্বল্প-সুদে ব্যাংক ঋণ এবং কর-ছাড় দেয়া হবে। বিএনপি বেকার যুবশক্তিকে উৎপাদনশীল কর্মকা-ে নিয়োগের জন্য দেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি এবং বিদেশে কর্মসংস্থানের চাহিদার নিরিখে যুবসমাজকে যথাযথভাবে দক্ষ ও সক্ষম করে তুলবে। এক বছর ব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানবজাতির অস্তিত্ব যেভাবে বিপন্ন হতে চলেছে, তার জন্য বাংলাদেশের মত দেশ দায়ী নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ভার শিল্পোন্নত বিশ্বকে নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিল্পায়িত বিশ্বকেই এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তুলতে বিশ্বজনমত গঠন ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে সক্রিয় ভূমিকা নেবে। জলবায়ূ পরিবর্তনের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। উপকূল এলাকাসহ সারাদেশে নিবিড় বনায়ন ও সুন্দরবনসহ অন্যান্য বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
পানি সম্পদ, নীল অর্থনীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন, সামাজিক ও পরিবেশগত কোন সমস্যা সৃষ্টি না করে সারা দেশে পানি সম্পদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উন্নততর পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ বিশেষ করে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির সংকট নিরসন কল্পে শহীদ জিয়ার খাল-খনন কর্মসূচী পুনরায় চালু করে শুকিয়ে যাওয়া বা পলিমাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়া খাল-বিল, নদী-নালা এবং হাজা-মজা পুকুর ও দীঘি পুনঃখনন করা হবে। জনসচেতনতার অভাবে নদী, খাল, বিল ও জলাধারের পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। কৃষি-কেমিক্যাল, শিল্প বর্জ্য ইত্যাদি জলাধারে ফেলা বন্ধে কঠোর রেগুলেটরি আইনের প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে। আমাদের ভূ-গর্ভস্থ পানি ও ভূ-উপরিস্থ পানির অনুপাত হচ্ছে ৭০:৩০। ভূ-উপরিস্থ পানির পরিমান বাড়ানোর জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। আমাদের নদীর সংখ্যা চার শতাধিক। এর মধ্যে ২৩০টি নদী মৃতপ্রায়। এ সব মৃতপ্রায় নদী খনন করে নৌ-চলাচলের উপযোগী করা হবে এবং শুষ্ক মৌসুমে এ গুলো জলাধার হিসাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, ধলেশ^রী, গড়াই, মধুমতি, করতোয়া ইত্যাদি খনন করে পানি সংরক্ষণ জলাধার সৃষ্টি করা হবে। ব-দ্বীপ ভূমি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ, উপকূলীয় সম্প্রসারণ নিশ্চিত এবং ভূমি পুনরুদ্ধার করার জন্য নদ-নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ অক্ষুন্ন রাখতে হবে। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে সময়োপযোগী নদী শাসন ও প্রতিরোধী কাঠামো নির্মাণ করা হবে। উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার, পুনর্বাসন ও শক্তিশালী করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশে আমরা পানির স্থান দখল করেছি, পানি তাই আমাদের স্থান দখল করে বন্যা ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করার জন্য কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা হবে। হাওড় এবং বন্যা প্রবণ এলাকাগুলোতে বন্যা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঢাকা বসবাসের জন্য বিশ্বের দ্বিতীয় নিকৃষ্টতম নগরীতে পরিণত হয়েছে। রাজধানী ঢাকার জনজীবনের স্বার্থে বুড়িগঙ্গা, বালু ও তুরাগসহ ঢাকার চারপাশের জলাভূমি দূষণমুক্ত করে এগুলোতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এতে পরিবেশ দূষণ হ্রাস ছাড়াও ভূ-পৃষ্ঠে পরিচ্ছন্ন পানি ও সুলভ নৌ-যোগাযোগ নিশ্চিত হবে। আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে বহমান আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বিএনপি আঞ্চলিক ও পার¯পরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে কার্যকর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগও গ্রহণ করা হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে তিনি বলেছেন, কাক্সিক্ষত ডবল ডিজিট প্রবৃদ্ধির চাহিদা পূরণের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ আনুমানিক ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্যোগ নেবে। এ লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে প্রাপ্ত সকলপ্রকার জ্বালানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলা হবে। দেশের বিদ্যমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট নিরসন এবং দীর্ঘ মেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি সমন্বিত জাতীয় জ্বালানি নীতি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। নিম্নতমমূল্য বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবেৎ জ্বালানির উৎস বহুমুখী করা হবে। সাশ্রয়ী ও যুক্তিসঙ্গত মূল্যে গুণগত মানস¤পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এনার্জি-এফিসিয়েন্ট বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। জ্বালানি-দক্ষ সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ও যানবাহন ব্যবহারে প্রণোদনা দেয়া হবে। অদক্ষ পুরানো বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ অতি জরুরী ভিত্তিতে আধুনিকায়ন এবং পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিদ্যুৎ সংকট স্থায়ীভাবে নিরসন এবং কার্বন নিঃস্বরণ হ্রাস করার লক্ষ্যে ছোট, মাঝারি ও বৃহদাকার পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি আহরণ বিশেষ করে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জিও-থারমাল, সমুদ্র তরঙ্গ, বায়োগ্যাস, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দামের সাথে সঙ্গতি রেখে অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করা হবে। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি উৎস বহুমুখী করা হবে। উপযুক্ত স্থানে ৫০ লক্ষ টন ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন নূতন রিফাইনকারী নির্মাণ করা হবে। দেশের স্থলভাগ এবং বঙ্গোপসাগরে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র, তেল ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে আঞ্চলিক পানি-ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে স্বল্প খরচে পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদন, আন্ত:দেশীয় বিতরণ সিষ্টেম উন্নয়ন ও আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে সীমাহীন দুর্নীতি করা হয়েছে এবং অনৈতিক দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ এর মুল্য বার বার বৃদ্ধি পেয়ে জনগণ দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। বিএনপি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করবে।Electricity and Energy Rapid Supply Increase Act. ২০১০ পুন:পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। সমুদ্রের নিঃশেষযোগ্য স¤পদ যেমন- গ্যাস, তেল ইত্যাদি বিষয়ে নিয়মিত ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করা হবে। জরিপের ভিত্তিতে এসব স¤পদ উত্তোলন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণে নির্ভরযোগ্য নীতি-কৌশল প্রণয়ন করা হবে। জ্বালানি উৎপাদনে পারমাণবিক শক্তির নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এই আলোকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি পুনঃপরীক্ষা করা হবে।
শিল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিল্প খাতের বিকাশে বিনিয়োগ বান্ধব নীতি প্রণয়ন করে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে। শিল্পায়নের তিনটি মৌলিক উপাদান- প্রণোদনা, অবকাঠামো এবং প্রতিষ্ঠান – সংক্ষেপে “থ্রি আই” এর ভিত্তিতে দেশব্যাপী সমন্বিত শিল্প-অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। যৌক্তিক নীতি-কৌশল গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিনিয়োগ বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়ানো হবে। বিশ্বে যেসব দেশ তাদের শিল্প-কারখানাগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে চায় সেগুলো যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হবে। পোষাক শিল্পে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখা ও বিস্তৃত করার পাশাপাশি শিল্প খাতের বহুমুখীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশকে টেকসই শিল্পোন্নত দেশে পরিণত করা হবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শিল্প পার্ক ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হবে। সব ধরনের সম্ভাবনাময় শিল্প স্থাপনে বেসরকারি খাতকে সহায়তা দেয়া হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং শ্রমঘন শিল্পকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হবে। বাংলাদেশ একদিকে যেমন রপ্তানি বাজারের জন্য শিল্প-পণ্য উৎপাদন করবে, অন্যদিকে দেশীয় চাহিদার নিরিখে বিদেশী পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম বিভিন্ন ধরণের শিল্প কারখানা স্থাপনের ব্যক্তি উদ্যোগকে প্রণোদিত করা হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পাশাপাশি ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
যোগাযোগ (সড়ক, রেল ও নৌ-পথ) প্রসঙ্গে বলেন, দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে রেল ও নৌ-পথের উপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করা হবে। সড়ক রেল ও নৌপথের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়নের মাধ্যমে সারাদেশে সমন্বিত বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকায় বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করে একে একটি জবমরড়হধষ ঐঁন হিসেবে গড়ে তোলা হবে। গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করে রাজধানী ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে সুপার হাইওয়ে দ্বারা সংযোগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ আরও সহজসাধ্য করা হবে। একসময় এদেশে চব্বিশ হাজার কিলোমিটার নৌ-চলাচলের উপযোগী জলপথ ছিল। কিন্তু এতদিনে অধিকাংশ নদী ভরাট হয়ে যাওয়া বা শুকিয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি নদীপথ এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৬০০ কিঃ মিঃ। নদীমাতৃক বাংলাদেশে এ এক ভয়াবহ চিত্র। একটি মহা প্রকল্পের আওতায় নদী খননের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া নির্বাচিত নদীপথগুলো পুনরুদ্ধার এবং এর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। কর্ণফুলী, বুড়িগঙ্গা, গোমতী, পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদীতে আন্ডারগ্রাউন্ড-টানেল নির্মাণ করা হবে। গত বিএনপি সরকারের সময়ে ঢাকার পানগাঁয়ে নির্মিত কন্টেইনার টার্মিনালের মত ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের নিকটস্থ এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এশিয়ান হাইওয়ে এবং ঢাকা-কুনমিং রেল ও সড়ক যোগাযোগসহ আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নকল্পে দ্বিতীয় যমুনা সেতু, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া প্রান্তে দ্বিতীয় পদ্মাসেতু ও ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মাণ করা হবে। বুড়িগঙ্গা, মেঘনা, গোমতী ও কর্ণফুলী নদীর উপর আরও সেতু নির্মাণ করা হবে। বিভিন্ন ছোট বড় নদীর উপর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেতু নির্মাণ করা হবে। ঢাকার সাথে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের দ্রুত যোগাযোগের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস হাইওয়ে নির্মাণ করা হবে। সারাদেশে বিভিন্ন মহাসড়ক পর্যায়ক্রমে চার লেনে উন্নীত করা হবে। সারাদেশে সড়ক নেটওয়ার্ক তথা জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক, উপজেলা সংযোগ সড়ক ও স্থানীয় সড়কসমুহের যথাযথ উন্নয়ন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা হবে। সার্কভুক্ত ও আশিয়ান দেশসমূহের সাথে রেল ও সড়ক যোগাযোগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। গণচীনের ‘ওয়ান বেল্ট- ওয়ান রোড’ উদ্যোগে সংযুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পর্যটন বিষয়ে তিনি বলেছেন, পর্যটন শিল্পকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রবেশ-পথগুলোকে অধিকতর পরিচ্ছন্ন, ঝামেলামুক্ত এবং সেবামুখী প্রবেশ-পথ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বড় বড় শহর নগরগুলোর পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে সামগ্রীকভাবে বাংলাদেশের মুখচ্ছবিকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য সকল প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হবে। পর্যটন শিল্পের প্রধান মূলধন প্রকৃতি ও সংস্কৃতি সঠিকভাবে সংরক্ষণের মাধ্যমে টেকসই পর্যটন উন্নয়ন বিশেষভাবে ইকো-ট্যুরিজম বিকাশের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও প্রতœ-নিদর্শনসম্পন্ন এলাকাগুলো পর্যটকদের আকর্ষণের স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এছাড়া কক্সবাজার, কুয়াকাটা, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, সুন্দরবন, সিলেট, গারো পাহাড় এবং কিছু নদী তীরবর্তী ও সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা বিশেষ পর্যটন-স্পট হিসেবে উন্নত করা হবে। পর্যটন শিল্পের সমন্বিত ও পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য পর্যটন-বান্ধব আইন প্রণয়ন করা হবে, বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণ সংক্রান্ত নিয়মাবলী আরও সহজিকরণ করা হবে। দেশী বিদেশী পর্যটকদের নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণ ও আবাস নিশ্চিত করা হবে। বিদেশী পর্যটকদের সুবিধার্থে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দোভাষী ও পর্যটক-গাইড সেবা নিশ্চিত করা হবে। পর্যটন শিল্পে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের আতœকর্মসংস্থান এবং স্থানীয় তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীদের পর্যটন খাতে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা এবং কর অবকাশসহ বিবিধ উদ্দীপনামূলক সুবিধা প্রদান করা হবে। পর্যটকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে উৎসাহিত করার জন্য বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ উদ্যোগী ভূমিকা নেবে এবং প্রয়োজনীয় প্রচারনা নিশ্চিত করবে।
সামাজিক ব্যাধির সমস্যা বিষয়ে খালেদা বলেছেন, নেশার মরণ ছোবল থেকে কিশোর ও যুব সমাজকে মুক্ত করার জন্য ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করা হবে। মাদক আমদানি, উৎপাদন এবং বাংলাদেশে এসবের বেআইনি প্রবেশ রোধে কঠোর বিধি-নিষেধ প্রয়োগ করা হবে। হতাশা এবং অন্যান্য মনস্তাত্বিক সমস্যার কারণে মাদকাসক্তরা বিপথগামী হয়। এদের পুনর্বাসনের জন্য মানসিক চিকিৎসা সমর্থন দেয়া হবে। বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজিষ্ট, মনোবৈকল্য বিশেষজ্ঞ এবং সাইকোথেরাপিষ্টের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজগুলোকে মনোবৈকল্য চিকিৎসক সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
ভূমিকম্প বিষয়ে বলেছেন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং জ্বলোচ্ছাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বেশ কিছু সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আরও অনেক কিছু করার আছে। আর একটি নতুন সম্ভাব্য দুর্যোগ হল ভূমিক¤প। ভূমিকম্পের মত দুর্যোগ মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতি বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। বিএনপি মনে করে ভূমিকম্প বাংলাদেশের মানুষ, প্রাণীকূল এবং উন্নয়নের জন্য ভয়াবহ হুমকি। সম্ভাব্য এ দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য বিদ্যমান সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে সহযোগিতা করার জন্য প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলা হবে। ভূমিক¤প-উত্তর পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে। কার্যকর উদ্ধার তৎপরতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আধুনিক ও ভারী যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হবে। ভূমিকম্প-উত্তর সময়ের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন সামগ্রী প্রস্তুত রাখা হবে এবং রোগ নিরাময় ও জীবন রক্ষাকারী স্বাস্থ্য-সেবা যথাযথভাবে গড়ে তোলা হবে। ভূমিকম্পজনিত-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় একটি সর্বাত্মক ও পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অনগ্রসর অঞ্চল বিষয়ে বলেছেন, পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম ও মর্যাদা সুরক্ষা করা হবে। অনগ্রসর পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর চাকুরী ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সকল সুবিধা এবং পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রম জোরদার করা হবে। পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর ভাষা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় এবং সুষম উন্নয়নে বর্ধিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠী উন্নয়ন অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। চা-বাগানে কর্মরত শ্রমজীবী মানুষের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ ও মানবাধিকার লংঘন বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বস্তি, চরাঞ্চল, হাওর-বাওর এবং মঙ্গাপীড়িত ও উপকূলীয় অঞ্চলের অনগ্রসর জনমানুষের জীবন-মান উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিষয়ে বলেছেন, দল-মত ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল জাতি গোষ্ঠির সংবিধান প্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মকর্মের অধিকার এবং জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হবে। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ন অধিকার ভোগ করবেন। কাউকে কোন নাগরিকের ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত করতে দেয়া হবে না। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সকল অপচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে।
তিনি পরিশেষে বলেছেন, আমরা যে ভিশন উপস্থাপন করলাম তা অর্জন কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। আমরা লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছি। এই দেশটাকে উন্নত ও মর্যাদাবান দেশে পরিণত করা আমাদের সকলের পবিত্র দায়িত্ব। আমরা আশা করি, এই ভিশন বাস্তবায়নে আমরা দেশবাসীর সক্রিয় সমর্থনের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানসমূহেরও সহযোগিতা পাবো। দেশের স্বাধীনতা অর্জন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং আমাদের আপোষহীন ও সংগ্রামী ভূমিকা বিবেচনা করে দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিক এই ভিশন বাস্তবায়নে আমাদের সক্রিয় সমর্থন জানাবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
বাংলাদেশের জন্য বিএনপির ভিশন ২০৩০ এর সরাসরি সম্প্রচার হোটেল ওয়েস্টিন ঢাকা থেকে।
Posted by Bangladesh Nationalist Party – BNP on Wednesday, May 10, 2017