অর্থনৈতিক বাঘ বাংলাদেশের সামনে সমস্যাও অনেক
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফেরামের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, দেয়ার কুড বি অ্যা নিউ এশিয়ান টাইগার। সেখানে নতুন অর্থনৈতিক বাঘ হিসাবে বাংলাদেশকেই উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মতে গত এক দশক ধরে যে কয়টি দেশ ৬ শতাংশ বৃদ্ধির হার ধরে রেখেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তবে সমস্যার কথাও তারা বলেছে, সেখানে তারা দেখিয়েছে অবকাঠামোর অনুন্নয়ন ও দুর্নীতি বাংলাদেশের বৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্তও করতে পারে। তাদের এই মতের বাইরেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য আরো কয়েকটি বিষয় রয়েছে যাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে বলে অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অর্থনীতিবিদ, আরএম দেবনাথ জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রধানত ৩টি খাতের উপর নির্ভরশীল। একটি হলো, কৃষি, দ্বিতীয়টি গার্মেন্ট আর তৃতীয়টি হলো, রেমিটেন্স।
কৃষির বিষয়ে তিনি বলেন, গত বছরে বাংলাদেশে ৫ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে চালের মূল্য সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে মোটা চালের দাম ৪০ টাকা। কিন্তু ভারত থেকে আমদানি করা মোটা চালের দাম ৩২ টাকা। তাছাড়া এবছর বোরো উৎপাদনও আগাম ঢলের কারণে ব্যাহত হয়েছে। প্রায় ৪ লাখ টন কম চাল উৎপাদন হবে।
এই অবস্থায় আগামীতে সরকারকে চাল আমদানি করতে হবে। খাদ্যপণ্য আমদানি করতে গিয়ে সরকার অর্থ ব্যয় করায় উন্নয়নের অন্যান্য দিক উপেক্ষিত থাকবে। বিশেষ করে অবকাঠামো উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি পোশাক খাতেও আগামী বছর ধস আসতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি নিয়ন্ত্রণ নতুন আইন করার ফলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হারাতে পারে। ফ্রান্সসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশেও রক্ষণশীল সরকারের সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানেও রক্ষণশীল শুল্কনীতি নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হলে বাংলাদেশের গার্মেন্ট রপ্তানি বাজার সংকুচিত হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই তার প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে। চলতি বছর গার্মেন্ট শিল্প তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।
রেমিটেন্সের ক্ষেত্রেও প্রধান জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। ওই দেশগুলো নিজেরাই অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। সৌদি আরব প্রথমবারের মতো আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত রেমিটেন্স কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে বাংলাদেশে বর্তমানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশে রয়েছে। প্রধানত আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য হ্রাস ও দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিল।