জিরা চাষ করে এলাকা মাতিয়ে তুলেছেন দৌলতপুরের আলমগীর
---
ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর : সকাল থেকে সন্ধ্যা।জিরাচাষী আলমগীরের ফুরসৎ নেই।দূর-দূরান্ত থেকে তার চাষ করা জিরার জিম দেখতে শত-শত উৎসুক জনতা আসছেন তো আসছেনই।তাতে তিনি ক্লান্ত নন,তারপরও তিনি খুশী।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী গ্রাম হোমনার (কুমিল্লা) দৌলতপুরে মো. আলমগীর হোসেন তার চাষ করা বৃহত্তর কুমিল্লায় এই প্রথম জিরা চাষ করে মাত্ করেছেন।সাড়া ফেলেছেন সারাদেশে।দৈনন্দিন রান্নায় ব্যাপক ব্যবহ্নত মসল্লার উপকরন ‘জিরা’ জমিতে রোপন করায় তাকে বাহাবা দিচ্ছেন সরকারের কৃষি বিভাগ থেকে শুরু করে মিডিয়ার মানুষের সাথে কথা বলতে হচ্ছে তাকে।
কথা বলে জানা গেছে,আলমগীর ৯ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে জিরা চাষ করেন অনেকটা শখের বশে।তারপর বনে যান দৌলতপুর গ্রামের জিরা কৃষক মো. আলমগীর হোসেন।এ বছর তো তাক্ লাগিয়ে দিয়েছেন বৃহত্তর কুমিল্লার সেরা কৃষকদের।আজ সোমবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টির দিনেও দর্শনার্থীতের কমতি নেই।জিরা ক্ষেত পরিদর্শন করে দেখা গেছে জিরার চারাগুলোে ফুলে ফুলে ভরা।
আলমগীর হোসেন জানান, তাঁর ছোট ভাই মো. আবুল হোসেন ১৪ বছর ধরে সৌদি আববে থাকেন। সেখানে নড়াইলের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় আবুলের। নড়াইলের ওই ব্যক্তির এক ভাই ইরানপ্রবাসী। ইরানপ্রবাসী ওই ব্যক্তি ইরান থেকে রোপণ করার উদ্দেশ্যে কিছু জিরা দেশে নিয়ে আসেন। তাঁর কাছ থেকে আধা কেজি জিরা এনেছেন আলমগীর। সেই জিরা থেকে প্রায় আড়াই শ গ্রাম মাস তিনেক আগে ৯ শতক জমিতে চাষ করেন আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের জমিতে জিরা হবে, তা কখনো কল্পনা করতে পারিনি। সাধারণ ফসলের মতোই জমিতে জিরা চাষ করেছি। ৯ শতক জমিতে জিরা চাষে ১৫ কেজি সার এবং আগাছা পরিষ্কার বাবদ কিছু খরচ হয়েছে। ফুলে ফুলে ভরে গেছে জিরাগাছগুলো। প্রতিটি গাছে জিরাও এসেছে প্রচুর। তবে কখন চাষ করতে হবে, সেই মৌসুম সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। আমার জমিতে জিরা চাষ হয়েছে শুনে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসেছিলেন কয়েক দিন আগে। তিনি আমাকে নানা পরামর্শ দিয়েছেন।’
আজ ২০ মার্চ বাঞ্ছারামপুর সংলগ্ন দৌলতপুর গ্রামে গিয়ে দূর থেকে হলুদ আর সবুজের সমারোহ চোখে পড়ে। হালকা বাতাসে জমির ২০০ থেকে ৩০০ মিটার দূর থেকেই জিরার গন্ধ ভেসে আসছিল। ৩০-৩৬ ইঞ্চি লম্বা গাছগুলো ফুলে ফুলে ভরে গেছে। জিরাগাছের পাতা চিকন ও এক থেকে দেড় সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। প্রায় প্রতিটি গাছেই জিরা ধরেছে প্রচুর।
দৌলতপুর হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষীকা ও কৃষিজ্ঞানে সমৃদ্ধ মিসেস সালমা বেগম জিরা চাষ দেখতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এতোদিন আমরা জানতাম আমাদের দেশের আবহাওয়া জিরা চাষ উপযোগী নয়।কিন্তু,কৃষক আলমগীর সেটা ভুল প্রমান করেছেন। সারাদেশের কথা জানি না,তবে বৃহত্তর কুমিল্লায় এই প্রথম জিরা চাষ করায় অন্যান্য কৃষকরা এতে উৎসাহিত হবে।সরকারের কৃষি বিভাগের উচিত আলমগীরের মতো আরো শত শত জিরা চাষী গড়ে তুলা।তা হলে আর বিদেশ থেকে আমদানী করে জিরা আনতে হবে না’
বাঞ্ছারামপুরস্থ বিশিষ্ট কৃষি বিশেষজ্ঞ মেহেদী পলাশ বলেন, ‘এর আগে দেশের অন্য কোথাও জিরা চাষ হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই। বাংলাদেশে জিরা চাষ একেবারেই নতুন একটি বিষয়। হোমনার দৌলতপুর গ্রামে জিরা চাষ হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখি প্রতিটি গাছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জিরা এসেছে। জিরার এই চাষ সফল হলে হোমনা তথা দেশে জিরা চাষের একটি বিপ্লব ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস।’