হারিয়ে যাচ্ছে পিরোজপুরের শাঁখাশিল্প
---
পিরোজপুর প্রতিনিধি : হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ শাঁখা । শাস্ত্রমতে ও রীতি অনুযায়ী বিয়ের অনুষ্ঠানে স্বামীর কল্যাণে ও সধবা পরিচয় প্রদানের লক্ষ্যে শাঁখা ব্যবহার করেন হিন্দু বিবাহিত মেয়েরা।
সমুদ্রের শঙ্খ দ্বারা তৈরী হয় শাঁখা । এই শাঁখা যারা তৈরী করেন তাদেরকে শাঁখারি বলা হয় । পিরোজপুর জেলা সদরের রাজারহাটে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী শাঁখাশিল্প ।
সমুদ্রের বড় বড় শঙ্খগুলো কেটে হাতের কাজের মাধ্যমে তৈরী করা হয় শাঁখাসহ এ শঙ্খের তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র । কিন্তু বর্তমানে শঙ্খের তৈরী জিনিসপত্রের ব্যবহার কমে যাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে শাঁখাশিল্প। তারপরও শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের চাহিদা মেটাতে পূর্বপুরুষের এ পেশা এখনো ধরে রেখেছেন পিরোজপুরের কয়েকজন শাঁখারি।
শাঁখাশিল্পের প্রধান উপকরণ সমুদ্রের বিশেষ কয়েক প্রজাতির শঙ্খ থেকে আসে। আর এ শঙ্খগুলো দেশের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার কয়েকজন আমদানি করে থাকেন শ্রীলঙ্কা ও ভারত (পশ্চিমবঙ্গের কালিঘাট, ওডিশার পুরী, বিভিন্ন সমুদ্র এলাকা ) থেকে।
শাঁখাশিল্পের প্রধান বাজার ঢাকার শাঁখারীবাজার, খুলনার ধর্মসভা ও দোলখোলা থেকে শঙ্খ কিনে এনে নিজস্ব কারখানায় অলংকার তৈরি করেন শিল্পীরা। ঢাকার শাঁখারীবাজার শঙ্খের অলংকার কেনাবেচার প্রধান কেন্দ্র হলেও চট্টগ্রাম, খুলনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরে শঙ্খ ব্যবসার প্রচলন রয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ে, পূজা-পার্বণ উপলক্ষে শাঁখার অলংকার ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
একটি ভালো আকৃতির শঙ্খ দিয়ে তিন জোড়া শাঁখা তৈরি হয়। ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা করে একটি শঙ্খের দাম। শঙ্খ গোলাকার করে কেটে বিভিন্ন আকারের বলয় তৈরি করা হয়। এরপর সেটিকে শিলে ঘষে মসৃণ করা হয় এবং বিভিন্ন নকশা আঁকা হয়। এসব শাঁখা প্রতি জোড়া ৫০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হয়।
এ ছাড়া সোনা দিয়ে বাঁধাই করা শাঁখাও পাওয়া যায়। এগুলোর দাম সোনার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়।
এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত মা কালী শঙ্খ ভাণ্ডারের প্রোপাইটার শাঁখারি শিবনারায়ণ দত্ত বলেন, এক সময় আশপাশের এলাকা থেকেও লোকজন এখানে শাঁখা কিনতে আসতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন তার বিক্রি পরিমাণ কমে গেছে । আস্তে আস্তে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা অন্য ব্যবসা শুরু করছে। আমাদের দুঃখ, কষ্ট, অভাব-অভিযোগ কেউ শোনে না, তাই এ শিল্প আজ ধ্বংসপ্রায় । পাঁচ বছর আগেও ৮-১০ টি দোকান ছিল, এখন আছে মাত্র ৩টি দোকান।
মা শঙ্খ ভাণ্ডারের প্রোপ্রাইটর সুমন কুমার দত্ত বলেন, জীবিকার তাগিদে নয়, পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা এ শিল্পের সঙ্গে এখনো রয়েছি।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পিরোজপুর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সুনীল চক্রবর্তী বলেন, পিরোজপুরের এ শিল্প আজ ধ্বংসপ্রায়। শাঁখা তৈরির কাঁচামালের অভাব, দাম বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে হাজার বছরের পুরোনো এ শিল্পকে ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন শাঁখাশিল্পীরা। যদি সরকারি সহযোগিতা ও সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা যায় তাহলে এ শিল্প আবারো তার পুরানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।