বিকালে শপথ নিচ্ছে নতুন নির্বাচন কমিশন
নিউজ ডেস্ক : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদাসহ চারজন নির্বাচন কমিশনার আজ বুধবার শপথ নিতে যাচ্ছেন। শপথ শেষে ইসিতে এসে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন নতুন সিইসিসহ সদস্যরা। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিকাল ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার কমিশনারকে শপথ পড়াবেন। সিইসির সঙ্গে শপথ নিতে যাওয়া অন্য চার নির্বাচন কমিশনার হলেন— সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ বেগম কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদত্ হোসেন চৌধুরী। এই শপথ অনুষ্ঠানে সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনারদের আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের পরিবার-পরিজনের ১১ সদস্য শপথ অনুষ্ঠানে থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইসি সচিবালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি ইত্তেফাককে বলেছেন, শপথ গ্রহণের পর বিকাল ৫টায় আগারগাঁও নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ভবনে ব্রিফিং করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। শপথ গ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সরাসরি আসবেন কমিশনাররা।
এদিকে, শপথ নিতে যাওয়া ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের প্রটোকল দিয়ে বাসা থেকে সরাসরি সুপ্রিমকোর্টে নিয়ে যাবেন ইসির প্রটোকল অফিসাররা। তবে ইসির নতুন সদস্য মাহবুব তালুকদার শপথের আগে ইসি সচিবালয়ের দেয়া প্রটোকল নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিজে বাসা থেকে সরাসরি শপথ অনুষ্ঠানে যাবেন। শপথের পরে প্রটোকল গ্রহণ করবেন।
গত ২৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ছয় সদস্যর সার্চ কমিটির ১০টি নামের সুপারিশ থেকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি এই পাঁচজনকেই নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বিদায় নিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ
বিগত কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যর কমিশনের অন্যতম সদস্য মো. শাহ নেওয়াজ গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছেন। ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. শাহ নেওয়াজ।
বিদায়বেলায় নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বিগত দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তার জোটকে ভোটে না পাওয়াকে নিজেদের অপ্রাপ্তি বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, সবার অংশগ্রহণে ভোট করতে না পারাটাও বিদায় কমিশনের জন্য ‘অতৃপ্তি’।
গতকাল শেষ কার্যদিবসে মো. শাহ নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, কোনো বিষয়কে কখনোই চ্যালেঞ্জিং মনে করিনি; কখনো আমাদের অসহায়ত্তও প্রকাশ পায়নি। তবে অতৃপ্তি অথবা অপ্রাপ্তির জায়গা ছিল। আমরা চেয়েছিলাম অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন করতে; রাজনৈতিক কারণে একটি দল ও তাদের জোট ভোটে আসেনি।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহ নেওয়াজ বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের সময় একটা রাজনৈতিক দল ও তার জোট নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় সেটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়নি। এতে নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়দায়িত্ব ছিল না। সবার অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় খারাপ লেগেছে। দলগুলো রাজনৈতিক কারণেই নির্বাচনে আসেনি।
শাহ নেওয়াজ নিজেদের মেয়াদের মূল্যায়ন করেছেন এভাবে, আমাদের মেয়াদে অধিকাংশ নির্বাচন ভাল হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কিছু নির্বাচনী কর্মকর্তার অসহযোগিতার কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু নির্বাচন খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে কিছু কিছু প্রার্থী নির্বাচনে জেতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেছিল। সে কারণে কিছু নির্বাচন খারাপ হয়েছে। সার্বিকভাবে ভালো নির্বাচন হয়েছে, সুন্দর সময় গেছে আমাদের।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী আনুষ্ঠিকভাবে বিদায় নেন। চারজনের বিদায়ের পর থেকে গত এক সপ্তাহ নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের চলতি দায়িত্বে ছিলেন। তিনি গতকাল বিকাল ৪টায় সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ শুভ্যানুধায়ীদের কাছে থেকে বিদায় নেন।