কুমিল্লা উত্তরাঞ্চলের তাঁতের লুঙ্গী রপ্তানী করে প্রতি বছর আয় সাড়ে ৩০ কোটি টাকা
ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর,(ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প,শুধু শিল্পই নয়,এক সময় বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও রুটি-রুজির একমাত্র অবলম্বন ছিলো এই তাঁত। তাঁতকলের ক্ষুদ্র খাদে বসে অনেক কষ্টে বুঁনো হয় এই তাঁত।তাতেঁর কাপড়,লুঙ্গী-গামছা পরতে খুবই আরামদায়ক ও দামে সুলভ।কিন্তু এই তাঁত আজ ধীরে-ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।সময়ের বিবর্তনে তাঁত আজ বিলীনের পথে।
এখন আর সচরাচর তাঁত আর চোঁখে পড়ে না বললেই চলে।অনেকে মনে করেন,ভবিষ্যত প্রজন্মকে তাঁত শিল্পকে দেখাতে যাদুঘরেও যেতে হতে পারে॥বর্তমান প্রযুক্তির যুগের তাঁেতর পরিবর্তে পাওয়ার লোমের চাহিদা বেশী।তারপরও তাঁেতর ব্যপক চাহিদা রয়েছে।হোমনা,বাঞ্ছারামপুর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী নবীনগর,মেঘনা উপজেলার অধিবাসীদের স্বাধীনতার আগে ৪৫%পরিবার তাঁেতর উপর নির্ভর করে সংসার চালাতে হতো।
খোজ নিয়ে জানা যায়,বাঞ্ছারামপুরের রুপুসদী গ্রামের কান্দাপাড়ায় প্রায় অনেক মানুষই আগে তাঁত বুঁনতো।এই গ্রামটিকে কান্দাপাড়াটিকে তাঁতী পাড়ায় নামকরন করা হয়।একইভাবে কুমিল্লার হোমনা উপজেলার ঘনিয়ারচর ইউপির ৫টি মহল্লাই গড়ে উঠেছে তাঁতীদের নিয়ে।তাঁতহাটি নামকরন করা হয়েছে সবগুলো মহল্লাগুলোকে একত্র করে।
তাঁতকলগুলো ঘুরে দেখা যায়,-বতমানে সারাদেশতো বটেই সারাবিশ্বে বাংলাদেশী অধ্যূষিত পল্লীগুলোতে আমানত শাহ ল্ঙ্গুীর সত্ত্বাধিকারী আলহাজ্ব হেলাল মিয়া ব্যাপারীর বাঞ্ছারামপুরস্থ রুপুসদী ইউপির পৈতিক বাড়ীর একটি ঘড়ের ভেতর গর্তের মতো একটি কুঠুরীতে বসে ৮/৯জন তাঁত শ্রমীক তাঁত কলগুলোতে তাঁত বুঁনছেন।
তাঁতী ফিরোজ মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান,-‘এইডা আজ আমার সমাজে ‘মান্যগণ্য’-ব্যক্তি হিসাবে দশজনের একজন হইতে পারছি।আমার উপরে উঠার প্রধান অবলম্বন হইলো এই তাঁত। এই শ্রমীকদের দিয়ে তাঁতের কাপড় বানাইয়া একেক সময় পাইকারগো,আবার- বছরে ৭/৮ দফা ডাইরেক্ট এলসি খুইল্ল্যা আরব দেশগুলাতে রপ্তানী করি।’’ স্থানীয় ইউপি চেয়ারমান ফিরোজ মিয়ার সাথে কথা বললে জানান-“এইঠা আমার চৌদ্দ পুরুষের পেশা। ছোড্র বেলা থেইক্ক্যা অহনো আমি এই বৃদ্ধ বয়সেও বাবুরহাট,সিরাজগনজে কাপড়ের বান্ডেল লইয়্যা বেঁচবার যাই।আমার বাপ-দাদার পরিবর্তে আমি এহনো তাঁতের পেশায় আছি। তয়,দেশে চাহিদা এক্কেবারে কম,বিদেশে বেশী।তবুও,বাপ-দাদার পেশা বইল্ল্যা ছাড়তে পারিনা। ”
তাঁত শ্রমীকের কথা-
কুমিল্লার সবচেয়ে প্রাচীন তাঁতী এলাকা হিসেবে খ্যাত হোমনা উপজেলার ঘনিয়ারচর এলাকা।ঐ এলাকার তাতিহাটির কর্মচারী তাঁতী গণি মিয়াকে ডাকলে তাঁত কলের খাঁদ থেকে বেরিয়ে এসে জানান,-‘বিশ বছর ধইরা তাঁেতর কামের সাথে আহার-রুজি চালাইয়া আইতাছি।সংসার এক ছেলে,এক মেয়ে স্থানীয় স্কুলে পড়ে।তাতঁ বুঁইন্ন্যা যে দুইশো টাকা হাজিরা পাই তা দিয়া সংসার চালাইতে কষ্ট হয়।এরচেয়ে জমিতে বদলী গেলে ৫০ টাকা বেশী পাওয়া যায়।কিন্তু তাঁেতর মায়া ছাড়তে পারিনা বইল্ল্যা তাঁত কলের লগেই জীবনঠা পার কইরা দিমু’।
জানা যায়,একজন তাঁতী দৈনিক সর্ব্বোচ্চ এক থান [এক থান সমান হচ্ছে একশো হাত দীর্ঘ কাপড়,প্রস্থে সাড়ে তিন হাত] বুঁনতে পারেন।
বৃহত্তর কুমিল্লার তাঁতের কেবল লুঙ্গী বিদেশে রপ্তানী করে প্রতি বছর আয় হচ্ছে সাড়ে পায় ৩০ কোটি টাকা !!
‘দেশে এই প্রথম লুঙ্গী রপ্তানী করে সিআইপি খেতাব অর্জন’’
বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি,যিনি এই প্রথম কেবল ষ্ট্যান্ডার্ড লুঙ্গীর মালিক ষ্ট্যান্ডার্ড লুঙ্গী বিদেশে রপ্তানী করে গত বছর সিআইপি হিসেবে সরকারিভাবে পুরষ্কৃত ও স্বীকৃতি পেয়ে দেশের ডিজিটাল উইভিং ফ্যাক্টরী থাকা সত্বেও শত বছরের পুরনো তাত শিল্পের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে সমর্থ হয়েছেন।
‘দরকার সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ’-দাবী আমানত শাহ লুঙ্গীর পরিচালক
হোমনা,মেঘনা,তিতাস,বাঞ্ছারামপুরের তাঁতের কাপড় বিদেশে রপ্তানী করে প্রতি বছর আয় হচ্ছে প্রায় ৩ কোটি টাকার উপরে।অনেকে বিদেশে সঠিক রপ্তানী আয়টি ব্যবসায়িক কৌশলগত কারনে বলতে রাজি হননি। অনেকের মতে রপ্তানী আয় ৫০কোটি টাকা উপর হবে।মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল থেকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, তাঁত সংশ্লিষ্ট ষ্ট্যান্ডার্ড লুঙ্গীর মালিক আলহাজ্ব হেলাল মিয়া সিআইপি ,আমানত শাহ গ্রুপ,ফিরোজ মিয়া উইভিং ফ্যাক্টরীর শাহী লুঙ্গী-গামছা-রুমাল প্রতিবছর বিদেশে বেশ সমাদৃত।
বর্তমানে আমানত শাহ লুঙ্গী তো টিভি,পেপারের পাতা খুললেই এর বিজ্ঞাপন দেখা যায়।আমানত শাহ লুঙ্গীর পরিচালক ও হেলাল ব্যাপারীর ভাতিজা মো.কামরুল হাসান জানান,-‘বিদেশে আমানত শাহ লুঙ্গীর চাহিদা অনেক।ববসায়ীক কৌশলের কারনে সঠিক টাকার অংক বলতে নারাজ।তবে তিনি বলেন- প্রবাসীরা দেশীয় লুঙ্গী ছাড়া বিশেষ করে ষ্ট্যান্ডার্ন্ড,শাহী,আমানত শাহ ছাড়াতো কিনতেই চায় না।বিদেশে যে পরিমান ডিমান্ড আছে সরকার যদি তাঁতীদের সুদ মুক্ত ঋণ দিতো তবে,প্রায় বিলুপ্তির পথে এই তাঁত শিল্পটিকে পুনরায় জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব’।