নিরাপত্তার আশ্বাস পেলে ফিরে যাবে রোহিঙ্গরা
নিউজ ডেস্ক : নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব পেলে মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গেলে আনান কমিশনের কাছে এভাবেই নিজেদের কথা ব্যক্ত করেন রাখাইনে নির্যাতিতরা।
মঙ্গলবার ‘নাগরিকত্ব পেলে মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে দৈনিক যুগান্তর।
বাংলাদেশ সফররত আনান কমিশন সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো ক্যাম্প পরিদর্শনে গেলে তাদের কাছে এসব কথা জানান রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লোকজন।
কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নোমান বলেন, মিয়ানমার সরকারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি গঠিত রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশনের সদস্যরা দ্বিতীয় দিনের মতো সোমবার বেলা ১০টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং শরনাথী ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন।
রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে সেনা-পুলিশের নিপীড়নে আহত জামবুনিয়ার আমির হোসেন, দুই ছেলে-মেয়ে হারানো মুহাম্মদ জহুর, স্ত্রী ও মেয়ের নির্মম হত্যার দৃশ্য দেখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া হোসেন আহমদসহ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৪০ নারী, ১৮ শিশু ও ১২জন পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন কমিশন সদস্যরা।
সূত্র আরও জানায়, রেজিস্ট্রার ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে কমিশন সদস্যরা অনিবন্ধিত ক্যাম্পের বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এসময় তাদের ভবিষ্যত চাওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে আশ্রিত রোহিঙ্গারা বলেছেন, নিজ দেশেই তারা ফিরে যেতে চান। তবে, নাগরিকত্ব নিয়েই তারা স্বাধীনভাবে দেশে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তাদের দাবি, মিয়ানমারে ১৪৭ জাতের মধ্যে রোহিঙ্গা ছাড়া বাকি সবার নাগরিকত্ব রয়েছে। তাই নিজ জন্মভূমি হলেও পরবাসীর মতোই জীবন কাটাতে হয় রোহিঙ্গা মুসলিমদের। পরিবারের পুরুষ সদস্যদের কাজে লাগিয়ে পারিশ্রমিক দেয়া হয় না।
শরণার্থীরা জানান, এমনকি রোহিঙ্গাদের ভোগদখলীয় জমি দখল, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, হত্যা-গুম ও নারীদের গণধর্ষণ করে অবর্ননীয় নির্যাতন করা হচ্ছে। তাই জীবন বাঁচাতে তারা সীমান্তবর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।
তবে তারা এও জানান, আশ্রয় পেলেও বাংলাদেশে তারা থেকে যেতে চান না। নাগরিক মর্যাদা পেলে তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিয়ানমার ফিরে যেতে চান। এটি নিশ্চিত করতে তারা কমিশন সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
এ সময় ক্যাম্প এলাকায় নানা পেস্টুনসহ লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের দাবি দাওয়া তুলে ধরেন নির্যাতিত রোহিঙ্গারা।
এদিকে ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বেলা ২টার দিকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনের সদস্যরা।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক হয় বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। এ সময় কমিশনের সদস্য মিয়ানমারের নাগরিক উইন ম্রা, আই লুইন এবং লেবাননের নাগরিক ঘাসান সালামেসহ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন (ইউএনএইচসিআর) ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।