ভাঙা আয়না কি সত্যিই বিপদ ডেকে আনে?
লাইফস্টাইল ডেস্ক :ভাঙা আয়না নিয়ে সংস্কার প্রায় সব সংস্কৃতিতেই কমন। রোমান আমল থেকেই এই ধারণা চলিত হয়ে পড়ে, আয়না ভাঙলে সাত বছরের জন্য দুর্ভাগ্য ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকে। বাড়িতে ভাঙা আয়না রাখতে নিষেধ করে ফেং শ্যুই ও বাস্তু। অপতন্ত্রে ভাঙা আয়নার টুকরো ব্যবহার করে অভিচারের নিদান রয়েছে। কারণ, আয়না নাকি তাতে প্রতিফলিত মানুষের আত্মার একাংশকে ধরে রাখে। আয়না সংক্রান্ত সংস্কারের তালিকায় চোখ বোলালে বিভ্রান্ত লাগতেই পারে। কারণ, শৈশব থেকেই আয়নাকে এক আজব বস্তু হিসাবে আপনার সামনে হাজির করা হয়েছে।
এই তালিকার বাইরেও থাকছে, গর্ভবতী মহিলাদের আয়না দেখার উপরে নিষেধাজ্ঞা, এক বছরের কম বয়সি শিশুকে আয়না দেখানো নিয়ে ট্যাবু। এত সব কাণ্ডকে অতিক্রম করে সক্রিয় রয়েছে ‘ব্লাডি মেরি’-র মিথ। যেখানে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্লাডি মেরিকে ১৩ বার ডাকলে সেই পিশাচিনীর অবয়ব ফুটে ওঠে আয়নায়।
কিন্তু আয়না সম্পর্কিত সব মিথকে টেক্কা দেয় ভাঙা আয়নার সংস্কার। সত্যিই কি সাত বছর ধরে দুর্ভাগ্য নিত্যসঙ্গী হয় আয়না ভাঙলে? কী বলে এ
বিষয়ে প্রচীন ভারতীয় শাস্ত্র ও পরম্পরা?
• হিন্দু শাস্ত্র মতে, আয়না মানুষের আত্মার অংশকে তার ভিতরে ধরে রাখে। আবার যখন দেবতা বা অপদেবতারা কোনও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান, তাঁরা আয়নার মাধ্যমেই তা করতে থাকেন। ফলে আয়না ভাঙা জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতেই পারে।
• দর্পণকে লক্ষ্মীর রূপ বলে মনে করে হিন্দু পরম্পরা। ফলত, আয়না ভাঙলে লক্ষ্মীদেবী রুষ্ট হন এবং অর্থভাগ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
• ভাঙা আয়নার স্বপ্ন কোনও প্রিয়জনের আসন্ন মৃ্ত্যুকে ব্যক্ত করে।
• ভাঙা আয়না কালো কাপড়ে মুড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলার নিদানও দেয় ভারতীয় পরম্পরা।
পরম্পরা কেন এমন নিদান দেয় আয়না ভাঙার বিষয়ে, যুক্তি খুঁজেছেন অনেক সমাজবিদই। তাঁদের মতে—
• প্রাচীন কালে আয়না তৈরির প্রক্রিয়া ছিল সময় সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। সে কারণে আয়নার দামও ছিল সাংঘাতিক। তাই আয়না যাতে যত্নে ব্যবহৃত হয়, সেই বিষয়টিকে নিশ্চিত করতেই এমন সংস্কারের জন্ম দেওয়া হয়।
• ভাঙা আয়না সংসারের পক্ষে এক বিড়ম্বনা। কাচের ভাঙা টুকরো থেকে আহত হতে পারে যে কেউ যখন তখন। সেই কারণেও নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়।
• ভারতীয় পরম্পরাতেই আবার এমন ধারণা প্রচলিত, যে ব্যক্তি আয়না ব্যবহার করছেন, তিনি আত্মসচেতন। তাঁর কাছ থেকে যত্ন ও কর্মদক্ষতা আশা করাই যায়। কিন্তু আয়না ভাঙার অর্থ বিমনা ব্যক্তিত্ব ও অমনোযোগ। এমন ব্যক্তির সাত কেন, সত্তর বছর ধরে দুর্ভাগ্য চললেও তাকে অযৌক্তিক বলা যাবে না।