বৃহস্পতিবার, ২২শে জুন, ২০১৭ ইং ৮ই আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসার অভাবে ১৩ বৎসর যাবত শিঁকল বন্দী  কিশোর কামরুল !

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ২২, ২০১৭
news-image

---

বিশেষ প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাঞ্ছারামপুর সদর ইউপির মর্ধ্যপাড়া গ্রামে দু-চালা চৌট্র একটি ঘরে কামরুলদের বসবাস। জন্মের পর মাত্র ৩ বছর বয়সে এক মারাত্বক টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় দরিদ্র পরিবারের আজকের কিশোর কামরুল(১৬)।জ্বরের পর থেকে কামরুলকে ধীরে-ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ‘প্রতিবন্দ্বী’ হিসেবে গলায় শিঁকলবন্দী করে গাছের সাথে বেঁধে রাখতে হয় দিনের প্রায়১৫/১৬ ঘন্টা সময়।কামরুলকে  বাড়ীর সামনেই একটি গাছে   বাধ্য হয়েই বেঁধে রাখতে হয় জানিয়েছেন তার পিতা-মাতা। একমাত্র ছেলে কামরুলের গলায় শেঁকলবন্দী  কেন?একথা জিঞ্জাসা করতেই তার  মা, শামসুন্নাহার হাঁহাকার করে কেঁদে উঠেন।মানসিক প্রতিবন্দী কামরুলকে দিনের পুরোটা সময় ও রাতের বেলা ঘরে নেওয়ার পরও বেঁধে রাখতে হয় ঘুমানোর খাঁটের সাথে।এই যে কত বড় মানবতর জীবন যাপন স্বচোখে না দেখলে পুরোটা উপলদ্ধি করা কষ্টকর। তবু শিঁকলবন্দী কামরুল বেঁচে আছেন। গাছের সাথে গলায় শেঁকল দিয়ে বেধে রাখার কারণ জানতে চাইলে তার দিনমজুর পিতা মো: কামাল মিয়া জানান, সামনে যা পায় তাই সে খেয়ে ফেলে।গাছের লতা-পাতা বা খাবার অযোগ্য যে কোনো জিনিস-ই সে খেয়ে ফেলে। নষ্ট করে ফেলে ঘরে আসবাবপত্র।তাই তাকে শিঁকল বন্দি করে রাখতে হয়। এই পরিস্হিতিতে কামরুলকে
প্রচন্ড এই শীতের মাঝে সমস্ত দিনের বেলা ও রাতের ৮/৯টা পর্যন্ত খোঁলা আকাশের নীচে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। রাত গভীর হলে ঘরে নেওয়া হয়-জানান তার মা। কামরুলের সর্ম্পকে কথা বলে জানা যায়,  অসুস্থ্য হবার পর থেকে টাকার অভাবে এ যাবত ঝাঁড়-ফুঁক আর নামে মাএ চিকিৎসা ছাড়া তাকে বড় ধরণের  কোন বিজ্ঞান সম্মত কোন ভালো চিকিৎসা করাতে পারেনি তার পরিবার।আর এ জন্য  দিনে দিনে কিশোর কামরুলের মানসিক অসুস্থ্যতা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ নিয়ে দিনমজুর কামরুলের পিতা কামাল মিয়া ও মা শামসুন্নাহারের চোঁখে ঘুম নেই।তারা সমাজের বিবেকবান মানুষের সহায়তা চেয়ে আসছেন ১৩ বছর আগে থেকেই।কামরুলের বয়স যখন মাত্র তিন বৎসর  তখন টাইফয়েড জ্বরে অসুস্হ্য হয়ে যায় আর তখন থেকেই দরিদ্র পিতার ছেলে কামরুলের চিকিৎসার সাহার্য্যে সেভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি।
শৈশবের যে সময়টুকু কাটার কথা দুষ্টুমী আর আনন্দে,যাবার কথা বই-খাতা নিয়ে স্কুলে,সে এখন যাচ্ছে অন্ধকার কালো এক ভবিষৎতের দিকে।যে দিকে কেবল শুধুই অন্ধকার। কৈশোরের সব সাধ-আল্লাদ আর স্বপ্নকে দূরে ঢেলে সে  আজ সমাজের চোঁখে মানসিক প্রতিবন্দ্বী। তবে তাকে সুস্থ্য করে তোলা সম্ভব জানিয়েছেন তার পিতা। প্রয়োজন ৫/৭ লাখ টাকার। কে দিবে হত-দরিদ্র কামরুলকে এই টাকা, প্রশ্ন তাদের!স্থানীয় সাংসদ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এবি এম তাজুল ইসলাম দু’দফায় কিছু নগদ সহায়তা করেন।অনেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে  প্রতিশ্রতি ছাড়া কেউ এগিয়ে আসেনি।
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শওকত ওসমান যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিদিনকে জানান, এ ধরনে কোন মানসিক প্রতিবন্ধি কেউ থেকে থাকলে তাকে মানে তার পরিবারকে বলবেন আমার সাথে যোগাযোগ করতে আমার পক্ষ থেকে সহযোগিতার চেষ্টা করব। আমার কাছে এধরনর কোন লোক আসেনি। এছাড়া আমি প্রতিবন্দী ভাতার ব্যাপারে চেষ্টা করব।  ইউনিসেফ-এর স্থানীয় ফোকালপার্সন ও গণমার্ধ্যম এক কর্মী উদ্যোগ নিয়ে কামরুলের নামে সমাজকল্যান দপ্তরের মাধ্যমে একটি প্রতিবন্দ্বী ভাতার ব্যবস্থা করে দেন বলে জানা যায়। তাতে সে  প্রতিমাসে ১ হাজার টাকা পাবে।

এ জাতীয় আরও খবর