উইকিলিকসকে ইমেইল সরবরাহ করেনি রাশিয়া: অ্যাসাঞ্জ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেট প্রচারণা শিবিরের ইমেইল হ্যাক করে উইকিলিকসকে সরবরাহ করেছিল রাশিয়া- মার্কিন গোয়েন্দাদের এ দাবি অস্বীকার করেছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। মঙ্গলবার প্রচারিত ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে উপস্থাপক সিনি হ্যানিটি উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জকে প্রশ্ন করেন, ডেমোক্রেট পার্টির ইমেইল তার প্রতিষ্ঠান কোত্থেকে পেয়েছে বা এর সূত্র কি? রাশিয়া বা রাশিয়ার সাথে যুক্ত কেউ কি এগুলো সরবারাহ করেছিল?
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের সূত্র কোনো দেশ নয়। সুতরাং এর উত্তরে আমরা বলব- না।’ অর্থাৎ রাশিয়া তাদেরকে কোনো ইমেইল সরবরাহ করেনি।
উল্লেখ্য, নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে উইকিলিকস ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক দলের সাতজন শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে চালাচালি হওয়া প্রায় ২০ হাজার ইমেইল ও আট হাজার নথি ফাঁস করে।
ইমেইলগুলোতে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারি ও ককাসের আগে বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারণাকে ‘ক্ষতিগ্রস্ত করার’ অভিযোগ আসে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে রাষ্ট্রীয় কাজে হিলারির ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহার ছাড়াও আরো নানা তথ্য উঠে আসে। যার প্রভাব পড়ে নির্বাচনে। ডেমোক্রেটদের দাবি, ইমেইল ফাঁসই হিলারির পরাজয়ের অন্যতম কারণ।
এদিকে নির্বাচনের পর থেকেই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাবি করে আসছে ট্রাম্পকে জেতাতে সহায়তা করেছে রাশিয়া। তাদের দাবি, ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি এবং শীর্ষ কমিটির ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক, উইকিলিকসের মতো কিছু মাধ্যম ব্যবহার করে হ্যাকিং থেকে প্রাপ্ত তথ্য ফাঁস এবং এরপর রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেসব নিয়ে ‘ট্রল’ করে খারাপ মন্তব্যের ব্যবস্থা করেছিল রাশিয়া। ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ওপর থেকে জনগণের আস্থা সরাতেই দেশটি এ কাজ করেছে।
শুক্রবার প্রকাশিত এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পকে জেতাতে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সে লক্ষ্যে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারে প্রচারণা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তারই একটি পদক্ষেপ ছিল ডেমোক্রেট পার্টির নেটওয়ার্ক হ্যাক।
তবে শুরু থেকেই নির্বাচনে ইমেইল হ্যাকিংয়ের বিষয়টি নাকচ করে আসছে রাশিয়া। ভিন্নমত পোষণ করেন ট্রাম্পও। ওই হ্যাকিংয়ের পেছনে হয় চীন আছে অথবা তার ‘নিজের বিছানায় শায়িত ৪০০ পাউন্ড ওজনের কোনো হ্যাকার’ এ কাজ করেছে, এমন কথাই বলে আসছিলেন তিনি।
২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দেয় উইকিলিকস। এরপর ওই বছরই সুইডেনে অ্যাসেঞ্জের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা হয়। ধর্ষণ মামলায় সুইডেনে সমর্পণ এড়াতে ২০১২ সালের জুনে লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নেন অ্যাসাঞ্জ। অ্যাসাঞ্জ এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসলেও বিষয়টি নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় সুইডিশ কর্তৃপক্ষ। অ্যাসাঞ্জের আশঙ্কা, সুইডেনে গেলে দেশটির সরকার তাকে জোর করে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে।
গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। দেশটিতে উইকিলিকসের কার্যক্রম নিয়ে একটি অপরাধ তদন্তও চলছে।