সোমবার, ৯ই জানুয়ারি, ২০১৭ ইং ২৬শে পৌষ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

‘রাজধানীজুড়ে হবে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন’

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ৮, ২০১৭

নিউজ ডেস্ক : ভূগর্ভস্থ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে ঢাকার রাস্তা থেকে বিদ্যুতের খুঁটি ও তারের বিড়ম্বনা দূর করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইনের মাধ্যমে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে।

রাজধানীসহ সারাদেশেই খুঁটি ও তারের কারণে নানা রকম দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। প্রতিবছর গড়ে শতাধিক মানুষ এতে মারা যায়। মূলত এসব দুর্ঘটনা রোধ করতে এ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

মাটির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক তার নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হবে। এতে ব্যয় হবে লক্ষাধিক কোটি টাকা। ২০২৫ সালের মধ্যে রাজধানীর সব এলাকার বিদ্যুতের তার মাটির নিচে চলে যাবে বলেও আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় বর্তমানে মাটির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন রয়েছে। ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ কেবল নেটওয়ার্ক তৈরি করে রাজধানীর একটি বড় অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) মাটির নিচে এক হাজার ৫০০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন নির্মাণ করার নকশা তৈরি করেছে । রাজধানীজুড়ে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের নেটওয়ার্ক গড়তে আরও কয়েকটি বড় প্রকল্পে নিচ্ছে ডিপিডিসি ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) লিমিটেড। চলতি অর্থবছরেই এসব প্রকল্পের অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বর্তমানে ডেসকো গুলশান, বনানী ও মিরপুর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এসব এলাকায় ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে সাড়ে চারশ’ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩৩৮ কিলোমিটার মাটির নিচে ও ১০৮ কিলোমিটার মাটির ওপরে। এ ছাড়া ভূগর্ভস্থ ১১ কেভি লাইন রয়েছে প্রায় পাঁচশ’ কিলোমিটার। ডিপিডিসি রাজধানীর বাকি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। এ এলাকায় উলন থেকে ধানমণ্ডির পরীবাগ পর্যন্ত ১৩২/৩৩ কেভি একটি বৈদ্যুতিক লাইন রয়েছে মাটির নিচে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির রাজধানীতে ১৩২ কেভি লাইন রয়েছে ২২৮ কিলোমিটার এবং ৩৩ কেভি ৩৬৮ কিলোমিটার। এসব লাইন মাটিন নিচ দিয়ে নেওয়া হবে। মাটির নিচ দিয়ে ৪০০ কেভি পর্যন্ত বিদ্যুৎ লাইনের নেটওয়ার্ক স্থাপন করা সম্ভব।

এ প্রকল্প বিষয়ে ডিপিডিসির প্রধান তত্ত্বাবধায়ক কামরুল আজম বলেন, ডিপিডিসির আওতায় তার রাস্তার ওপর দিয়ে যাতে না ঝোলে, তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধানমণ্ডি ও মোহাম্মদপুরের খুঁটি সরিয়ে মাটির তলদেশ দিয়ে কেবল লাইন নেওয়া হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের পরিকল্পনা উইংয়ের প্রধান আবদুল আহাদ বলেন, রাজধানীর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা পুরোপুরি খুঁটিমুক্ত করার পরিকল্পনা সরকারের। এরই মধ্যে একটি বড় প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন, যা দিয়ে রাজধানীর একটি বড় অংশে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। পাইপলাইনে আরও কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে। অর্থায়ন এবং অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা চলছে।

রাজধানীর অভিজাত এলাকায় খুঁটি ও তারমুক্ত করতে কাজ করছে ডেসকো লিমিটেড। এরই মধ্যে গুলশান ও বনানীতে ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে সংস্থাটি। পূর্বাচলেও মাটির নিচে বিদ্যুতের লাইন নির্মাণের কাজ চলছে। উত্তরা ও বারিধারা অংশের জন্যও প্রকল্প অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে।

ডিপিডিসির ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতের নেটওয়ার্কে অর্থায়ন করবে চীন। প্রকল্পটির ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে কনসেশনাল ঋণ পাওয়া যাবে ১৪ হাজার কোটি টাকা। ডিপিডিসির নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা। সরকারি অর্থ দেওয়া হবে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। আরও একটি বড় প্রকল্প অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে। এর ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি ধরা হয়েছে।

ধানমণ্ডি ও মোহাম্মদপুরে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটারজুড়ে ১৩২ কেভি ও ৩৩ কেভি ভূগর্ভস্থ কেবল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে। হাতিরঝিলেরও বিতরণ লাইন ভূগর্ভস্থ লাইনে রূপান্তর করা হবে। বিদ্যমান উপকেন্দ্রগুলোকে অটোমেশন এবং কমিউনিকেশন ব্যবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে নতুন স্ক্যাডা স্থাপন করা হবে।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সসহ টেস্টিং ল্যাবরেটরি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে ডিপিডিসির। সেইসঙ্গে উন্মুক্ত হ্যাঙ্গারসংবলিত অত্যাধুনিক মেকানাইজড ওয়্যারহাউস নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে প্রকল্পটিতে।সূত্র: সমকাল