শনিবার, ৭ই জানুয়ারি, ২০১৭ ইং ২৪শে পৌষ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

আখাউড়ায় পথকলিদের ভাসমান পাঠশালা

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ৬, ২০১৭

তৌহিদুর রহমান নিটল  আখাউড়া রেলস্টেশনের ২নং প্লাটফর্ম। অন্যসব জায়গার মতো নিত্যদিন এখানেও লেগে থাকে রেলযাত্রীদের ভিড়, ঠেলাঠেলি আর হৈ-হুল্লোড়। কিন্তু সকালের চিত্র থাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তখন যে কেউ এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন এক চমৎকার দৃশ্য। মেঝেতে প্লাস্টিকের শিট পেতে পড়াশোনা করছে অনেকগুলো সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল শিশু। কেউ কেউ আবার খুনসুটিতে লিপ্ত। তাদেরকে আলোর পথ দেখানোর এ কাজটি করে চলেছে ‘উদীয়মান সূর্য’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন।

উদীয়মান সূর্য প্রতিষ্ঠিত ‘পথকলিদের পাঠশালা’ নামের এ স্কুলে পথশিশুদের অক্ষর জ্ঞান ছাড়াও দেয়া হয় নৈতিক বিষয়ে শিক্ষা। তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্যই এ কাজটি করে যাচ্ছেন সংগঠনের কর্মীরা। আখাউড়া রেলস্টেশনের ২নং প্লাটফর্মে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চলে এ পাঠশালা। ২০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়ে ৬ ডিসেম্বর শুরু হয় এর পথচলা।

পথকলিদের পাঠশালায় আছে ৪০ জন শিশু শিক্ষার্থী। যারা সবাই কোনো না কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত। কেউ ভিক্ষা, কেউ বাসাবাড়িতে কাজ করাসহ অনেকেই আবার বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। তাদেরকে এসব কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হয় পাঠশালাটির।

এখানে প্রতি দুজন শিশুশিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক কাজ করেন। স্বেচ্ছাশ্রমে পাঠশালায় পড়াচ্ছেন তারা। সেই সঙ্গে পাঠশালার পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দেয়া হয় বই খাতাসহ শিক্ষা বিষয়ক নানান উপকরণ। যারা পাঠদান করাচ্ছেন তারা সবাই স্থানীয় বিভিন্ন কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থী এবং উদীয়মান সূর্যের সদস্য। কলেজে যাওয়ার পূর্বে এখানে সময় দেন তারা।

প্রাক-প্রাইমারি স্তরের শিক্ষা দেয়া হয় পাঠশালায়। শিক্ষার্থীদের বয়স ৬ থেকে ১৫ বছর। শিক্ষার্থী মো. আরিফ ও বন্যা আক্তার জানায়, তারা সবাই বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে। কাজের ফাঁকে এখন পাঠশালায় পড়ছে। এ স্কুল থেকেই তাদের দেয়া হচ্ছে সবরকম সহায়তা।

শিক্ষিকা কানিজ ফাতেমা ও আফরোজা আক্তার তৃষ্ণা বলেন, আমরা মূলত ছিন্নমূল শিশুদের পড়াচ্ছি। তারা অন্য শিশুদের মতো নয়। ওরা সমাজের সবধরনের সুবিধাবঞ্চিত। তাদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি। যাতে তারা মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ থেকে দূরে থাকে।

পথকলিদের পাঠশালার পরিচালক আল-আমিন সজিব বলেন, “এখানে সবাই বিনা পয়সাতে পড়াচ্ছেন। আমরা নিজেরাও শিক্ষার্থী। আমাদের পকেটের পয়সা দিয়ে শিশুদের বই খাতা কিনে দিচ্ছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো এ শিশুরা যাতে অপরাধের দিকে পা না রাখে। তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসা।”

এবিষয়ে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনের সুপারিটেনডেন্ট মো. খলিলুর রহমান বলেন, “এটি একটি ভাল উদ্যোগ। ওই সংস্থাটি আমাদের অনুমতি নিয়েই এ পাঠশালা চালাচ্ছে। আমরাও তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে আসছি।”