নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরের ১১ মাসে গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে।২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন কর্মী কাজ নিয়ে বিভিন্ন দেশে যান। আর চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত গেছে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৯ জন। গত বছরের চেয়ে চলতি বছরের ১১ মাসে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৮৮ জন কর্মী বেশি গেছে।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বেশ কয়েকটি দেশে জনশক্তি রপ্তানি অনেকটা কমেছে। তবে সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে। কমেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, লেবানন, জর্ডান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ব্রুনাই, মৌরিশাস ও ইরাকে।
জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, চলতি বছর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বাংলাদেশ থেকে মোট ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৬৯ জন কর্মী রপ্তানি হয়েছে। এরমধ্যে সৌদি আরবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী রপ্তানি হয়েছে। দেশটিতে গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়েছে। ১১ মাসে সেদেশে গেছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬৪ জন। গত বছর রপ্তানি হয়েছিল ৫৮ হাজার ২৭০ জন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলতি বছর রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ৯৯৬ জন; গত বছর রপ্তানি হয়েছিল ২৫ হাজার ২৭১ জন। কুয়েতে চলতি বছর রপ্তানি হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩ জন; গত বছর রপ্তানি হয়েছিল ১৭ হাজার ৪৭২ জন। ওমানে চলতি বছর রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৪ জন; গত বছর রপ্তানি হয়েছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৯ জন।
একইভাবে চলতি বছর কাতারে কর্মী রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯৬১ জন; গত বছর রপ্তানি হয়েছিল ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৪৫ জন। বাহরাইনে চলতি বছর রপ্তানি হয়েছে ৬৬ হাজার ৩৮২ জন; গত বছর হয়েছিল ২০ হজার ৭২০ জন। লেবাননে চলতি বছর রপ্তানি হয়েছে ৬৬ হাজার ৩৮২ জন; গত বছর হয়েছিল ১১ হাজার ১১১ জন। জর্ডানে চলতি বছর রপ্তানি হয়েছে ২১ হাজার ৭৪ জন; গত বছর হয়েছিল ২২ হাজার ৯৩ জন।
মালয়েশিয়া বাংলাদেশের শ্রমিকদের বড় শ্রমবাজার। দেশটিতে বেসরকারিভাবে জনশক্তি রপ্তানি অনেকদিন ধরেই বন্ধ। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে। চলতি বছর ১১ মাসে সেখানে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে ৩৯ হাজার ৮৯৬ জন। বছর শেষে এ সংখ্যা বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গত বছর দেশটিতে কর্মী রপ্তানি হয়েছিল ৩০ হাজার ৪৮৩ জন।
মালয়েশিয়া সফরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ কর্মীদের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে কথা বললে তিনি বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন। তোফায়েল আহমেদ নতুন করে কর্মী নেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী রপ্তানির বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। খুব শিগগির দেশটি থেকে ভালো খবর পাওয়া যাবে।
সিঙ্গাপুরের নির্মাণখাত বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশটিতে চলতি বছর ১১ মাসে কর্মী রপ্তানি হয়েছে ৫১ হাজার ১২৬ জন। গতবছর রপ্তানি হয়েছিল ৫৫ হাজার ৫২৩ জন। নভেম্বর পর্যন্ত অন্যান্য দেশের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় ১ হাজার ৫২৮ জন, মিশরে ৭৫৭ জন, ব্রুনাইয়ে ৫ হাজার ৭০ জন, মৌরিশাসে ৪ হাজার ১৫২ জন, ইরাকে ৪ হাজার ৬৩৭ জন এবং অন্যান্য দেশে ২২ হাজার ১২৩ জন কর্মী রপ্তানি হয়েছে।
সৌদি আরবে কর্মী রপ্তানি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিএমইটি’র একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে সৌদি আরবে কর্মী রপ্তানি হঠাৎ করেই কমে যায়। এরপর দেশটিতে কর্মী রপ্তানি বাড়াতে সরকারের উচ্চ পর্যায়, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বর্তমান মন্ত্রী নুরুল ইসলামের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে কর্মী রপ্তানি বেড়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সৌদি আরবে কর্মী রপ্তানি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
তিনি বলেন, আশা করা যাচ্ছে বছর শেষে সৌদি আরবে কর্মী রপ্তানি আরো বাড়বে। অনেকগুলো চাহিদাপত্র পাওয়া গেছে।