নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুতে পৃথিবীর প্রায় সব দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেছেন, এ ইস্যুতে দেশটির বিভিন্ন লেভেলে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে অং সান সুচির সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। ম্যাডাম সুচি রোহিঙ্গা ইস্যুটি সুরাহার ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আর কঠোর টহলের পরও যেসব মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, মানবিক কারণে আমাদের যেটুকু করার তা করছি। খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা তাদের প্রদান করা হচ্ছে। আজ সোমবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, আন্তর্জাতিক মহল ছাড়াও আশিয়ানভুক্ত কয়েকটি দেশও বিষয়টি সুরাহার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি বলেন, অং সান সুচির সঙ্গে আলোচনায় তিনি যেসব কথা বলেছেন তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। তিনিও চেষ্টা করছেন। তাঁর নিজেরও সদিচ্ছা রয়েছে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০০১ থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জাম ভাড়া দিয়ে বার্ষিক গড়ে ৪৩৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা আয় করেছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে অস্ত্রশস্ত্র ভাড়া বাবদ সর্বাধিক ৬৪৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা আয় হয়েছে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানগত বাস্তবতার নিরিখে রচিত। অপরদিকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অর্থনৈতিক, প্রযুক্তি ও প্রকল্প সহযোগিতা এবং বাণিজ্য অর্থায়নসহ উন্নয়ন রাজনীতির বহুধাপ বিশিষ্ট ধারায় প্রবাহিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বতন্ত্র, স্বকীয় এবং উন্নয়নের পরিভাষায় এক-অপরের পরিপূরক। এ প্রেক্ষাপটে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের কোন নেতিবাচক প্রক্রিয়া কোথাও পড়বে বলে আমরা মনে করি না। আর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল নীতিই হচ্ছে ‘সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়’।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ বরাবরই প্রতিবেশী দেশসহ প্রতিটি রাষ্ট্রের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে বিশ্বাসী। আর প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র নীতির প্রাধিকার। ভারতের ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটবে না।
জাতীয় পার্টির সদস্য সেলিম উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, গত ১৪-১৫ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর বাংলাদেশ সফর ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ সফর চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গভীর ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তিনি আরো জানান, চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের ফলে দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, ভৌত-অবকাঠামো, সড়ক-সেতু, রেল ও জলপথে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী উৎপাদন, যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি, কৃষি ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার পথ প্রশস্ত ও গভীরতর হবে। এছাড়াও দু’দেশের মধ্যে সমুদ্র-সম্পদসহ দুর্যোগ মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসের মতো বৈশ্বিক বিষয়ে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উম্মোচিত হয়েছে।
সরকারী দলের আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের মূল প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভৌগলিক নৈকট্য, ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং অভিন্ন মূল্যবোধের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক কাঠামোর আওতায় পারস্পরিকভাবে লাভজনক সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরিতে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি, কোন দেশ এককভাবে উন্নতি করতে পারে না। এজন্য প্রতিবেশী দেশসমূহের সহায়তা প্রয়োজন। দারিদ্র ও বঞ্চনামুক্ত একটি সুখি, সমৃদ্ধ ও উন্নত দক্ষিণ এশিয়া আমাদের স্বপ্ন আর সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশ একত্রিত হয়ে কাজ করার কোন বিকল্প নেই।