আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও স্বনামধন্য ১’শ স্থপতি ঢাকার ৩১টি পার্ক ও খেলার মাঠকে বদলে দেয়ার এক কঠিন চ্যালেঞ্জ শুরু করতে যাচ্ছেন। আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা দক্ষিণে এসব পার্ক ও খেলার মাঠে নির্মাণযজ্ঞ ও অবকাঠামো তৈরির পর সবার জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। ‘জল সবুজে ঢাকা’ নামের এ প্রকল্পে শ্মশানঘাটও উন্নয়নের তালিকার রয়েছে। ডোমদের থাকার ঘরও নির্মাণ করা হবে। এমনকি ওসমানী উদ্যানকে আরো সংস্কার করা হবে।
এ প্রকল্পের অন্যতম রুপকার স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, ১৭ থেকে ১৮টি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের পর ২থেকে ৩ বছর পর্যন্ত মাঠ ও পার্কগুলো তদারকি করবে, প্রশিক্ষণ দেবে দেখভালকারীদের যাতে তা স্থায়ী রক্ষণাবেক্ষণের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। এসব মাঠে কোনো দেওয়াল থাকবে না। শিশুরা খেলাধুলা যেমন করবে তেমনি বয়স্ক থেকে শুরু করে তরুণ তরুণীরা ব্যায়াম ও প্রাতভ্রমণ করবেন নিশ্চিন্ত মনে।
স্থানীয় কাউন্সিলররা এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরাসরি জড়িত থাকবেন এবং তাদের মধ্যে থেকে ‘বেষ্ট কাউন্সিলর অব দি ইয়ার’ পদকে যেমন ভূষিত করা হবে, আবার একই সঙ্গে যারা ব্যর্থতার পরিচয় দেবেন তাদেরকেও জবাবদিহী করতে হবে। এধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভব কি না কাউন্সিলরদের কেউ কেউ এমন সন্দিহান হয়ে উঠলে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন তাদের তিন বছর আগের হাতির ঝিলের চিত্র মনে করা তাগিদ দেন। এও মনে করিয়ে দেন এধরনের প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণ হবে বড় চ্যালেঞ্জ। সেখানেই কাউন্সিলরদের মূল চ্যালেঞ্জ। তবে কাউন্সিলরদের এমন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতা আছে বলেই বিশ্বাস করেন মোবাশ্বের হোসেন।
এসব পার্ক ও খেলার মাঠে সবুজায়ন করতে বৃক্ষরোপন করা হবে। আরেক ধাপে থাকছে অবকাঠামো নির্মাণ। প্রয়োজনে বড় আকারের বৃক্ষ আমদানি করা হবে বিদেশ থেকে। ১৮ বছর ধরে যেসব স্থপতি ও পরিবেশবাদিরা ঢাকার পার্ক ও মাঠ রক্ষার আন্দোলন করে আসছেন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুধু তাদের যুদ্ধে নতুন রসদ যোগাবে তাই নয়, উপকৃত হবে পুরো ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বড় বড় শহরের মানুষও। প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরতে থাকছে আন্তর্জাতিকমানের প্রকাশনাও। প্রকল্পে জড়িত রয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতি রফিক আজম ও ইকবাল হাবিবের মত বরেণ্য নির্মাণ বিশেষজ্ঞ। তাদের কাছে প্রচ- আবেদন এসেছে, দয়া করে এসব মাঠ ও পার্কে দোকানপাট বরাদ্দের কোনো সুযোগ রাখবেন না।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন আশা করছেন প্রকৃতিকে আমল দিয়েই নির্মাণশৈলীর পরিচয় রাখবেন স্থপতিরা। তার দু:খ বিভিন্ন জরিপে প্রায়ই দেখতে পান ঢাকা বসবাসের অযোগ্য শহর। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে সেই জরিপ উল্টোরথে চলতে শুরু করবে এমনও মনে করছেন ঢাকার আশাবাদি অনেক কাউন্সিলর।
স্থপতি ইকবাল হাবিব মনে করেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে আগামী দশ বছরে ঢাকা অন্যতম সুন্দর শহরে রুপান্তরিত হবে।
বাচ্চাদের খেলার মাঠ নেই, থাকলেও তা খেলার উপযুক্ত নয়, রিক্সা বা ভাঙ্গা যানবাহনের দখলে পাকগুলো, সন্ধ্যার পর ভুতুড়ে পরিবেশ, রাতে গা ছমছম করা নেশাখোরদের দখলে চলে যাওয়া পার্ক ও মাঠে ঢাকার নাগরিকরা নির্ভয়ে নিরাপদে বায়ু সেবন করতে পারবেন এমন প্রকল্প সেধরনের আশ্বাস দিচ্ছে। এধরনের আশ্বাস ও সুবিধা নিশ্চিত করতে নাগরিকদেরও দায়িত্ব ও করণীয় সম্পর্কে প্রকল্পে সুনির্দিষ্ট কিছু দিক নির্দেশনা থাকছে বলে জানান স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।