কোথাও আনন্দ কোথাও বিক্ষোভ
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার পর কোথাও প্রার্থীর পক্ষে আনন্দ মিছিল এবং কোথাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন স্থানীয় নেতা-কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা।
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মত উপেক্ষা করে একজন ‘বিতর্কিত’ ও দল বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকে জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন জামালপুরের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা।
সিদ্ধান্ত বাতিল করে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ লাগাতার কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
শুক্রবার রাতে অ্যাডভোকেট জাহিদ আনোয়ারকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তারা শহরের দয়াময়ী চত্বর, গেটপাড় ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় টায়ার ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন।
রাত ১০টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জেলার সব সড়ক অবরোধ করে রাখেন। গতকাল একই দাবিতে জেলা সদরসহ সাত উপজেলায় দিনব্যাপী সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তারা।
এ সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের একক প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরী।
তাকে না দিয়ে দলবিচ্ছিন্ন, সুবিধাবাদী ও একজন রাজাকারপুত্রকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কুমিল্লায় সাবেক নৌবাহিনী প্রধান আবু তাহেরকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ বঞ্চিতরা। তার বিরুদ্ধে একজন স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াইয়েরও ঘোষণা দিয়েছেন।
জানা গেছে, কুমিল্লা জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ছাড়াও নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, চিকিৎসক নেতাসহ ১৮ জন আবেদন করেছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন লাভ করেন বরুড়া উপজেলার বাসিন্দা সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. আবু তাহের।
মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আলহাজ ওমর ফারুক বলেন, ‘যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি তো জেলার ১৬ উপজেলার নেতাদেরই চেনেন না। ১৬টি উপজেলার নামও বলতে পারবেন না।
তবে আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেব না।’ দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম-সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন স্বপন বলেন, ‘গত ছয় মাসে জেলার ১৬ উপজেলায় গণসংযোগ করে নেতা-কর্মী ও ভোটারদের যে সমর্থন পেয়েছি, তাদের সেই দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব।’
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী ঘোষণা করায় আনন্দ মিছিল করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় শহরের টাউন হলে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে আনন্দ মিছিল বের হয়ে প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে।
মিছিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। তারা জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক সরদার মো. শাহ আলমকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে অভিনন্দন জানান।
চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান প্রশাসক ও দলের উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম। তিনি চট্টগ্রামে ‘ক্লিন ইমেজের’ মানুষ হিসেবে পরিচিত। নানা জল্পনা-কল্পনার পর সালামের নাম ঘোষণা হলে নেতা-কর্মীরা আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েন। বিভিন্ন স্থানে মিষ্টিও বিতরণ করা হয়।
এ ব্যাপারে এম এ সালাম বলেন, ‘সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে দায়িত্ব দিয়েছেন তা রেখেছি। চেয়ারে বসে দল বা নেত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হতে দিইনি। দুর্নীতিসহ বিভিন্ন ব্যাপারে ছিলাম জিরো টলারেন্স। দায়িত্ব নিয়ে জেলা পরিষদকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। পাঁচ বছরে জেলা পরিষদ থেকে ১২৪ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে।’
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পুনরায় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধা ডা. এ বি এম জাফর উল্যাহ।
এ কারণে গতকাল সন্ধ্যার পর বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনী পাবলিক হলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা একত্রিত হয়ে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। অভ্যন্তরীণ বিরোধ ভুলে তারা এতে যোগ দেন।
মনোনয়ন পেয়ে ডা. জাফর উল্যাহ বলেন, যোগ্যতা-অভিজ্ঞতার বিবেচনায় তাকে মনোনীত করায় তিনি সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রতি কৃতজ্ঞ।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলীকে কেন্দ্র সমর্থন দেওয়ায় আনন্দ মিছিল করেছে জেলা যুবলীগ। গতকাল দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান প্রশাসক ও দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হককে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। শুক্রবার রাতে নীলফামারীতে এ খবর এসে পৌঁছলে জেলা ছাত্রলীগ সহসভাপতি মনিরুল হাসান শাহ্ আপেলের নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন। শুক্রবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এক সভায় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। মানিকগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে ১১ জন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত গোলাম মহীউদ্দীন এ পদে মনোনয়ন পান। এর আগেও তিনি জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।