কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : মোবাইল ফোনে আলাপ, এর পর মন দেয়া নেয়া। গত দুই বছর সবকিছু ঠিক ঠাকই চলছিল। শেষ পর্যন্ত কুয়াকাটা থেকে ডাক আসে প্রেমিকের। সাড়া দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বৃহস্পতিবার কুয়াকাটা যাওয়ার পরই সব ওলটপালট হয়ে যায়। ‘প্রেমিক’ ওবায়দুল সনিয়াকে তাঁর নিজের মোটরসাইকেলের পিছনে বসিয়ে শহর ঘুরিয়ে দেখায়।
এক পর্যায়ে প্রেমিকার মোবাইল ফোন ও পার্টস ছিনিয়ে নিয়ে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে প্রেমিকাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ওবায়দুল।
সব কিছু এতো দ্রুততার সঙ্গে ঘটছিল যে সনিয়া কোনো কিছু বুঝে ওঠতো পারছিল না। নাটকীয় এই অবস্থায় রাস্তার ওপর পড়ে যাওয়ার পরও ‘প্রেমিকের’ মোটরসাইলটি দুই হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রাখে ২০ বছর বয়সী সনিয়া। ‘প্রেমিক’ নামের এই অমানুষ এ অবস্থায় বেশ কিছুদূর টেনে নিয়ে যায় সনিয়াকে এবং এতে সনিয়া মারাত্মক আহত হয়। সনিয়ার মুখম-ল, হাত-পা থেতলে যায়। সে এখন স্থানীয় হাসপাতালের বিছানায় ব্যথায় কাতরাচ্ছে।
রক্তাক্ত অবস্থায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে স্থানীয়রা রাস্তা থেকে উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করেছে সনিয়াকে। ‘প্রেমিক’ নামের কলঙ্ক ওবাইদুল ঘটনার পর থেকেই পলাতক। আহত সনিয়ার বাড়ি বাখেরগঞ্জ উপজেলার শহরে। পিতার নাম মো.খলিল হাওলাদার।
হাসপাতালের বিছানায় কথা হয় আহত সনিয়ার সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কুয়াকাটার আনোয়ার কাজীর ছেলে ওবায়দুলের সাথে দুই বছর আগে মোবাইলে ফোনে তার পরিচয়। এক পর্যায়ে তা প্রেমের সম্পর্কে গিয়ে ঠেকে। সেই সুত্রে বৃহস্পতিবার বিকালে আমি আমার ফুফাতো ভাই বাবুলকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বাসে করে কুয়াকাটায় আসি এবং ওবায়দুলকে খুঁজে বের করি।’
সনিয়া বলেন, ‘তখন কেবল রাত নেমে এসেছে। প্রথম থেকেই তাঁর আচরণ আমার কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি। আমাকে রেখে বাবুল একসময় লাপাত্তা হয়ে যায়। রাতে হোটেলে রাখার কথা বলে ওবায়দুল আমাকে মোটরসাইকেলে তুলে। বিভিন্ন স্পটে আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় সে। এক সময় ওবায়দুল আমার মোবাইল ফোন ও পার্টস ছিনিয়ে নেয়।’
ওবাদুলের অত্যাচারের কাহিনি বর্ণনা করে সনিয়া বলেন, ‘যতটুক মনে পড়ে ও আমাকে চলন্ত হুন্ডা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তারপরও আমি তাঁর মোটরসাইকেলটি টেনে ধরেছিলাম। যতদূর পেরেছি ওকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম। পিছনের একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সনিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ এর আগে আমি একদিন ওবয়াদুলকে ফোন করি এবং কেউ একজন ফোন ধরে ওবায়দুলের ভাই পরিচয় দিয়ে গালাগাল করে।’ সনিয়া জানান, তবে ওবায়দুলের চাচাতো ভাই জাকির নামের এক যুবক গোটা বিষয়টি অবগত রয়েছে।
ঘটনার পর থেকে ওবায়দুলের মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
কলাপাড়া হাসপাতালের ডাঃ জুনায়েত খান লেনিন জানান, সনিয়ার আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। তার মুখমন্ডলসহ হাতে-পায়ে অসংখ্য ক্ষত চিহৃ রয়েছে।
মহিপুর থানার ওসি এসএম মাকসুদুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘ওবায়দুলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ওকে গ্রেপ্তার করার আমাদের প্রায়োরিটি। তারপর অন্যকিছু।’