নিউজ ডেস্ক : মানিকগঞ্জ, ২৩ সেপ্টেম্বর- বেঁধে দেয়া গতি না মেনে গাড়ি চলাচল ঠেকাতে মহাসড়কে বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার শুরু করেছে হাইওয়ে পুলিশ। এই যন্ত্রের নাম ‘স্পিড ডিটেক্টর ডিজিটাল মেশিন’। কোনো গাড়ি নির্ধারিত গতি সীমা না মানলেই ধরা পড়ছে এই যন্ত্রে, আর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তাৎক্ষণিক।
ঈদের আগে থেকে মানিকগঞ্জ পুলিশের এই উদ্যোগ বেশ কার্যকর প্রমাণ হয়েছে। বাড়ি ফেরা ও নগরে ফেরার সময় দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি হলেও এই মহাসড়ক তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ছিল। অতিরিক্ত গতিতে চলা যানবাহন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় এটি সম্ভব হয়েছে-বলছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
মানিকগঞ্জ পুলিশ বলছে, গাড়ির গতিসীমা মাপতে ‘স্পিড ডিটেক্টর ডিজিটাল মেশিন’ সারা দেশেই সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পারে। কারণ, সে ক্ষেত্রে চালকরা জানবে অতিরিক্ত গতিতে চললেই ব্যবস্থা নেয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ অংশে ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস পযন্ত ৫৯৬ টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৩১৫ জন। আহত হয় এক হাজার ২২৪ জন। এর মধ্যে ছিলেন বিশিষ্ট চলচিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মনির এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণাালয়ের সচিব রাজিয়া বেগম এবং বিসিকের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান।
মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য যেসব কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে তার একটি অতিরিক্ত গতি। মহাসড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া থাকলেও তা না মানলে ব্যবস্থা নেয়ার উদাহরণ বিরল। কারণ, কোনো গাড়ি এই সীমা অতিক্রম করেছে, তা বোঝার উপায় ছিল না এতদিন।
এই পরিস্থিতিতে পাল্টে দেয়ার জন্যই ‘স্পিড ডিটেক্টর ডিজিটাল মেশিন’ ব্যবহার করছে পুলিশ। গত বুধবার সরেজমিনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের বাথুলী এলাকায় গিয়ে হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট নান্নু মণ্ডল ও বানিয়াজুরী এলাকায় বরংগাইল হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট ইয়ামিন-উদ-দৌলাকে স্পিড গানের মাধ্যমে গাড়ির গতি মাপতে দেখা গেছে।
নান্নু মণ্ডল বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলার কথা। কিন্তু সেখানে গাড়ির গতি প্রায়ই উঠছে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। যেসব গাড়ি অতিরিক্ত গতিতে চলাচল করছে তাদের বিরুদ্ধে মোটরযান আইনে ১৪২ ধারায় মামলা দেওয়া হচ্ছে।
সার্জেন্ট ইয়ামিন-উদ-দৌলা বলেন, শুধু এই মহাসড়ক, সব জাতীয় মহাসড়কেই সড়কেই এই যন্ত্রের মাধ্যমে গতি নিয়ন্ত্রণের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, ঈদের আগে ও পড়ে বিভিন্ন মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রানহানি ঘটনা ঘটলেও মানিকগঞ্জে তা হয়নি। ‘স্পিড ডিটেক্টর মেশিন’ নিয়ে অভিযান চালানোর কারণে চালকরা সতর্ক হয়ে গাড়ি চালিয়েছে।
নুরুর আলম বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ অংশে অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চলাচল করায় মামলা হয়েছে আটশটি।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, যেসব এলাকায় চালকরা অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালান সেসব এলাকায় স্পিড ডিটেক্টর মেশিন চালু করে যানবাহনের সামনের নম্বর প্লেটের দিকে তাক করে ক্লিক করা হয়। এরপরই অতিরিক্ত গতির বিশদ বর্ণনা মেশিন থেকে প্রিন্ট হয়ে আসে। কোন চালক যদি চ্যালেঞ্জ করেন তাহলে তাকে মেশিন থেকে বের হওয়া নথি দেখানো হয়।