g আলাউদ্দিন খাঁকে যোগ্য সম্মান দেয়নি বাংলাদেশ | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শুক্রবার, ৬ই অক্টোবর, ২০১৭ ইং ২১শে আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

আলাউদ্দিন খাঁকে যোগ্য সম্মান দেয়নি বাংলাদেশ

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ২০, ২০১৬

---

alauddin khaউপমহাদেশের খ্যাতনামা সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-র স্মৃতি সংগ্রহশালা ‘সঙ্গীতাঙ্গন’-এ হামলার প্রতিবাদে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তার পরিবার ও উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতব্যক্তিত্বরা। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, পণ্ডিত যশরাজ, ওস্তাদ আশীষ খাঁ, ওস্তাদ রশিদ খান ও পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। তাদের প্রতিক্রিয়ায় ফুটে উঠেছে ক্ষোভ আর হতাশা। আলাউদ্দিন খাঁ-র নাতি এবং ওস্তাদ আলি আকবর খাঁ-র পুত্র আশীষ খাঁ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশ কখনোই দাদুকে যোগ্য সম্মান দেয়নি।’গত ১২ জানুয়ারি এক মাদরাসা ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অজুহাত ছাড়াই ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কার্যালয়ের ওপর হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এ হামলায় আলাউদ্নি খাঁ-র বাসভবনসহ তার ব্যবহৃত সারেঙ্গি ও পাখওয়াজ, বেশ কয়েকটি বাঁশি, দুটি সরোদ, দুটি সেতার, চারটি তানপুরা, মাইসোরের রাজার দেয়া দুটি কার্পেট, হজে যাওয়ার সময় সৌদি সরকারের দেয়া দুটি জায়নামাজ, সঙ্গে তার লেখা ২০টি চিঠি, অন্নপূর্ণা দেবী, পণ্ডিত রবিশঙ্কর (তার জামাতা) এবং ওস্তাদ আলি আকবর খাঁ-র সঙ্গে তার বিরল কিছু ফটোগ্রাফ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।

এ ঘটনায় দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের পাশাপাশি উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় গুরুরাও তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন। ছোটবেলায় আলাউদ্দিন খাঁ-র কন্যা অন্নপূর্ণা দেবীর কাছে শিক্ষাগ্রহণের সুবাদে দীর্ঘদিন তার স্নেহপূর্ণ সাহচর্য পেয়েছিলেন উপমহাদেশের বিখ্যাত বাঁশিবাদক চৌরাসিয়া। তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করে কলকাতার একটি দৈনিককে চৌরাসিয়া বলেন, ‘এটা মানবতার মৃত্যু। এই ধরনের ঘটনা সামাজিক কাঠামোকেই বিপর্যস্ত করে। কাল তো জনতা উত্তেজিত হয়ে সঙ্গীতশিল্পীদেরও আক্রমণ করতে পারে। ওরা আমাকেও মেরে ফেলতে পারে।’

এ ঘটনায় হতবাক পণ্ডিত যশরাজও। বিস্মিত হয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সঙ্গীত এত ভালোবাসে। সেখানে এ ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে? হামলাকারীরা কোনো ভুল পথে চালিত হয়েছে। কী ধ্বংস করছে, ওরা তা জানত না।’ ওস্তাদ আশীষ খাঁ-র কণ্ঠে ব্যক্ত হয় আরো তীব্র অথচ বেদনাহত প্রতিক্রিয়া। ‘এটা লজ্জাজনক ঘটনা। আসলে বাংলাদেশ কখনোই দাদুকে যোগ্য সম্মান দেয়নি। মর্মাহত বোধ করছি। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নিক বাংলাদেশ সরকার’, বলেন তিনি।

মানুষের প্রতিই যেন ঘৃণা ফুটে উঠেছে ওস্তাদ রশিদ খানের কণ্ঠে! বলেছেন, ‘মানুষ কীভাবে এতটা নীচে নামতে পারে!’ দুঃখ করে তিনি বলেন, ‘শিল্পীরা সব জায়গাতেই সহজ নিশানা হয়ে যাচ্ছেন। মৃতদের স্মৃতিকেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।’ মাসখানেকের মধ্যেই ‘সঙ্গীতাঙ্গন’-এ যাওয়ার কথা পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের। এর মধ্যেই এই খবরে হতচকিত শিল্পী। বললেন, ‘ওস্তাদ আল্লাউদ্দিন খাঁ সাহেবের মাইহার ঘরানার শিল্পী আমি। তার সব স্মৃতি এভাবে ছাই হয়ে গেছে জেনে মারাত্মক কষ্ট হচ্ছে। বামিয়ান বুদ্ধমূর্তির ওপর তালিবান হানার মতোই ভয়াবহ এই ঘটনা।’

উল্লেখ্য, সেতার, সানাই এবং রাগসঙ্গীতে বিখ্যাত ঘরানার গুরু হিসেবে বিশ্বে প্রখ্যাত বাংলাদেশি সঙ্গীতজ্ঞের নাম আলাউদ্দিন খাঁ। যিনি ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ নামেই বিশ্বে পরিচিত। সরোদ তার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রধান বাহন হলেও সেক্সোফোন, বেহালা, ট্রাম্পেটসহ আরো প্রচুর বাদ্যযন্ত্রে তিনি ছিলেন পারদর্শী।

উনিশ শতকে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ জন্মেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। মৃত্যুর পর তার ঐতিহাসিক বাসভবন সংলগ্ন তার বালক বয়সের সঙ্গীত সাধনার ঘরটিতে এই সমেয়র কিশোর–কিশোরীদের সঙ্গীতসাধনার দীক্ষা চলত। কিন্তু গত ১২ জানুয়ারি আচমকা ঝড়ে সব তছনছ হয়ে যায়। এ ঘটনায় মোট ৬ হাজার ২০০ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ।

এ জাতীয় আরও খবর