আল আমিনে আস্থা স্ট্রিকের
---
আল আমিনের বোলিং অ্যাকশনটা ভালোই বোঝেন বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক l ফাইল ছবিআল আমিন নিজেও বুঝতে পারছেন না বোলিং অ্যাকশন নিয়ে অভিযোগটা কীভাবে উঠল। সেন্ট লুসিয়ায় আসার দিন সেন্ট ভিনসেন্ট বিমানবন্দরে এ নিয়ে একটু বিস্ময়ই প্রকাশ করলেন, ‘আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আসলে। আগে তো কখনো আমার অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি…।’
আল আমিন বুঝতে না পারলেও সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টের দুই আম্পায়ার দক্ষিণ আফ্রিকার মারিয়াস এরাসমাস এবং ইংল্যান্ডের রিচার্ড ইলিংওয়ার্থের চোখে নাকি তাঁর ৩০-৩৫টি ডেলিভারি সন্দেহজনক মনে হয়েছে! যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁরা অভিযোগ এনেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে আল আমিনের করা নির্দিষ্ট তিনটি ওভারে কয়েকটি বলের অ্যাকশন নিয়ে।
একটি সূত্রে অবশ্য জানা গেছে, যে আম্পায়াররা অভিযোগটি তুলেছেন, তাঁরাই নাকি আবার ব্যক্তিগত পর্যায়ে মন্তব্য করেছেন, আল আমিনের অ্যাকশনে খুব বেশি সমস্যা নেই। তাঁদের ধারণা, হয়তো ক্লান্তির কারণেই কিছু বল ও রকম হয়েছে। কারণ, যেসব বলের অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলোর সবই ইনিংসের ৬০ ওভারের পরে করা।
একই মত বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার হাবিবুল বাশার এবং সেন্ট ভিনসেন্টে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খানেরও। তাঁরাও বলছেন ক্লান্তির কারণে আল আমিনের দু-একটা ডেলিভারি এদিক-সেদিক হলেও হতে পারে। আইসিসির গবেষণাগার থেকে নিশ্চয়ই তিনি বোলিং চালিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়ে যাবেন।
সোহাগের পর আল আমিন!
বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক এই দলেও নেই। তিনি এগিয়ে আরও একধাপ, ‘আমার মনে হয় না ক্লান্তি থেকেও কিছু হয়েছে। আমি তার ফুটেজ দেখেছি এবং যতটুকু দেখেছি তাতে আগের ওভারগুলোর চেয়ে ওই ওভারগুলোর কোনো পার্থক্য চোখে পড়েনি’—আল আমিনের অ্যাকশনে যথেষ্ট আস্থা রেখেই পরশু বোশেজো স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন সাবেক এই জিম্বাবুইয়ান পেসার।
আম্পায়াররা যতই আল আমিনের অ্যাকশনে খুঁত খুঁজে পান, স্ট্রিক উড়িয়ে দিতে চাইলেন সে অভিযোগ, ‘আমি ফুটেজ দেখেছি। মনে হয় না এটা কোনো সমস্যা। আমার বিশ্বাস তার অ্যাকশন ঠিকই আছে।’ তার পরও আল আমিনের জন্য কোচের সহমর্মিতা, ‘তাদের (আম্পায়ার) দৃষ্টিতে হয়তো কিছু সন্দেহজনক মনে হয়েছে। তারা এখন অ্যাকশন পরীক্ষা করে দেখবে। তার (আল আমিন) জন্য খারাপই লাগছে, কারণ তাকে এই প্রক্রিয়াটার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আইসিসির নিয়ম তো মানতেই হবে।’
বোলিং অ্যাকশন নিয়ে আইসিসি সম্প্রতি একটু বেশিই কড়াকড়ি শুরু করেছে। সেটারই জের, গত কিছুদিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বেশ কয়েকজন বোলারের অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠা। তবে আল আমিন এখানে ব্যতিক্রম, কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যাঁদের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে তাঁরা সবাই স্পিনার, আর তিনি পেসার। পেসারদের অ্যাকশন নিয়ে এ রকম অভিযোগ বিরল মানলেও স্ট্রিক উদাহরণ দিলেন, ‘পেসারদের ক্ষেত্রে এ অভিযোগ খুব কমই ওঠে। তবে একেবারেই যে ওঠে না তা নয়। এর আগে শোয়েব আখতার, এমনকি ব্রেট লির অ্যাকশন নিয়েও সন্দেহ করা হয়েছিল।’ আল আমিনের অ্যাকশন নিয়ে কী কারণে অভিযোগ উঠতে পারে, সেটারও একটা ব্যাখ্যা দিতে চাইলেন সাবেক এই ফাস্ট বোলার, ‘আল আমিনের বাহুটা সোজা নয়। প্রকৃতিগতভাবেই সেটা একটু বাঁকা। কোনো নির্দিষ্ট একটা দিক থেকে মনে হতেই পারে যে বল করার সময় তার হাত বেঁকে যাচ্ছে। কিন্তু অন্যদিক থেকে তা মনে হবে না।’ অন্যদের মতো তাঁরও আশা, আইসিসির পরীক্ষাগার থেকে বোলিংয়ের ছাড়পত্র নিয়েই বেরিয়ে আসবেন আল আমিন, ‘আমি ক্রীড়া বিজ্ঞানী নই। আমার পক্ষে এক শ ভাগ সঠিক বলা সম্ভব নয়। তবে পরীক্ষার ফলাফলে যদি তাঁর অ্যাকশন সন্দেহজনক প্রমাণিত হয়, আমি বিস্মিতই হব।’
নিয়ম অনুযায়ী বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার ২১ দিনের মধ্যে আইসিসি অনুমোদিত কোনো পরীক্ষাগারে অ্যাকশন পরীক্ষা করাতে হয়। হাতে সেই সময়টুকু আছে বলে আজ থেকে সেন্ট লুসিয়ায় শুরু দ্বিতীয় টেস্টে তাঁকে খেলানোরই সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক তাই চাইছেন আল আমিন আপাতত এই টেস্টটার দিকেই মনোযোগ দিক, ‘চ্যালেঞ্জটা মূলত মানসিক। দ্বিতীয় টেস্টে তাকে খেলতে হবে। কাজেই দৃষ্টিটা আপাতত সে খেলার দিকেই রাখছে। কোচ, সতীর্থ এবং আমরা যারা কোচিং স্টাফ আছি সবাই তাকে সাহস দিচ্ছি।’