বাংলাদেশে মাছে আর ফরমালিন নেই!
অনলাইন ডেস্ক : মাছে-ভাতে বাঙালি— প্রবাদটির কার্যকারিতা এখন তেমন নেই। তারপরও বাংলাদেশিদের প্রিয় খাবারের তালিকায় কমবেশি মাছের প্রণালী থাকা চাই-ই চাই।
অথচ এই মাছই কয়েক বছর আগেও আতঙ্কের আরেক খাবারে পরিণত হয়েছিল। সেটি শুধুমাত্র ফরমালিনের কারণে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাড়তি মুনাফা লাভে বেশি দিন সংরক্ষণের জন্য মাছে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ফরমালিন মেশাতেন।
তবে, ফরমালিন নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের মৎস অধিদফতর। তাদের দাবি, বাংলাদেশের বাজারে মাছে এখন ফরমালিনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
অবাক হচ্ছেন! না, যুক্তিও রয়েছে মৎস অধিদফতরের। গেল কয়েক বছর ধরে অভিযানের সাফল্যে মাছ থেকে ফরমালিন দূর হয়েছে বলে দাবি তাদের।
শুধুমাত্র চলতি বছরের মার্চে সারা দেশে মৎস অধিদফতর ফরমালিনবিরোধী ৩৪৭টি অভিযান এবং ২৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। এত বড় পরিসরের অভিযানেও বাজারগুলোতে ফরমালিনের কোনো অস্তিত্বই পাননি কর্মকর্তারা।
আর গেল বছর জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ২ হাজার ৭৯৩টি এমন অভিযান ও ৪২৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মৎস অধিদফতর। এসব অভিযানেও মাত্র ৫৯ কেজি ফরমালিন মিশ্রিত মাছ জব্দ করা হয়।
অভিযানের সাফল্যে ইতোমধ্যে ৫০ জেলার ১০৫টি উপজেলাকে শতভাগ ফরমালিন মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এসব উপজেলায় ফের যাতে ব্যবসায়ীরা মাছে ফরমালিন দিতে না পারেন, সেজন্য স্থানীয় মৎস অফিস সতর্ক রয়েছে, নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।
ফরমালিন মুক্ত মাছ পাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অভিযানের সাফল্য ছাড়াও সরকারের শক্ত অবস্থানকে সামনে এনেছেন।
তাদের ভাষ্যে, ফরমালিন আমদানিতে প্রচুর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এখন নামে মাত্র কয়েকটি শিল্প কারখানার মালিক ফরমালিন আমদানি করতে পারেন। ফলে মাছ ব্যবসায়ীদের পক্ষে ফরমালিন পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে গেছে।
এছাড়া ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ, বিক্রয় ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ হিসেবে এর অপব্যবহার রোধে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন করা হয়েছে।
আইনের বাস্তবিক প্রয়োগের কারণেই মাছ ছাড়াও অন্যান্য খাবার সামগ্রীতে ফরমালিনের মাত্রা কমে গেছে বলে পরিবর্তন ডটকমকে জানিয়েছেন মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব অসিম কুমার বালা।
এ বিষয়ে মৎস অধিদফতরের উপ-পরিচালক (মৎস চাষ) ড. মো. জিল্লুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘মুখ নয়, এখন পরিসংখ্যানই কথা বলছে। এতগুলো অভিযানে মাত্র ৫৯ কেজি মাছ জব্দ প্রমাণ করে ফরমালিন অস্তিত্ব প্রায় শূন্যের কোটায়।’
তিনি বলেন, ‘এখনো যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে, সেটি বিদেশ থেকে আসা মাছে। এটি ঠেকাতেও ২ বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন পাস হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অভিযানের ফলে ব্যবসায়ীরা সাবধান হয়েছেন। প্রচারে জনগণও সচেতন হয়েছেন। তারা এখন বাজার থেকে জীবিত মাছ কিনে খেতেই বেশি পছন্দ করেন।’
মৎস কর্মকর্তা মো. মইনুল ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘অভিযানে আমরা কিছু বাজারে গিয়ে বরফে ফরমালিন পেয়েছি। কিন্তু, সেগুলো মাছ নয়, অন্য কাজের জন্য বানানো। সেখান থেকেই হয়তো কিছুটা মাছে চলে আসছে। তবে, সেটি বন্ধেও কি করা যায়, আমরা খতিয়ে দেখছি।’
নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের উপ-সচিব গবেষক ড. শেখ নুরুল আলম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও মৎস অধিদফতর মিলে গেল বছর ৪ হাজার ৭০৫টি অভিযান এবং ৮৫৪টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। সেখানে মাত্র ৫৪ কেজি ফরমালিনযুক্ত মাছ পাওয়া গেছে। এতে করে এটা স্পষ্ট, বর্তমানে দেশের বাজারে মাছে কোনো ফরমালিন নেই।’
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক আবু শহিদ সালেহ মোহাম্মাদ জুবেরি জানান, ফরমালিন মেশাতে হলে মাছ টানা ৯ ঘণ্টা ফরমালিন মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। মানুষ জীবিত মাছ কেনায় আগ্রহী হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আর এই কাজে আগ্রহী হচ্ছেন না।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে আসা মোট ফরমালিন বা ফরম্যালডিহাইডের ৬০ শতাংশ কাঠ ও কনস্ট্রাকশন কারখানায় ব্যবহৃত হয়। ৩০ শতাংশ বাণিজ্যিক কারখানার রাসায়নিক পদার্থ তৈরি, ৭ শতাংশ থার্মোপ্লাস্টিক রেজিন উৎপাদন এবং ২ শতাংশ পোশাক শিল্পের আবরণে (যেমন: পোশাক সাদাকারক, ফিনিসার, শক্তকারক, চামড়ার ভাজ বা রেখা দূরে এবং মচমচে ভাব তৈরিতে) ব্যবহৃত হয়।
আর বাকি ১ শতাংশ ফরমালিন প্রিজারভেটিভ এডিটিভ হিসেবে সাবান, লোশন বা শ্যাম্পু তৈরির সময় ব্যবহৃত হয়।