অদ্ভুত কিছু চাকরি, বেতন অবিশ্বাস্য!
এ যুগে ভালো বেতনের চাকরি পাওয়া সত্যিই কঠিন বিষয়। কোনভাবেই ভালো একটা চাকরি না মিললে মনের বিরুদ্ধে এমন চাকরি করতে হয় যাদের বলা হয় ‘অড জব’। এই পৃথিবীতে এমন কিছু অদ্ভুত চাকরি রয়েছে যাদের ‘অড জব’ বলতেই পারেন। কিন্তু এসব চাকরিতে প্রচুর বেতন দেওয়া হয়। যদি এসব খাত থেকে আপনি চাকরির প্রস্তাব পান, তবে ওরা যে বেতনের কথা বলবে তা শুনলে ভিরমি খাবেন। এখানে জেনে নিন এমনই কিছু অদ্ভুত চাকরির কথা যাতে মোটা বেতন মেলে।
১. বিয়েতে অতিথির ধাক্কাধাক্কিতে জেরবার হয়ে যাই আমরা। এমনও দেশ আছে যেখানে অতিথি কম পড়ে। বিয়েতে অতিথি ভাড়া করা হয়৷ এমন চাকরিও আছে দুনিয়ায়৷ জাপানে এই কাজের প্রচলন রয়েছে৷ বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথির সংখ্যা বাড়াতে ভাড়া করা হয় অন্যদের৷ টাকার পরিবর্তে তারা বিয়েবাড়ি গিয়ে খেয়ে আসেন৷ শুধু কি তাই! তার সঙ্গে পান নগদ অর্থ৷
২. কাঁদার চাকরি, রূপালি সিনেমা দেখে থাকলে আপনি এই চাকরি সম্পর্কে জানবেন৷ কিছু মানুষকে ভাড়া পাওয়া যায় কোনো মানুষের মৃত্যুতে কাঁদার জন্য৷ যাদের কাজই হলো মানুষের মৃত্যুতে গিয়ে অর্থের বিনিময়ে কেঁদে আসা৷
৩. যখন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাটা বিরক্তিকর কাজ, তখন লাইভ ম্যানিকুইন কিন্তু রোমাঞ্চকর কাজ হয়ে উঠতে পারে। বিভিন্ন শপিং মলে বা শো-রুমে ফ্যাশনেবল ডামি দাঁড়িয়ে বা বসে বা বিভিন্ন ভঙ্গিমায় থাকে। অনেকে লাইভ ম্যানিকুইন প্রদর্শন করতে চান। এর জন্য মডেলদের ভাড়া করা হয়। প্রতি ঘণ্টার জন্য মিলতে পারে ৮০০০ টাকা পর্যন্ত।
৪. চাকরির এই পদটির নাম ‘ফেস ফিলার’। ক্লিনজারের মতো প্রসাধন মুখে ব্যবহারের পর কতটুকু পরিষ্কার হলো তা বুঝতে হয় হাত বুলিয়ে অনুভব করার মাধ্যমে। এ কাজটি সবাই পারেন না। যারা স্পর্শের মাধ্যমে তীব্র অনুভূতি পান তারা এ কাজটি করেন। এদের অনেক সময় সংবেদনশীল বিজ্ঞানী বলা হয়। এ কাজে প্রতি ঘণ্টার ডিউটির জন্য মেলে ২৫ ডলার বা ২০০০ টাকার মতো অর্থ।
৫. পেপার টাওয়েলের গন্ধ নেওয়ার কাজটি সবাই পারেন না। টয়লেট টিস্যু থেকে শুরু করে পেপার টাওয়েলের গন্ধ তারাই পরখ করতে পারেন যারা গন্ধের বিষয়ে সংবেদনশীল। এরা প্রতি সপ্তাহে দায়িত্বপালন শেষে ৮০ হাজার টাকার মতো আয় করেন।
৬. চিত্রশিল্পীদের ছবি আঁকার জন্য অনেক সময়ই মডেল দরকার হয়। তাদের সামনে নগ্ন মডেল হওয়ার পেশাদার নারী-পুরুষ রয়েছেন। এ কাজে প্রতি ঘণ্টার জন্য ৫০-১০০ ডলার পর্যন্ত দেওয়া হয়। অর্থাৎ, ২-৩ ঘণ্টার সেশনে আয় ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা।
৭. এই চাকরিতে ওয়াটার স্লাইড পরীক্ষা করতে হয়। বিভিন্ন পার্ক, রাইড বা বিনোদন পার্কে ওয়াটার স্লাইড থাকে। এগুলোর নিরাপত্তা ও কতটা আরামদায়ক তা পরীক্ষা করতে হয়। এদের বিভিন্ন ওয়াটার পার্কে ভ্রমণ করে স্লাইড দেখতে হয়। মজাদার কাজ। ভ্রমণও করা যায়। বছরে ৩০ হাজার ডলার বা ২৪ লাখ টাকা উপার্জন করা যায়।
৮. বমি পরিষ্কারের চাকরি, ছোটদের বিভিন্ন পার্কে নানা ধরনের রাইড থাকে। আতঙ্ক থাকা সত্ত্বেও এসব রাইডে চড়ার লোভ সামলাতে পারে না অনেকে। এরমধ্যে এমন কিছু রাইড আছে যাতে চড়ে বমি হয় না এমন মানুষ কমই আছে। তাদের তো আর চিন্তা নেই। বমি করেই খালাস। শুনলে অবাক হবেন সেসব বমি পরিষ্কারের কাজটি করে কেউ কেউ তার জীবিকা অর্জন করছে। তাদের শুধু পার্কের বমি পরিষ্কারের জন্যই রাখা হয়। আর তারা কোনোরকম অস্বস্তিবোধ ছাড়াই কাজটি করে থাকে।
৯. অন্যের শরীরের ডিওডোরেন্টের গন্ধ পরীক্ষা করতে এ পেশার মানুষদের দিনের পুরো সময় কাটে। কোন ফ্লেভারটি আমার, আপনার জন্য ভালো হবে এটা তারাই বাছাই করেন। ডিওডোরেন্টের গন্ধ সবচেয়ে বেশি বোঝা যায় বগল আর গলায়। তাই এই বিষয়ে পেশাদার পরীক্ষককে মূলত বগলের গন্ধই বেশি শুঁকতে হয়। একবার পরীক্ষককে শুঁকতে হয় বগলের দুর্গন্ধ থাকা অবস্থায়, তারপর শুঁকতে হয় সেন্ট না দিয়ে সাধারণ গন্ধ, একেবারে শেষে সেন্ট বা পারফিউম লাগানোর পর সুগন্ধে ভরা বগলের গন্ধ। এরপরই পরীক্ষক কোম্পানিকে রিপোর্টে লেখেন সেই বিশেষ সেন্ট বা ডিওডোরেন্টের পারফরম্যান্স, ভাল দিক- খারাপ দিক, বাজারে কতটা চলবে, সেসব বিষয়ে।
১০. কুকুরের খাবার পরীক্ষার কাজটি মানুষই করে থাকে। খাবারগুলো কিন্তু বাজে নয়। শুধু কুকুরের কথা চিন্তা করে বানানো হয়েছে। যে মানুষরা মুখে খাবার দিয়েই বলতে পারেন এটা ভালো নাকি খারাপ, তাদেরই খোঁজে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান। শুনলে অবাক হবেন, কুকুরের খাবার যিনি পরীক্ষা করবেন তাকে বছরে ৪০ হাজার ডলার পর্যন্ত দেওয়া হয়। মাসে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো বেতন প্রস্তাব করে প্রতিষ্ঠান।
১১. অনেক সময়ই জনপ্রিয় কোনো পণ্য বাজারে আসলে তা কেনার জন্য প্রচুর মানুষের লাইন দেখতে পান। আইফোনের নতুন কোনো মডেল বিক্রি শুরু হলেই এমন লাইন দেখেছেন। আসলে অনেক প্রতিষ্ঠান টাকা দিয়ে মানুষ ভাড়া করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য। এদের পারিশ্রমিকও কিন্তু কম নয়। প্রতি ঘণ্টার জন্য তাদের ১৬০০ টাকার মতো দেওয়া হয়।
১২. এমনই একটি কাজ হচ্ছে গলফ বল ডাইভিং। গলফ মাঠের পাশের পুকুরে বল চলে গেলে সে বল আপনাকে পুকুরের তলদেশ থেকে উদ্ধার করে আনতে হবে। বিনিময়ে বছরে আয় করতে পারবেন ৫০ হাজার ডলার, যার বাংলাদেশি অর্থমান ৪০ লক্ষ টাকা! নিঃসন্দেহে কাজের তুলনায় অর্থের পরিমাণটা ঈর্ষণীয়। তবে হ্যাঁ, জলজ বাস্তুসংস্থান সম্বন্ধে একেবারে কিছু না জেনে এ কাজে যোগ দেয়াটা হবে বোকামি। কারণ, এসব পুকুরে ডুবুরির জন্য ওঁত পেতে থাকে নানা বিপদজনক জলজ প্রাণী। সাপ, কচ্ছপ, বিষাক্ত ব্যাঙ থেকে শুরু করে কুমির পর্যন্ত থাকতে পারে ডুবুরিকে ঘায়েল করবার জন্য!
১৩. শপিং করতে কে না ভালোবাসে? তবে সবার শপিং একরকম হয় না। কেউ ভালো পোশাক পরিচ্ছদ বেছে কিনতে পারেন, কিন্তু দামাদামি করতে পারেন না। আবার কেউ যথেষ্ট দামাদামি করলেও ভালো পণ্য কিনতে ব্যর্থ হন। তবে, ভালো পণ্য বাছাই করতে পারেন এবং একইসাথে দামাদামিতে পটু, এরকম মানুষ একেবারেই হাতেগোনা। আর এই হাতেগোনাদের জন্যই রয়েছে একটি লোভনীয় চাকরি, যার নাম পারসোনাল শপিং। ঘন্টায় ৬০ ডলারের বিনিময়ে কেবল একজন ক্রেতাকে তার পছন্দসই পণ্য কিনতে সহায়তা করতে হবে। দৈনিক ৫ ঘন্টা করে কাজ করলে একজন পারসোনাল শপারের পক্ষে বছরে ১ লক্ষ ডলারের বেশি আয় করা সম্ভব!
১৪. আরামদায়ক বিছানায় দৈনিক ৬-৮ ঘন্টা শুয়ে ঘুমিয়ে থাকা আবার কীসের কাজ? অলস মানুষের জন্য এটি হতে পারে স্বপ্নের মতো চাকরি। কেবল ঘুমানোর জন্য বছরে ৫৫-৬০,০০০ হাজার ডলার আয় করা যায়, এ কথা ভাবতেও চোয়াল খুলে পড়ে যাবার অবস্থা হয়। কিন্তু বাস্তবে বেড টেস্টারের চাকরিটি অতটাও সহজ নয়। বিশেষত যখন আপনাকে শো-রুমে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে ঘুমাতে হবে তখন তো একেবারেই না।
কোনোদিন ঘুমানোর পূর্বে আপনাকে ক্যাফেইন খাওয়ানো হবে, কোনোদিন বা অ্যালকোহল, তাপমাত্রা ওঠানামা করবে, থাকবে যান চলাচল ও হর্নের শব্দ। অন্ধকারে ঘুমানোর সুযোগ তো নেই বললেই চলে। অনুজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বল চোখ ধাঁধানো আলোর মাঝেই ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুমাতে হবে। তবে সবচেয়ে বিব্রতকর যা হতে পারে, তা হলো শোরুমে দিনভর আসতে থাকা ক্রেতারা। আপনি একটি বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছেন আর সে বিছানাটি ক্রমাগত নতুন নতুন মানুষ এসে দেখছে, দাম আলোচনা করছে, এরকম পরিস্থিতে ঘুম হবে? এখন নিশ্চয়ই এই চাকরিটিকে দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে?
১৫. বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যাগুলো বর্তমান সমাজে প্রতিনিয়ত প্রকট হচ্ছে। নানা কারণে মানুষ একাকিত্ব বোধ করে এবং মানসিক জটিলতায় ভোগে। এই নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি দিতে বিশ্বজুড়ে প্রচলন বাড়ছে এক নতুন পেশার, যাকে বলা হচ্ছে স্নাগলার বা আলিঙ্গনকারী।
এই স্নাগলারের কাজ হবে একাকী সময়ে আপনাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকা বা ঘুমিয়ে থাকা! বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও ইদানিং এই অদ্ভুত পেশা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। শুনতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, এই পেশা আসলে ততটা সহজ নয়। একজন অপরিচিত মানুষকে আলিঙ্গন করে বসে থাকা, কিংবা চাহিদা অনুযায়ী ঘুমিয়ে পড়া চাট্টিখানি কথা নয়। আর তাই এই পেশায় টাকার অঙ্কটাও চোখ বড় করে দেয়ার মতো। একজন পেশাদার স্নাগলার ঘন্টায় গড়ে ৭০ ডলার আয় করে। তাহলে দৈনিক ৩ ঘন্টা কাজ করলেও বছরে আয় করা যাবে ৭৬ হাজার ডলার বা ৬০ লক্ষাধিক টাকা!
১৬. ‘গার্বেজ ম্যান’ বা ময়লা পরিবহন করার কাজ মোটেও কোনো অদ্ভুত কাজ নয়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বসে এ কাজকে অদ্ভুত মনে হবে এর চোখ কপালে তোলা বেতনের জন্য। ময়লা পরিবহন করার কাজ করে একজন গার্বেজ ম্যান বছরে ৫০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ ডলার পর্যন্ত আয় করেন! হ্যাঁ, অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সবচেয়ে অবহেলিত এই চাকরিতেই উন্নত দেশে আছে অর্থের ঝনঝনানি। বিশেষত ইউরোপীয় দেশগুলোতে কিংবা আমেরিকার উন্নত শহরগুলোতে ময়লা বহনের কাজ করার মানুষ নেই বললেই চলে। ফলে, মানুষকে এই চাকরির প্রতি আকৃষ্ট করতে কোম্পানিগুলো মোটা অঙ্কের বেতন দিয়ে থাকে।