ইরান চুক্তি থেকে ট্রাম্পের প্রত্যাহার: কী হতে যাচ্ছে
সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে ইরাক ধ্বংসের পর এবার ঠিক একই রকম মিথ্যা অভিযোগ তুলে আরেকটি যুদ্ধের পাঁয়তারা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এবারের টার্গেট ইরান। ইরান ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয়টি বিশ্বশক্তির সঙ্গে চুক্তি করার পরও গোপনে পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে এটাই হলো অভিযোগ। আর এই অভিযোগের একমাত্র ভিত্তি হলো মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য।
ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক সংবাদ সম্মেলনে নিজ দেশের গোয়েন্দাদের প্রাপ্ত বলে কথিত বহু তথ্য-প্রমাণ দিয়ে জানান, ইরান এখনও পরমাণু অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। এর পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কালবিলম্ব না করে ঘোষণা করেন, ইরান যে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে তার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নেতানিয়াহুর ‘প্রমাণ’ হাজিরের এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে গত ৮ই মে মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ছয়টা মিথ্যা কথা বলেন, ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত ছয় জাতির পরমাণু সমঝোতা চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার ঘোষণা দেন। অথচ পরমাণুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা পুক্সক্ষানুপুক্সক্ষ তদন্ত ও সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে বারবার বলেছে যে, ইরান ওই চুক্তির কোনওরকম বরখেলাপ করেনি বরং পুরোপুরি মেনে চলেছে। চুক্তির শরিক যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই কথা বলেছে। এমনকি মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া একাধিক প্রতিবেদনে সেদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং পরমাণুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাও একধিকবার জানিয়েছে যে, ইরান চুক্তির কোনও শর্ত লংঘন করেনি এবং এর প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত রয়েছে।
ইরানও সব সময়ই বলে এসেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তির উদ্দেশ্যে। অস্ত্র তৈরির কোনও ইচ্ছা তাদের নেই। আর ছয় জাতির চুক্তির পর বাস্তবে সেই সক্ষমতাও ইরানের নেই। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ একটি জঘন্য ভুল। তিনি এটিকে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন।
চুক্তি থেকে বেরিয়ে না যাওয়ার জন্য ট্রাম্পকে অনুরোধ জানিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্ররা। এজন্য জার্মানির চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেল এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। কিন্তু ট্রাম্প কারও অনুরোধ-উপরোধে কান দেননি। তিনি চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার এবং ইরানের বিরুদ্ধে আবারও কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু কেন ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত?
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প তার ভোটারদের তুষ্ট করতেই এই কাজ করেছেন। নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বারবার অঙ্গীকার করেছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট হলে তিনি ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবেন। ওই চুক্তির ‘গোড়ায় গলদ’ রয়েছে বলে ট্রাম্প মনে করেন। কারণ চুক্তিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর যেসব শর্তারোপ করা হয়েছে সেগুলো একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর শিথিল করা বা অবসানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তিটি ট্রাম্পের আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি বড় ধরণের সাফল্য। ওবামার কোনও সাফল্য ট্রাম্প সহ্য করতে পারেন না। সেজন্যই তিনি এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলেন। যেভাবে তিনি ওবামার যুগান্তকারী স্বাস্থ্যনীতি ওবামাকেয়ার বাতিল করেছেন।
গত কয়েকদিনে এই ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নানামুখি বিচার-বিবেচনা সামনে এনেছেন। কেউ বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। কেউ বলছেন, ইরান এককভাবে পরমাণু কর্মসূচি নতুন করে শুরু করতে পারে। কারও বা ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখন একঘরে হয়ে পড়বে। কারণ চীন, রাশিয়া, ইউরোপ সঙ্গে না থাকলে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে বিশ্বে খবরদারি করতে পারবে না।
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে সরে আসার পর আমেরিকা এখন বিশ্বে একঘরে হওয়ার বিপদের মুখে রয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও বলেছেন, পরমাণু চুক্তি সম্পর্কে ট্রাম্পকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। মাত্র গত সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, সেদেশের ৫৬ শতাংশ মানুষ ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বহাল রাখার পক্ষে। বিপক্ষে মাত্র ২৬ শতাংশ।
ইরানে যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি গ্রহণ করেছে তার সঙ্গে এই মুহূর্তে একমত নয় তার ইউরোপীয় মিত্ররা। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে গত শুক্রবার বলেছেন, তার দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের সঙ্গে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা মেনে চলবে। এর আগে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। ফোনালাপে এ দুই নেতাও পরমাণু সমঝোতার প্রতি অনুগত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে টেলিফোন আলাপে মার্কেল বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো পরমাণু সমঝোতায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করবে এবং তিনি আশা করছেন তেহরানও তার কথা রাখবে। চীনের পররাষ্ট্র দপ্তরও একই ধরণের ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু এর ফলে কি যুক্তরাষ্ট্র তার লক্ষ্য থেকে বিরত হবে?
বিশ্লেষকরা যে যাই বলুন না কেন, আমাদের ধারণা যুক্তরাষ্ট্র তার পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে না। পেছনের কারণ হলো মধ্যপ্রাচ্যে তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ। এক্ষেত্রে তার দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র হলো ইসরাইল ও সৌদি আরব। দুটি দেশই আঞ্চলিক রাজনীতিতে ইরানের প্রভাববলয় সম্প্রসারণের ভয়ে ভীত। এই ভীতি তাদেরকে পরস্পরের কাছে নিয়ে এসেছে। গত ৭০ বছর ধরে ইহুদিবাদী যে ইসরাইল রাষ্ট্রটি সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে ‘মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া’ হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে সাম্প্রতিক সময়ে শুধু ইরান বিদ্বেষের কারণে সেই দেশটির সঙ্গে রাজনৈতিক গাটছড়া বেঁধেছে সৌদি আরব । ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের অস্তিত্ত্বের বিরুদ্ধে গিয়ে সৌদি আরব এখন অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রটির পদলেহনে আত্মনিয়োগ করেছে। তেল-আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুসলেমে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়েছে। ইসরাইলের বিমান চলাচলের জন্য সৌদী আকাশসীমা খুলে দিয়েছে, এমনকি ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত অসঙ্গত ও অন্যায্য শান্তিপ্রক্রিয়া মেনে নেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনীদের ওপর জবরদস্তি করছে। অথচ ইসলামের পবিত্র স্থানসমূহের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে পবিত্র নগরী আল-কুদস (জেরুসালেম) মুক্তির সবচেয়ে বড় সিপাহসালার হবার কথা সৌদি আরবেরই।
এরই মধ্যে ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে ইরানের বিরুদ্ধে একধরণের যুদ্ধ চালিয়ে আসছে সৌদি আরব ও ইসরাইল। সিরিয়া থেকে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগে এরই মধ্যে সিরিয়ায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। সিরিয়াও পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছে। দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে তাতে ইরান সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে। আর সেটাই চাচ্ছে ইসরাইল। একদিকে ইরানকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া এবং সেই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি জড়িয়ে ফেলাই এই মুহূর্তে ইসরাইল ও সৌদি আরবের আশু লক্ষ্য। তাহলে ইসরাইলের দুটি লাভ। ইরানকে নিঃশেষ করতে পারলে তার অস্তিত্বের ওপর হুমকি দূর হবে এবং ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে বৈরিতার অবসান হবে। কারণ ইরান নিষ্ক্রিয় হলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার উদ্ভব হবে তাতে ইসরাইলের বিরুদ্ধাচরণের মত শক্তি বা অবস্থান কোনওটাই ফিলিস্তিনীদের থাকবে না। গত ৭০ বছরের দীর্ঘ কালপরিক্রমায় অনেক আরব দেশই ইসরাইলের সঙ্গে বৈরিতার নীতি থেকে সরে এসেছে এবং ফিলিস্তিনীদের প্রতি সমর্থন তুলে নিয়েছে। কারণ তারা ইসরাইলের নামে প্রকৃতপক্ষে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না।
আরও : অভিযানের তথ্য ফাঁস : সটকে পড়ছে টার্গেট
অন্যদিকে সৌদি আরবের লক্ষ্য হলো মধ্যপ্রাচ্যে নিজের প্রভাব টিকিয়ে রাখা। সেক্ষেত্রে একমাত্র বাধা ইরান। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সাহায্য নিয়েও দেশটি ইরানকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছে। কিন্তু সৌদি রাজা-বাদশাদের মাথায় সঙ্গত কারণেই ঘিলু নামের বস্তুটা কম। সেজন্যই তারা ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্টকে ডেকে মার্কিন শান্তিপ্রক্রিয়া মেনে নিতে চাপ প্রয়োগ করে, লেবাননের প্রধানমন্ত্রীকে নিজের রাজধানীতে ডেকে এনে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য করে এবং গোটা ইসলামী বিশ্বের নেতা হওয়ার পরিবর্তে আঞ্চলিক নেতা হওয়ার মতো সংকীর্ণ চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টকে দিয়ে ইসলামের ত্রাণকর্তা হিসাবে আইএসের মত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গঠন করে। আঞ্চলিক নেতা হওয়ার লক্ষ্যেই দেশটি ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে আসার বিষয়টিকে সমর্থন দিয়েছে, যেমনটা দিয়েছে ইসরাইল। কিন্তু সৌদি আরব আরেকটি মারাত্মক কাজ করেছে। সেটি হলো মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসিকে দিয়ে ট্রাম্পের পদক্ষেপের পক্ষে বিবৃতি দেওয়ানো। ওআইসি মহাসচিব ইউসুফ বিন আহমাদ আল-আসিমে যে সৌদি আরবের নির্দেশেই এমন বিবৃতি দিয়েছেন। কারণ, সবাই জানে সৌদির অনুমোদন ছাড়া ওআইসি কোনও বিবৃতি দিতে পারে না।
এই বিবৃতি স্বাভাবিকভাবেই ইরানকে ক্ষুব্ধ করেছে। ইরান এটিকে ‘পক্ষপাতিত্বমূলক’ ও ‘অগঠনমূলক’ বলে অভিহিত করে সংগঠনটিকে সা¤্রাজ্যবাদী মার্কিন ও অবৈধ দখলদার ইসরাইলী শাসকগোষ্ঠীর অনুকূলে অবস্থান গ্রহণ থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ওআইসি মহাসচিবের বিবৃতিকে ‘দায়িত্বহীন নির্বুদ্ধিতা’ এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে ওআইসির নিরপেক্ষতার নীতির লংঘন এবং ওআইসির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন।
রাজা-বাদশাদের এই নির্বুদ্ধিতা সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে খুব শিগগিরই আরও বেশি দুর্ভোগ ও দুরবস্থার দিকে ঠেলে দেবে তাতে সন্দেহ নেই। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও সৌদি আরব মিলে ইরানকে কোণঠাঁসা করার বা ধ্বংসের চেষ্টা করছে একথা বললেই সব কথা বলা হয়ে যায় না।
ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নীতি আসলে একটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। আর সে ষড়যন্ত্র হলো ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের চিরন্তন ক্রুসেডের অংশ যা এই মুহূর্তে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ নামে। প্রথমে ইরাক ধ্বংস করা হয়েছে, এরপর সিরিয়া। এখন সামনে আছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলী স্বার্থের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে এমন কোনও ইসলামী শক্তিকে তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে দেবে না। সমগ্র বিশ্বের ক্ষেত্রেও এটাই তাদের লক্ষ্য। যেখানেই কোনও মুসলিম দেশ মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে তাকেই নির্মূল করা হবে। সেক্ষেত্রে তারা কোনও আন্তর্জাতিক রীতিনীতি, আইন-কানুন বা আচরণবিধি মানবে না। এই লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে গোটা পাশ্চাত্য। ফলে ইরানের সঙ্গে চুক্তি থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে ছোট করে দেখার উপায় নেই।
ইসলাম ও মুসলিমদের সন্ত্রাসী হিসাবে চিত্রিত করতেচধমব । ৩ বিশ্বব্যাপী একটি কার্যক্রম চলছে এবং সারা বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর নেতারা বুঝে বা না বুঝে সেই কার্যক্রমে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছেন। মোড়কটা মোক্ষম। ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’। কোনও দেশের সরকারবিরোধী কর্মকা-কেও এখন ‘সন্ত্রাস’ হিসাবে চিহ্নিত করে নির্মূল করাটা অনেক মুসলিম দেশেই খুব সহজ হয়ে উঠেছে। এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
আজকের ট্রাম্পের পদক্ষেপকে বর্তমান বিশ্ব-সভ্যতার তথা পাশ্চাত্য ও ইসলামের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে রেখেই বিবেচনা করতে হবে। সেজন্যেই ইউরোপের দেশগুলো ইরান-চুক্তি বহাল রাখার কথা বললেও তাদের কথায় কতটা ভরসা রাখা যায় সেটি প্রধান বিবেচ্য। তারা মার্কিন অবরোধের কারণে তাদের বিপুল আর্থিক ক্ষতির বিষয়টিকে বড় করে দেখছে। কিন্তু পর্দার অন্তরালে কূটনীতির যে কলকাঠি নাড়ানো হবে তাতে ইউরোপীয়রা শেষপর্যন্ত ক্রুসেডের অংশীদার হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সঙ্গে হাত মেলালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মোটেই কোনও কঠিন নয়।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন গত রবিবার বলেছেন, ইউরোপীয়রা শেষপর্যন্ত এই পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেবে বলেই তার বিশ্বাস।
ইরানের প্রেসিডেন্টও এক ধরণের সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো এখন পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখতে কি ব্যবস্থা নেয় তেহরান তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে।
সৌদী, ইসরাইলের উস্কানিতে ইরান প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বা নতুন করে পরমাণু কর্মসূচি চালু করবে এমনটা মনে হয় না।
তবে ইরানি নেতৃত্ব এবং গোটা বিশ্ববাসীর মতো আমরাও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ দেখার অপেক্ষায়।