শুক্রবার, ২৫শে মে, ২০১৮ ইং ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

বিজেপির আয় বৃদ্ধি ৮১ শতাংশ, তীব্র অর্থ সংকটে কংগ্রেস

ভারতের বিরোধী দল তীব্র অর্থসংকটে পড়েছে। দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আয় ৮১ ভাগ বৃদ্ধি পেলেও দলীয় অফিসগুলোর ভাড়া দিতে পারছে না কংগ্রেস। শিল্পপতিদের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সহায়তা পাচ্ছে না কংগ্রেস, করপোরেট আয়ের ধারে কাছেও নেই এ ঐতিহ্যবাহী দলটি। তাই গণমানুষের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। সেদিক থেকে ক্ষমতাসীন বিজেপির আয় রমরমা। তহবিলের জন্যে তেমন কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দলটিকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী বছর নির্বাচনে বিজেপিকে মোকাবেলা করার দিক থেকে আর্থিক সামর্থ্য হারাতে পারে কংগ্রেস। ব্লুমবার্গ

গত ৫ মাস ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে কংগ্রেসের অফিস ভাড়া পর্যন্ত যোগাতে পারেননি দলটির নেতারা। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার অনুমতি নেই এটুকু জানিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কংগ্রেসের অনেক নেতা দলটির অর্থনৈতিক সংকটের কথা স্বীকার করেছেন। এ সংকট কাটাতে কংগ্রেসের নেতাদের খরচ আরো কমাতে বলা হয়েছে, দান করতে বলা হয়েছে আরো বেশি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিলান বৈষ্ণব বলছেন, কংগ্রেস ও অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলো ব্যবসা বান্ধব না হওয়ায় শিল্পপতিরা বিজেপির দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তবে কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদ্বীপ সূর্যওয়ালা এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। গত অর্থবছরে বিজেপি যে আয় করেছিল, কংগ্রেস তার এক চতুর্থাংশ আয় করেছে। বিজেপির আয় ছিল ১০.৩৪ বিলিয়ন রুমি বা ১৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। একই সময়ে কংগ্রেসের আয় ছিল ২.২৫ বিলিয়ন রুপি যা তার আগের বছরের তুলনায় ১৪ ভাগ হ্রাস পায়। গত বছর কংগ্রেস নেতারা অর্থ সংকটের কারণে বিমান টিকিট সংগ্রহ করতে না পারায় পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে সময় মত নির্বাচনী সফর করতে পারেননি। ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ে নির্বাচনে এ কারণে কংগ্রেসের ভরাডুবি ঘটে। পার্টি অফিসে চা বিস্কুটের আয়োজনও কাটছাঁট করতে হচ্ছে কংগ্রেসকে।

আরও : ইফতারে সুস্বাদু বুন্দিয়া রায়তা

কংগ্রেসের তুলনায় বিজেপি দ্বিগুণ অর্থ খরচ করেছে। বিজেপি যখন করপোরেট ডোনেশন পেয়েছে ৭.০৫ বিলিয়ন রুপি, একই সময়ে বিজেপি ১৬৭টি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছে ১.৯৮ বিলিয়ন রুপি। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি সংগ্রহ করে ৫.৮৮ বিলিয়ন রুপি আর কংগ্রেস পেয়েছিল সাড়ে ৩ বিলিয়ন রুপি। নির্বাচন কমিশনে দল দুটির দেওয়া তথ্য থেকে এ হিসেবা জানা গেছে।

রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস যখন চলছে তখন শিল্পপতিরা নগদ দেওয়ার ব্যাপারে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্যে গণমানুষের চাঁদার ওপর নির্ভর হতে বলা হয়েছে। কংগ্রেস নেত্রী দিব্যা স্পন্দনা যিনি দলটির স্যোশাল মিডিয়া পরিচালনা করেন, তিনি বলেন, আমাদের অর্থ নেই , বিজেপির তুলনায় তেমন কোনো সাহায্য ইলেক্টরাল বন্ড থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। এধরনের বন্ড চালু হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোকে নগদ সহায়তার জন্যে। ফলে অনলাইনে সাহায্যের জন্যে আহবান জানাতে হচ্ছে।

একসময় যারা কংগ্রেসকে উদার হস্তে দান করতেন, তারা এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিজেপির দিকে। দলের সভাপতি অমিত শাহ এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদির নির্বাচনী জয়ের পর দাতাদের সহজেই মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছেন। মোদির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ২০১৩ সালে যেখানে কংগ্রেস ১৫টি বড় আসন দখলে রেখেছিল এখন দলটির হাতে রয়েছে মাত্র ২টি। বিজেপি সেখানে ২০টি আসনে শরীকদের সঙ্গে শাসন করছে।

দিল্লির রাজনৈতিক বিশ্লেষক অজয় বোস বলেন, বিজেপি আগামী নির্বাচনে জিতবে না এমন হাওয়া বইলে ফের তা অনুকূলে আসতে পারে কংগ্রেসের। তবে আগামী বছরের নির্বাচন হাইফাই প্রচারভিযানের দাবি রাখে, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী একটি দল সে নির্বাচনে যথেষ্ট খরচই করবে।

Print Friendly, PDF & Email