তাহলে কী ইয়াবা সম্রাট এমপি বদি পার পেয়ে যাবেন?
মাদক নির্মূলে ৪ মে থেকে সারাদেশে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে অনেক মাদক ব্যবসায়ী যেমন ধরা পড়ছেন, তেমনি অভিযানের সময় বন্দুকের গুলিতে মারা গেছেন অনেকেই। কিন্তু অনেকে লেখক, সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনেরা বলছেন- ছোট মাদক ব্যবসায়ীদের হত্যা না করে, বড় বড় যারা রাঘব বোয়ালদের আইনের আওতায় আনা দরকার।
বিশেষ করে ইয়াবা সম্রাট নামে পরিচিত ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ কক্সবাজার-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির নাম বারবার সামনে আসছে।
গত এক দশক ধরে বদিকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে সরকারী সকল সংস্থার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা। সরকারী সকল সংস্থাও গোয়েন্দা প্রতিবেদন দিয়েছে এমপি বদির বিরুদ্ধে।
২০১৪ সালে সরকারি এক তালিকায় বদির নাম উঠে আসে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের করা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ওই তালিকায় বলা হয়েছে,আব্দুর রহমান বদির ছত্রছায়ায় আরো অনেকে ইয়াবা ব্যবসা করছেন।
ইয়াবার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠার শুরু থেকে সরকার দলীয় এ সংসদ সদস্য বারবার ইয়াবার সাথে তিনি কোনভাবেই জড়িত নন বলে দাবি করেছেন। দাবি করেছেন এটি তার ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার ষড়যন্ত্র।
এদিকে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ থাকার পরও এমপি বদির বিরুদ্ধে কােন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না- এই প্রশ্নের জবাবে সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, সংসদ সদস্য বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। আমরা সেই অভিযোগগুলো সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। বদিসহ অন্য মাদক ব্যবসায়ীদের বিষয়ে আপনাদের কাছেও কোনও তথ্য থাকলে আমাদের দিন। বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তথ্য-প্রমাণ নাই।
মন্ত্রী আরো বলেছেন, আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুধুমাত্র বাহক নয় বরং প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে আমাদের মোবাইল কোর্টও চলছে সেখানে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিও হচ্ছে। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। সে এমপি হউক আর যাই হোক।
আরও : ইফতারে সুস্বাদু বুন্দিয়া রায়তা
আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, অন্তত আর যাই হোক এবারের অভিযানে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। সে সংসদ সদস্য হোক, সরকারি কর্মকর্তা হোক, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আর সাংবাদিক হোক আমরা কাউকে ছাড় দিব না।
মন্ত্রীর এই কথার পর এখনো বদির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এদিকে বদি বলছেন, অভিযোগ থাকলেও কেউ প্রমাণ করতে পারবে না যে, আমি ইয়াবা বা অন্য কোনো মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিছু মিডিয়াও ইয়াবা ব্যবসা করছে। সাংবাদিকরাও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমি যখন মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেই, তখনই মিডিয়ারা সিন্ডিকেট করে আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এ কারণে সংসদে আমি চ্যালেঞ্জ করে বক্তব্য দিয়েছি।
বদি আরো বলেন, ক্রসফায়ার আরও আগে শুরু হওয়া উচিত ছিল। মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। এ জন্য আমাদের সবারই সহযোগিতা করা প্রয়োজন। যুব সমাজকে বাঁচাতে এটা অপরিহার্য।
এ ব্যাপারে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলছেন, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে তাদের কাছে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি কোনো ইস্যু নয়, ইস্যু হলো মাদক। এই অভিযান সফল করার পথে যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
মাদকের ভয়াবহতা থেকে জাতিকে রক্ষা করতে সবার সমন্বিত প্রয়াস দরকার বলে মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে বিএনপির পক্ষে থেকে বলা হচ্ছে, সরকারদলীয় এমপি বদির মতো রাঘববোয়াল এবং পুলিশের কিছু উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা মাদক ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন। যুবসমাজকে ধ্বংস করতে পরিকল্পিতভাবে মাদকের বিস্তার ঘটানো হয়েছে। মাদকের আসল গডফাদারদের ধরা হচ্ছে না। তারা মাদক ব্যবসার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র্যাবের মহাপরিচালক ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ এনিয়ে কথা বললেও বদির বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাহলে কি মাদক ব্যবসায়ী ইয়াবা সম্রাট আব্দুর রহমান বদির পার পেয়ে যাবে?