ভিন্ন ফরম্যাটে ভিন্ন কোচের ফর্মুলা কারস্টেনের
স্পোর্টস ডেস্ক : ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটের জন্য একাধিক অধিনায়কের বহু পুরনো ফর্মুলা বেশ কিছুদিন হয় বাংলাদেশও অনুসরণ করছে। তবে প্রতিটা ফরম্যাটের জন্য আলাদা আলাদা কোচ নিয়োগের বিচিত্র ভাবনায় বাংলাদেশ যেন নতুন এক দিগন্তই খুলে দিতে চলেছে। কাল রাতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে হেড কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরামর্শক হয়ে আসা গ্যারি কারস্টেনের সঙ্গে আলোচনায় সাদা ও লাল বলের জন্য আলাদা আলাদা কোচ বেছে নেওয়ার প্রস্তাবে একমত হয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসানও।
যদিও সে ভাবনা কোনো উপলদ্ধি থেকে নয়, একরকম ‘ঠেকে’ই এভাবে ভাবতে হচ্ছে বলে কাল বিকেলে জানালেন বিসিবি সভাপতি, ‘আমরা যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা কেউ টেস্টে কোচিং করাতে রাজী নন। তবে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে পূর্নকালীন কোচ হিসেবে থাকতে রাজী। আসলে টি-টোয়েন্টি আসার পর থেকে কোচদের মানসিকতাও অনেক বদলে গেছে।’ এর আগে দুপুরে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে কারস্টেনও বললেন পোশাকভেদে আলাদা আলাদা কোচের কথা, ‘আমরা এটা নিয়ে কথা বলেছি। যদিও এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। আধুনিক ক্রিকেট যেভাবে চলছে, তাতে দলের কোনটাতে লাভ হয় সেটা ভেবে এগোতে হবে। মাথায় রাখতে হবে যে বিশ্বকাপের আর এক বছরও বাকি নেই। মূল মনোযোগটা তাই থাকতে হবে বিশ্বকাপেই। বিশ্বকাপ সামনে রেখে সেরা কোচ বেছে নেওয়াটা নিশ্চিত করতে হবে আমাদের।’
আরও : ইফতারে সুস্বাদু বুন্দিয়া রায়তা
একই সঙ্গে আবার টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিও ভুলে গেলে চলছে না। কিন্তু টেস্টের কোচ দিয়ে টি-টোয়েন্টির কাজ নাও চলতে পারে। কোচদের মানসিকতার ভিন্নতাকে এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরে নাজমুল বলছিলেন, ‘খেলাটি এখন যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে একই মানসিকতার লোক দিয়ে সবগুলো ফরম্যাটে চলতে থাকলে হবে না। এ কারণেই কারস্টেন মনে করেন, সাদা ও লাল বলের কোচ আলাদা হলে ভালো হয়।’ আলোচনায় ভিন্ন ভিন্ন কোচ নিয়োগের একটা ফরম্যাটও তাঁরা নির্ধারণ করেছেন, ‘টেস্টকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এমন হতে পারে যে একজন হেড কোচের অধীনে দুই-তিনজন উপদেষ্টা থাকতে পারেন তিনটি ফরম্যাটের জন্য। এখানে বিশেষায়িত বিষয়গুলো সামনে আনতে হবে। বিশেষজ্ঞ তিনজন ব্যাটিং কোচকে নিতে পারি কিনা, তা নিয়ে আমরা আলাপও করেছি। তিন ফরম্যাটের তিনজন হেড কোচকে সাহায্য করবেন। অবশ্য ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির বিশেষজ্ঞ ব্যাটিং কোচ একজনও হতে পারেন।’
যে কয়জনই হোন না কেন, সেটি ১৫ জুনের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে আশা করছেন নাজমুল। অর্থাৎ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগেই পুরো কোচিং প্যানেল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। বিসিবি সভাপতি জানালেন কোচ হিসেবে ভালো কিছু নাম প্রস্তাব করেছেন কারস্টেনও, ‘তাঁর কাছে কিছু দারুণ নাম আছে। ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে এমন একজনের কথা বলেছেন, যাঁর কথা আমরা ভাবিইনি।’ কারস্টেনকে ভাবতে হচ্ছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল, হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) এবং অনুর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ নিয়োগ নিয়েও। তবে আপাতত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার জাতীয় দলের জন্য কোচিং প্যানেল ঠিক করাই। কাল রাতে চলে যাওয়া কারস্টেন প্রয়োজন হলে আবার আসবেন। ১৫ জুনের আগেই সম্ভাব্য কোচদের নাম সুপারিশ করলে বিসিবি তাঁদের সাক্ষাৎকার নিয়ে সারবে বাকি আনুষ্ঠানিকতাও।
সেই নামগুলো সুপারিশ করার আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভেতরটা দেখে যেতে আসা কারস্টেন তা ভালোমতোই দেখেছেন বলেই জানালেন কাল, ‘আমি এখানে এসেছি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভেতরটা দেখতে। যা দেখে আমি ভীষণ রোমাঞ্চিতও। আমার কাজ হল এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সেরা একজন কোচ খুঁজে বের করা।’ আগেরদিন তিন ক্রিকেটারের সঙ্গে বসা এই দক্ষিণ আফ্রিকান কাল ডাকলেন দুই জুনিয়রকে। এরপর দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন ও হাবিবুল বাশারের পাশাপাশি ডেকে এনে কথা বলেছেন স্থানীয় কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গেও। এঁদের সবার সঙ্গে কথা বলে তিনি যা বুঝতে পেরেছেন, ‘আমি সবার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে চেয়েছি, আগে যাঁরা কাজ করে গিয়েছেন, তাঁদের কোন ব্যাপারটি খুব কাজে দিয়েছে। আমি জানি চন্দিকা (হাতুরাসিংহে) এখানে দারুণ কাজ করে গেছেন। আমি বুঝতে চেয়েছি তাঁর সময়ে কোন ব্যাপারটি দলের ভালো করার ক্ষেত্রে প্রভাবক ছিল। আমার মনে হয়, আমি ভেতরটা কিছুটা বুঝতে পেরেছি। সুতরাং আমার কাজ হল দ্রুত একজনকে খুঁজে দেওয়া। যিনি দ্রুত দলটিকে এগিয়ে নিতে পারবেন। কারণ কোচ ছাড়া তো অনেক দিন হয়ে গেল। আশা করছি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে তাঁকে আমরা পেয়েও যাবো।’ আলাদা আলাদা কোচের ভাবনায় একজনই নন, সঙ্গী হতে পারেন আরো তিনজন বিশেষজ্ঞও। সেক্ষেত্রে এক হালি কোচের অপেক্ষা!