আবারও বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বললো কানাডার আদালত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’কে আবারও সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আগের দেয়া এক রায় বহাল রেখেছেন কানাডার ফেডারেল কোর্ট। কানাডায় আশ্রয়প্রার্থী মো. মোস্তফা কামালের পক্ষ থেকে করা রিভিউ আবেদনের রায়ে নিজেদের পূর্বের অবস্থানে থাকার বিষয়টিই নিজেদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে আদালত। সম্প্রতি মোস্তফা কামালের রিভিউয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আবেদন খারিজ করে এ রায় দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়, তিনি বাংলাদেশে বিএনপি নামে যে রাজনৈতিক দলের সদস্য পরিচয়ে আশ্রয় চাচ্ছেন, সেই রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত।
দেশটিতে বিএনপির এক কর্মী ২০১৫ সালে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এ বিষয়ে শুনানি শেষে বিএনপিকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও সরকার উৎখাতের চেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর তার সেই আবেদন বাতিল করে দেয়া হয়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে কানাডায় আশ্রয়প্রার্থী হন মো. মোস্তফা কামাল। তার বিষয়ে কানাডার সরকার আদালতকে তখন বলেছিল, বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাতেও দলটি চেষ্টা করছে বলে যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ আছে।
কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির জননিরাপত্তা ও জরুরি তৎপরতা বিষয়কমন্ত্রী দাবি করেন, মোস্তফা কামাল যে রাজনৈতিক দলের সদস্য তারা বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ও সরকার উৎখাতের প্রচেষ্টায় লিপ্ত। কানাডিয়ান বর্ডার সিকিউরিটি এজেন্সি (সিবিএসএ)-এর তৈরি একটি প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ দাবি করেন তিনি।
কানাডা সরকারের এই বক্তব্য গ্রহণ করে আদালত মোস্তফা কামালের আবেদন খারিজ করে দিলে তিনি আবার দেশটির ফেডারেল কোর্টে রিভিউয়ের জন্য আবেদন করেন। এরপর গত ৪ মে এ আপিলের রায় ঘোষণা করেন ফেডারেল কোর্ট। তবে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় সোমবার।
কানাডার আদালত দেশটির জননিরাপত্তা ও জরুরি প্রস্তুতিবিষয়ক মন্ত্রীর সরবরাহ করা তথ্যের ভিত্তিতে ওই রায় বহাল রেখেছেন। মন্ত্রী বলেছেন, এটা বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যে আবেদনকারী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির একজন সদস্য।
আরও : ইফতারে সুস্বাদু বুন্দিয়া রায়তা
তিনি বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাত তৎপরতা অথবা উৎখাতে প্ররোচনা দেয়ার সঙ্গে জড়িত। যা কানাডার অভিবাসন ও শরণার্থী সুরক্ষা অাইনের এসসি-২০০১ এর সি-২৭ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কানাডিয়ান বর্ডার সিকিউরিটি অ্যাজেন্সির (সিবিএসএ) এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনি এ দাবি করেন।
ফেডারেল কোর্ট আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন নাকচ করে দেয়ার পর ভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন মোস্তফা কামাল। তিনি এবার বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদলের কর্মী হিসেবে আশ্রয় প্রার্থনা পাওয়ার আবেদন করেন এবং এ আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। আদালতের কাছে বিএনপির এই কর্মী বলেন, বিএনপি এবং যুবদল সম্পূর্ণ পৃথক দুটি রাজনৈতিক দল। তখন তার এই আবেদনের জন্য নতুন করে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের নির্দেশ দেন আদালত।
এ সময় কুমিল্লার বেশ কয়েকজন স্থানীয় যুবদল নেতার বক্তব্য রেকর্ড করে তা আদালতের কাছে উপস্থান করেন কামাল। ২০০৫-০৬ সালে তিনি যুবদলের কুমিল্লা জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক ছিলেন বলে দাবি করেন।
মোস্তফা কামালের এই দাবির পর আইডি তখন বাংলাদেশি এক মার্কিন অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়। তার দেয়া তথ্য আদালতের কাছে তুলে ধরে আইডি। বাংলাদেশি ওই অধ্যাপক বলেন, বিএনপি থেকে পৃথক একটি সংগঠন যুবদল। তবে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো ও নেতৃত্বের আদলে সংগঠনটির পৃথক নির্বাহী কমিটি রয়েছে। তবে দুটি সংগঠনের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে।
এবারের রায়ে কারণসহ ব্যাখ্যা দিয়ে জানানো হয়েছে, বিএনপি’কে ‘সন্ত্রাসী দল’ বলে মন্ত্রীর বক্তব্যকেই আবারও মেনে নিয়েছেন ফেডারেল কোর্ট। রিভিউয়ের পর জননিরাপত্তা ও জরুরি তৎপরতা বিষয়ক মন্ত্রীর দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কানাডার অভিবাসন ও শরণার্থী বোর্ডের অভিবাসন বিভাগ (আইডি)-কে নির্দেশ দেন ফেডারেল কোর্ট। এরপর মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিনিধি সিবিএসএ’র প্রতিবেদন রেফারেন্স হিসেবে তুলে ধরেন।
এরপর বিএনপি’র বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর যৌক্তিকতা রয়েছে উল্লেখ করে ফেডারেল কোর্ট মোস্তফা কামালের আপিল আবেদন খারিজ করেন এবং তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন।