বৈশ্বিক চাপ পাশ কাটাতে সু চির কূটকৌশল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাপ এড়াতেই মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তার আন্তরিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করছে। অতীতেও নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যু ওঠার আগে মিয়ানমার ইতিবাচক বিভিন্ন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এবার নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে কালো তালিকাভুক্ত করা সম্পর্কিত প্রতিবেদন ওঠার আগেও দেশটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। এর মাধ্যমে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানাতে চাচ্ছে যে সংকট সমাধানেই তারা কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা এমনই ধারণা করছেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গতকাল সোমবার সংঘাতকালীন যৌন সহিংসতাবিষয়ক প্রতিবেদনে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর স্বরূপ উন্মোচন করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ওই প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর যৌন সহিংসতা চালানো মিয়ানমার বাহিনীকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। শুধু ওই প্রতিবেদন নয়, চলতি সপ্তাহে লন্ডনে কমনওয়েলথ সরকারপ্রধান পর্যায়ের সম্মেলন চলাকালে এবং আগামী মাসের শুরুতে ঢাকায় ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে ধরবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনিধিদলের আসন্ন সফর এবং আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে মিয়ানমারের বিচার করার সুযোগ খতিয়ে দেখার আবেদন নিয়েও বেশ চাপে পড়েছে মিয়ানমার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক কূটনীতিক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, মিয়ানমার প্রত্যাবাসন শুরুর ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাও বলছে, রাখাইন রাজ্যে ফেরার মতো অনুকূল পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি।
ওই কূটনীতিক বলেন, নিজ দেশের শূন্যরেখা থেকে একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে ‘ফিরিয়ে নিয়ে’ ও ‘নাগরিকত্ব যাচাই কার্ড’ ধরিয়ে দিয়ে মিয়ানমার আবারও প্রমাণ করেছে যে সু চির সরকার মিথ্যাচার করছে এবং তারা যেভাবে ফেরত নিতে চায় সেভাবেই রোহিঙ্গাদের ফিরতে হবে।
সংশ্লিষ্ট ঢাকার এক কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন গত ফেব্রুয়ারি মাসেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছিলেন যে শূন্যরেখায় অবস্থানরত প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার রোহিঙ্গা এখনো মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসেনি। তাই নাগরিকত্ব প্রমাণের পরীক্ষা নেওয়া উচিত নয়। তাদের নিজ বসতভূমিতে ফিরে যেতে উৎসাহিত করাই হবে মিয়ানমারের আন্তরিকতার পরীক্ষা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার শূন্যরেখা থেকে ফিরে যাওয়া এক রোহিঙ্গা পরিবারকে নাগরিকত্ব যাচাই কার্ড দিয়ে অন্য রোহিঙ্গাদের বার্তা দিয়েছে যে তাদেরও এভাবেই ফিরতে হবে।
রোহিঙ্গাদের দেশ ছাড়া নিয়েও মিয়ানমারের মিথ্যাচার অব্যাহত : মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তর গত ১৩ এপ্রিল এক বিবৃতিতে আবারও বলেছে, মিয়ানমার কোনো রোহিঙ্গাকে দেশছাড়া করেনি। মিয়ানমারের দাবি, তারা রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে বেশ কয়েকটি সমঝোতা হয়েছে।
তবে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল নিরাপত্তা পরিষদে যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন তাতে স্পষ্টই বলা হয়েছে, মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করার কৌশল হিসেবে নারীদের ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের যৌন নির্যাতন করেছে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা নারী ও কন্যাশিশুদের বড় অংশই ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের শারীরিক ও মানসিক ক্ষত বহন করছে।
জাতিসংঘ যখন মিয়ানমার পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের জন্য অনুকূল মনে করছে না, তখন সু চির সরকারের দাবি, প্রত্যাবাসনের সব ব্যবস্থা চালু হয়েছে। প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার প্রস্তুত।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঢাকায় পশ্চিমা কূটনীতিকদের অনেকেই বলেছেন, মিয়ানমারের বক্তব্যে আস্থা রাখার সুযোগ নেই।