মাহিয়া মাহির সাত সতেরো
বিনোদন প্রতিবেদক : ভাগ্যদেবী যেন মাহির জন্য বরমালা নিয়েই অপেক্ষা করছিল। ঢালিউডে যখন একদিকে নায়িকা সংকট আর অন্যদিকে নতুন মুখ এলেও তারা ঝরা পাতার মতো শুরুতেই ঝরে পড়ছিল তখনই মাহির জয়যাত্রা। ২০১২ সালের ৫ অক্টোবর ঢালিউডে অভিষেক ঘটে তার ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবির মাধ্যমে। প্রথম ছবিতেই দর্শকের হৃদয়ে ভালোবাসার রঙ ধরিয়ে দিয়ে তির তির করে এগিয়ে চললেন এই ঊর্বশী তন্বী। অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকাই বায়স্কোপের শীর্ষ আসনে উপবিষ্ট হন মাহি নামের বসন্ত কন্যা। সর্বশেষ গত বছর দীপংকর দীপনের ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিটি দিয়েও তার বাজিমাৎ। ছবিটি সফলতা পাওয়ার পর তার ব্যস্ততাও বেড়েছে।
জাজের ছবির মাধ্যমে ঢালিউডে ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবি দিয়ে যাত্রা শুরু করা নায়িকা মাহি বলেন, চলতি বছর হবে শুধুই আমার। এ বছর আমার অভিনীত ছবির মধ্যে মুক্তি পাবে—‘অন্ধকার জগত’, ‘মনে রেখো’, ‘তুই শুধু আমার’, ‘জান্নাত’, ‘অবতার’ এবং ‘প্রেমের বাঁধন’ ‘আনন্দ অশ্রু’। ছবিগুলোতে দর্শক নানারূপে খুঁজে পাবে আমাকে। ‘মনে রেখো’, ‘তুই শুধু আমার’ আর ‘প্রেমের বাঁধন’ নাম শুনলেই বোঝা যায় এগুলো রোমান্টিক গল্পের ছবি। এসব ছবিতে পারিবারিক আবহ আর সামাজিক নানা পারিপার্শ্বিকতা যুক্ত হয়েছে রোমান্টিকতার সঙ্গে। ‘জান্নাত’ ছবিতে অনবদ্য চরিত্রে আসছি। ‘আনন্দ অশ্রু’তেও রোমান্টিকতার সঙ্গে নানা ঘটনা দুর্ঘটনা লতিয়ে উঠেছে।
‘অবতার’-এ প্রতিবাদী নারী হয়ে উঠছি। ‘অন্ধকার জগতে’ এক পুলিশ কর্মকর্তার সততা এবং সাহসিকতা মূর্ত হয়ে উঠবে। সবমিলিয়ে পুরো বছরটাতে নানা বর্ণের কাজ দিয়ে আবারও দর্শকের মনের ঘরে ভালোবাসার ঝড় তুলব। অবতারের কথা বলতে গিয়ে মাহির কথায়—“এ ছবিতে আমার চরিত্রটি প্রথম দিকে খুব শান্ত থাকলেও পরে গল্পের বাঁকে প্রতিবাদী হয়ে উঠি। ছবিতে আমার চরিত্রের নাম মুক্তি। ছবির কাহিনীতে মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্র নিয়েও মুক্তির একটা অংশ থাকবে। প্রেমের বাঁধন-এ আমার চরিত্রের নাম বাঁধন। আমার কাছে মনে হয়েছে পুরো ছবির বাঁকে বাঁকে অভিনয়ের সুযোগ আছে। মন দেবো মন নেবো ছবিটিতে পিওর রোমান্টিক চরিত্রে কাজ করছি। আর জান্নাত ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছি।
এ ছবিতে আমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন সাইমন। তার সঙ্গে এর আগে পোড়ামন ছবিতে দর্শক আমাকে উন্মুখ হয়ে দেখেছে। এবার সাইমনের সঙ্গে রোমান্টিক অ্যাকশনধর্মী জান্নাত ছবিটি নিয়েও আমি বেশ আশাবাদী।” কলকাতার অভিনেতা বনির বিপরীতে মনে রেখো ছবিটি নিয়ে অন্যরকম এক মাহি আসবেন দর্শকের মন ভোলাতে। বদিউল আলম খোকন মাহিকে নিয়ে নির্মাণ করছেন অন্ধকার জগত। এ ছবিতে তার বিপরীতে আছেন আলোচিত অভিনেতা ডি এ তায়েব। মাহি আর ডিএ তায়েবের রমরমা পর্দা রসায়ন দর্শকের মনে ভালোলাগার জোয়ার আনবে।
এখানেও মাহির নতুনত্বের ছোঁয়া খুঁজে পাবে দর্শক। কলকাতার অভিনেতা সোহমের বিপরীতে অভিনয় করছেন ‘তুই শুধু আমার’ ছবিতে। ছবিটি নিয়ে চলতি বছর আরেকটি নতুন কাহিনী আর চরিত্রের ছবি নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির হচ্ছেন মাহি। এত কিছুর পর এ বছরটা শুধুই মাহির বললে মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না। এমনটি বলছেন চলচ্চিত্র পাড়ার বাসিন্দারা। মাহি বলেন, বড় পর্দায় যাত্রার শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি সত্যিকারের অভিনয় দিয়ে দর্শকের মন ভরাতে। প্রকৃত অভিনেত্রী হয়ে উঠতে। কতটা পারছি দর্শকই তার রায় দেবে। দর্শক এরই মধ্যে ‘পোড়ামন’, ‘অগ্নি’, ‘ভালোবাসা আজকাল’, ‘দেশা : দ্য লিডার’, ‘হানিমুন’, ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’, ‘অনেক সাধের ময়না’, ‘ভালোবাসার রঙ’সহ বেশকিছু ছবিতে বলতে গেলে রংধনুর সাতরঙা চরিত্রে মাহিকে দেখে আবেগে গদ গদ হয়েছে। একেকটি ছবিতে স্বতন্ত্র মাহিকে খুঁজে পেয়ে নতুনত্বের স্বাদে অবগাহন করেছে।
এখন মাহির কাছ থেকে আরও বর্ণিল উপহার পাওয়ার জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষার প্রহর গুনছেন দর্শক। এ তো গেল মাহির রুপালি পর্দার গল্প। এবার তার ব্যক্তি জীবনের বইয়ের মলাটটা একটু উল্টিয়ে দেখা যাক। মাহির জন্ম ১৯৯৩ সালের ২৭ অক্টোবর; রাজশাহী, তানোর উপজেলাতে। মাহির পৈতৃক নিবাস বা আদি ভিটা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায়। সেখানেই তার বাপ-দাদাসহ পূর্বপুরুষের স্থায়ী বাস। তার পিতার নাম আবুবকর এবং মাতার নাম দিলারা ইয়াসমিন। সিনেমা জগতের নাম ‘মাহিয়া মাহি’ হলেও তার পারিবারিক নাম ‘শারমিন আকতার নিপা’।
শৈশব ও বাল্যজীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে নাচোল, মুণ্ডুমালা, রাজশাহী এবং ঢাকায়। ঢাকার উত্তরা হাই স্কুলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং ২০১২ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। ছাত্রী হিসেবে খুবই মেধাবী মাহি। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক দুটোতেই তার রেজাল্ট ছিল গোল্ডেন এ প্লাস। বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা তার। শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ওপর পড়াশোনা করেছেন। ২০১৬ সালে সিলেটি ছেলে পারভেজ মাহমুদ অপুকে বিয়ে
করে এখন সংসার আর কাজের ভেলায় মহা সুখের ঝরঝরে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছেন ভাগ্যদেবীর বরমালা পরা চঞ্চলা-চপলা কন্যা মাহিয়া মাহি। বিডি-প্রতিদিন