মানুষের মনের ও চিন্তার দূষণ দূর করতে হবে : প্রণব
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে সফররত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেছেন, শুধু পরিবেশ দূষণ নয়, এর চেয়ে আরও বড় দূষণ রয়েছে মানুষের মনে ও চিন্তায়। এই দূষণ দূর করতে হবে।
একমাত্র শিল্পী, লেখক, কবি, সাহিত্যিকরাই চিন্তার ও মনের সেই দূষণ দূর করতে পারেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ এই দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব স্রষ্টাদের। সাহিত্যিক, কবি, লেখকরা নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করবে।’
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমি চত্বরে নজরুল মঞ্চে আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন-১৪২৪’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে মানব সভ্যতার ইতিহাস এ কথা বলে গেছে যে হিটলার, মুসোলিনিরা নয়, সভ্যতার ইতিহাস নির্মাণ করে গেছেন প্রফেট, ক্রাইস্ট, বুদ্ধা। সভ্যতার ইতিহাসের দিক নির্মাণ করেছেন লেখক-কবি-সাহিত্যিক তথা শিল্পীরা।’
ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব বলেন, ‘একটি বড় যুদ্ধে যত মানুষ মারা যায়, গত এক দশকে তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে শুধু সন্ত্রাসবাদের কারণে।’
বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ববাংলা) মানুষ রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি নয়, যারা আন্দোলন করে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করেছেন তাদেরকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। গর্বের বিষয় একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে।’
ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রণব মুখার্জি বলেন, হাজার বছরের বাঙালি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা ও সাহিত্যকে তারা লুট হয়ে যেতে দেননি। আগ্রাসকদের হাতে ধ্বংস হয়ে যেতে দেননি। সংস্কৃতিকে তারা রক্ষা করেছেন। মাতৃভাষার অধিকারকে প্রতিষ্ঠায় বুকের রক্ত ঢেলেছে বাঙালি, তারপর অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে বাংলাকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে বাঙালিরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষা পাসের জন্য দিগ্বিজয়ী বীরদের নিয়ে পড়াশোনা করা যায়, পাসের পর তা বেমালুম ভুলে যাই। কিন্তু শিল্পীর ছবি, কবিতা বা প্রিয় উপন্যাস কখনো ভোলা যায় কি? যে গান, সানাই বা সরোদের সুর আমাদের প্রিয়, তা কখনো ভুলতে পারি আমরা?’
১৯৬৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘আমি পড়ুয়া, পড়তে ভালবাসি। তবে রাজনৈতিক জীবনে পড়তে পারিনি। তবে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে এত বই রয়েছে যে তিনবার রাষ্ট্রপতি হলেও তা পড়ে শেষ করা যাবে না।’
ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসাবে রাষ্ট্রপতি ভবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ভবনে আধুনিক ভারতবর্ষের প্রচুর কাগজপত্র, অনেক দুষ্প্রাপ্য গোপনীয় রেকর্ড, পড়বার জন্য প্রচুর উপাদান পেয়ে গেলাম। হিসাব করে দেখলাম এসব পড়তে গেলে তো এক প্রেসিডেন্সিয়াল টার্মে হবে না, তিনটা টার্ম লাগবে। তার আগেই ঈশ্বরের সমন এসে যাবে। আমি ভাবলাম, যতটা পারা যায়, আমি পড়ব।’
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম এবং সম্মেলনের আহ্বায়ক এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।